বিচারকগণ আদালতে আসা সাক্ষীদের সাক্ষ্য অবশ্যই গ্রহণ করবেন ॥ সাক্ষ্য গ্রহণ না করে কোন সাক্ষীকে ফিরিয়ে দেয়া হবে না
স্টাফ রিপোর্টার ॥ হবিগঞ্জের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তানিয়া কামাল বলেছেন- আমাদের মধ্যে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি কাজ করে। তাই বিচার প্রার্থী জনগণের স্বার্থে অনেক কষ্ট করে দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি করছি। মামলা নিষ্পত্তির ফলে জনগণ ন্যায় বিচার পেয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। তিনি বলেন- মামলা নিষ্পত্তির জন্য বিচারক, পুলিশ ও আইনজীবীদেরকে আন্তরিকভাবে কাজ করতে হবে। চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারকগণ মামলা নিষ্পত্তির জন্য আন্তরিকভাবে কাজ করছেন। গতকাল সোমবার হবিগঞ্জ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের হলরুমে পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেসী কনফারেন্সে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি জানান, গত সেপ্টেম্বর মাসে ৭৬৫টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। আর পুরনো ১ হাজার ১৬৭টি মামলা নিষ্পত্তি করা হয়েছে। এ হিসেবে মামলা দায়েরের চেয়ে নিষ্পত্তির হার অনেক বেশি। অর্থাৎ সেপ্টেম্বরে মামলা দায়েরের থেকে ৪০২টির বেশি নিষ্পত্তি করা হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন মামলার ১ হাজার ৫৪ জনের সাক্ষ্য গ্রহন করা হয়েছে। চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তানিয়া কামাল বলেন, মামলার সাক্ষীরা আদালতে এসে যাতে হয়রানী না হন এবং সাক্ষীদের সাক্ষ্য যেন অবশ্যই গ্রহণ করা হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমাদের কাজ করতে হবে। মামলার বিচার কার্যক্রম দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য মেডিকেল সার্টিফিকেট ও ময়না তদন্ত রিপোর্ট যত দ্রুত সম্ভব আইন অনুযায়ী দেয়ার জন্য ডাক্তারদের প্রতি আহ্বান জানান চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট।
কনফারেন্সে বক্তৃতা করেন ও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হবিগঞ্জ সদর সার্কেল) মোঃ রবিউল ইসলাম, অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোছাঃ শাহিনুর আক্তার, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ সুলতান উদ্দিন প্রধান, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলাম, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আছমা বেগম, জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তাহ্মিনা হক, জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ নুরুল হুদা চৌধুরী, যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ ও জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার মোহাম্মদ আলী আক্কাছ, শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্তকর্তা ও ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডাঃ মুখলিছুর রহমান উজ্জল, হবিগঞ্জ জেলা সদর আধুনিক হাসপাতালের আরএমও ডাঃ শামীমা আক্তার, পিপি অ্যাডভোকেট সিরাজুল হক চৌধুরী, হবিগঞ্জ প্রেসক্লাব সভাপতি হারুনুর রশিদ চৌধুরী, হবিগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট বদরু মিয়া, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ রুহুল হাসান শরীফ, পিবিআই’র পুলিশ পরিদর্শক মোঃ মোক্তাদীর হোসেন (পিপিএম), সিআইডি পুলিশ পরিদর্শক আব্দুর রাজ্জাক, জেল সুপার মোঃ গিয়াস উদ্দিন, ডিবি ওসি মোহাম্মদ এমরান হোসেন, কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক আল-আমিন, র্যাব-৯ শ্রীমঙ্গল ক্যাম্পের উপ-সহকারি পরিচালক মোঃ মিজানুর রহমান, চুনারুঘাট থানার ওসি শেখ নাজমুল হক, বাহুবল মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ কামরুজ্জামান, লাখাই থানার ওসি মোঃ সাইদুল ইসলাম, নবীগঞ্জ থানার ওসি মোঃ আজিজুর রহমান, আজমিরীগঞ্জ থানার ওসি মোশারফ হোসেন তরফদার, বানিয়াচং থানার ওসি রঞ্জন সামন্ত, শায়েস্তাগঞ্জ থানার ওসি মোজাম্মেল হোসেন, হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি তদন্ত মোঃ জিয়াউর রহমান, মাধবপুর থানার ওসি তদন্ত গোলাম দস্তগীর, এপিপি অ্যাডভোকেট প্রসেজিৎ দে, এপিপি অ্যাডভোকেট আব্দুল মালেক, এপিপি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম, এপিপি অ্যাডভোকেট শেখ আসাদুজ্জামান, এপিপি অ্যাডভোকেট শামীম আহমেদ, এপিপি অ্যাডভোকেট শাহ হারুনুর রশীদ, এপিপি সৈয়দ আফজাল আলী, বন মামলার পরিচালক (বন আদালত) সমীরণ সরকার, হবিগঞ্জ টিভি জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এসএম সুরুজ আলী প্রমূখ।
কনফারেন্সে বিভিন্ন থানার অফিসার ইনচার্জগণ অভিযোগ করেন, হাসপাতাল থেকে মেডিকেল সার্টিফিকেট ও পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট পেতে বিলম্ব হয়। সময়মত মেডিকেল রিপোর্ট ও ময়না তদন্তের রিপোর্ট না পাওয়ার কারণে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তারা সঠিক সময়ে মামলার চার্জশীট দিতে পারছেন না। অনেক সময় আদালতের মাধ্যমে তাগিদ দিয়ে এমসি পেতে হয়। এছাড়াও ডাক্তার আঘাতের ধরণ কি এর কোন সঠিক মন্তব্য লিখেন না। এতে আমাদের চার্জশীট দিতে সমস্যা হয়। কোর্ট থেকে দেয়া তদন্ত প্রতিবেদনের আদেশ থানায় পৌঁছতে দেরী হয়। এছাড়াও আদালতে সাক্ষী আনতে কষ্ট হয়। সাক্ষী সাক্ষ্য দিতে চান না। যে কারণে মামলা নিষ্পত্তি করতে দেরী হচ্ছে। সাক্ষীদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করার জন্য কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন কয়েকজন ওসি।
ওসিদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে হবিগঞ্জ জেলা সদর আধুনিক হাসপাতালের আরএমও ডাঃ শামীমা আক্তার বলেন, মেডিকেল সার্টিফিকেট ও ময়না তদন্তের প্রতিবেদন দেয়ার জন্য আমরা দু’জন কাজ করছি। হাসপাতালে কাজ বেশি থাকার কারণে রিপোর্ট দিতে দেরী হচ্ছে। এ জন্য আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত। পরবর্তীতে মেডিকেল সার্টিফিকেট ও ময়না তদন্তের রিপোর্টগুলো যাতে দ্রুত দেয়া হয় সেদিকে আমরা কাজ করবো। হবিগঞ্জ প্রেসক্লাব সভাপতি হারুনুর রশিদ চৌধুরী বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ শেষে বিদায়ের সময়ই রোগীদেরকে মেডিকেল রিপোর্ট দিয়ে দেয়ার জন্য হাসপাতাল ব্যবস্থপনা কমিটির সভাপতি প্রতিমন্ত্রী ইতিপূর্বেই নির্দেশ দিয়েছিলেন। এরপর অনেকদিন ডাক্তাররা মেডিকেল সার্টিফিকেট দ্রুত দিয়েছেন। কিন্তু এক মাস ধরে এই সমস্যা হচ্ছে মনে হয়। তিনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে দ্রুত মেডিকেল সার্টিফিকেট ও ময়না তদন্তের রিপোর্ট প্রদানের দাবি জানান।
সভায় জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক রুহুল হাসান শরীফ বলেন, সম্প্রতি এক আসামী এজলাসে আইনজীবী সমিতির সভাপতিকে হুমকি দিয়েছে। আইনজীবীদের কোর্টে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে। সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলাম বলেন, সাক্ষীর জন্য আদালত হাহাকার করে। সাক্ষী আসলেই আমরা সাক্ষ্য গ্রহন করি। আমাদের কোন সমস্যা নেই। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হবিগঞ্জ সদর সার্কেল) রবিউল ইসলাম বলেন, মেডিকেল সার্টিফিকেট ও ময়না তদন্তের রিপোর্টের জন্য ২৬৩টি মামলা আমাদের কাছে ঝুলে রয়েছে। এসব মামলার প্রতিবেদন দিতে পারছি না। তিনি বলেন, সাক্ষীদের হাজিরের ব্যাপারে কোন ওজর-আপত্তি করা যাবে না। আদালতে যথাসময়ে সাক্ষীগণকে উপস্থিত করতে হবে। তিনি বলেন, আদালতে আসামীরা একজন আইনজীবীকে হুমকি দেবে, এটা মেনে নেয়া যায় না। আদালতে আইনজীবীকে হুমকি দেয়া মানে আদালতকে হুমকি দেয়া। বিষয়টি তাৎক্ষণিক পুলিশকে জানালে পুলিশ ব্যবস্থা নিতো। ভবিষ্যতে এ ধরণের ঘটনা ঘটলে তাৎক্ষণিক পুলিশকে জানানোর জন্য তিনি আহ্বান জানান। এছাড়াও কনফারেন্সে উপস্থিত এপিপিগণ তাদের বিভিন্ন সমস্যা কথা তুলে ধরেন।
হবিগঞ্জে পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেসী কনফারেন্সে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তানিয়া কামাল বললেন
© স্বত্ব দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ ২০১৯
ওয়েবসাইটটি তৈরী করেছে ThemesBazar.Com