সিলেট বিভাগের মধ্যে হবিগঞ্জেই সবচেয়ে বেশি অবৈধ সংযোগ ॥ কয়েকজন বিদ্যুত কর্মীর বাসায়ও অবৈধ সংযোগ রয়েছে, তাদেরকে সতর্ক করে দিয়েছেন বিচারক
মোহাম্মদ শাহ্ আলম ॥ হবিগঞ্জ শহরের বিভিন্ন স্থানে অবৈধ বিদ্যুত সংযোগ দিয়ে গ্যারেজ পরিচালনা করে আসছে কয়েকজন অসাধু ব্যবসায়ী। আর বিষয়টি জেনেও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না বিদ্যুত বিভাগ। অভিযোগ রয়েছে- বিদ্যুত বিভাগের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করেই চলছে এসব অবৈধ গ্যারেজ।
এদিকে, গত মঙ্গলবার ও বুধবার বিভিন্ন স্থানে অবৈধ বিদ্যুত সংযোগ ও বকেয়া বিলের জন্য হবিগঞ্জ শহরে অভিযান পরিচালনা করেন সিলেট বিদ্যুত আদালতের যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ মুহাম্মদ আব্দুল হালিম। তিনি দুইদিনে হবিগঞ্জ শহর ও শহরতলীর গ্রাহকদের বিরুদ্ধে ২৪টি মামলা দায়ের ও ১৯টি স্থাপনার বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন। এর মধ্যে বুধবার মামলা দেয়া হয় ১৪টি ও বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয় ৯টির। মঙ্গলবার বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয় ১০টি ও মামলা দেয়া হয় ১৪টি। এ সময় লক্ষাধিক টাকার মালামাল জব্দ করা হয়। যার অধিকাংশই শহরতলীর বিভিন্ন গ্রামের। অথচ বিদ্যুত অফিসের কর্মকর্তারা ম্যানেজ থাকায় শহরের বড় বড় গ্যারেজ ও প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালানো হয়নি।
সূত্রের অভিযোগ- হবিগঞ্জ শহরের বিভিন্ন এলাকায় বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অবৈধ বিদ্যুত সংযোগ রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে বেশ কয়েকটি অবৈধ টমটম ইজিবাইকের গ্যারেজ। যেখানে প্রতিদিন শত শত টমটম ইজিবাইক চার্জ দেয়া হচ্ছে। এর ফলে মাসে লাখ লাখ টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। অথচ শহরের সবকয়টি অবৈধ সংযোগ ও গ্যারেজের খবর জানে বিদ্যুত বিভাগ। কিন্তু ম্যানেজ থাকার কারণে সিলেট থেকে আসা বিচারককে শহরের এসব গ্যারেজ ও অবৈধ সংযোগে না নিয়ে শহরতলীর বিভিন্ন গ্রামে অভিযান চালানো হয়।
বিদ্যুত বিভাগ সূত্রে জানা যায়, তেঘরিয়া আবাসিক এলাকায় বিদ্যুত অফিসের স্টোরকিপার আব্দুল করিমের একটি নবনির্মিত ভবনে অবৈধ সংযোগ পাওয়া যায়। ওই বাসা থেকে মোটরসহ বিভিন্ন মালামাল জব্দ করা হয়। পরে তার বিরুদ্ধে বিদ্যুত আইনে মামলা দেয়া হয়। এ সময় একই এলাকার শাহ্ সফর আলীর একটি ভবনে অবৈধ বিদ্যুত সংযোগ থাকায় তার বিরুদ্ধেও মামলা দেয়া হয়।
এছাড়া, ওই এলাকার মসকুদ আলীর বাসায় অবৈধ সংযোগ থাকায় মামলা দেয়া হয় এবং মালামাল জব্দ করা হয়। ভাঙ্গাপুল এলাকার আব্দুল মমিনের একটি বাসায় ম্যাজিস্ট্রেট যাওয়ার কথা শুনে অবৈধ সংযোগ কেটে ফেলেন। এ সময় ওই বাসার মালিকের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে মালামাল জব্দ করা হয়। একই এলাকার আব্দুল মালেকের একটি ভবনে অবৈধ সংযোগ দিয়ে পানি তুলার অপরাধে মামলা দেয়া হয় এবং মালামাল জব্দ করা। এ সময় অবৈধ বিদ্যুত সংযোগ দেয়ার অপরাধে বিদ্যুত অফিসের লাইনম্যান বহুলা গ্রামের কামাল মিয়াকে বিদ্যুত আইনে মামলা দেয়া হয়। শহরতলীর নোয়াগাঁও গ্রামের ময়না মিয়া ও সজল মিয়ার বাড়িতে অবৈধ সংযোগ দেয়ায় লাইনম্যান সিনেমাহল এলাকার বাসিন্দা আরজু মিয়াসহ বাড়ির মালিকদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়। উত্তর জালালাবাদ এলাকার খোয়াই নদীর পাড়ে অবস্থিত আব্দুল রেজাক ও মিলন মিয়ার বাড়িতে অবৈধ সংযোগ থাকায় মামলা দেয়া হয়। অভিযানে সহযোগিতা করে হবিগঞ্জ পুলিশ লাইনের একদল পুলিশ।
এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ বিদ্যুত বিতরণ বিভাগের সহকারি প্রকৌশলী তাজুল ইসলাম জানান- গত মঙ্গলবার ও গতকাল বুধবার দুইদিনে ২৪টি মামলা ও ১৯টি স্থাপনার বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। দুদিনের অভিযানে লক্ষাধিক টাকার মালামাল জব্দ এবং প্রায় ৩০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে সিলেট বিদ্যুত আদালতের বিচারক মুহাম্মদ আব্দুল হালিম দৈনিক হবিগঞ্জের মুখকে বলেন- সিলেট বিভাগের মধ্যে হবিগঞ্জেই সবচেয়ে বেশি অবৈধ সংযোগ রয়েছে। তাই এ অভিযান অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন- বিদ্যুত অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারিরা অবৈধ সংযোগ দেয়ার প্রবণতায় জড়িয়ে পড়েছেন। তাদের সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। এরপরও এমনটা করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।