
এম,এ আহমদ আজাদ, নবীগঞ্জ থেকে ॥ পরিচয় লুকিয়ে ছদ্মবেশে কালিবাবা সেজে ২০ বছর। তিনি ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের দরবেশ। সবাই তাকে কালিবাবা বলে ডাকে। প্রতিদিন ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের রুস্তমপুর টোল প্লাজায় চাঁদা তোলা তার কাজ। মানুষের সাথে কথা বলেন না। শুধু হাত পেতে টাকা নেন। কাউকে ছবি তুলতে দেন না। কেউ জোর করে ছবি তুলতে গেলে বিশ্রি ভাষায় গালি গালাজ করেন। আবার টাকা দিলে অথবা একটি টাইগার দিলে খুশি। সাপ ও কাঁচা মাছ চিবিয়ে খান। এসব দৃশ্য দেখে অনেক মানুষ তার ভক্ত হয়েছেন। বিশেষ করে মহাসড়কের উপর দিয়ে যাতায়াতকারী অনেক নারী ভক্ত তাকে নানা রকম উপটোকন দিয়ে থাকেন। এই কালিবাবা আগে ৫শ’ টাকা দিলে সবার সাথে সেলফি দিতেন, এখন আর সেলফি দেন না। তাকে নিয়ে মানুষের মাঝে নানা আলাচনা রয়েছে। আসলে কি তিনি পাগল না ছদ্মবেশি প্রতারক। তিনি সকাল ৮ টা থেকে দুপুর ১২ টা পর্যন্ত ও বিকেল ৩টা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত পর্যন্ত ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের রুস্তমপুর টোলপ্লাজায় চাঁদাবাজি করেন। বিভিন্ন ধরণের গাড়ি থামিয়ে টাকা তুলেন। আবার অনেক গাড়ি বা যাত্রীরা নিজেই স্ব-ইচ্ছায় তাকে টাকা দেন। প্রতিদিন ৩ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় হয়। তাকে এসব বিষয়ে জিজ্ঞ্যেস করলে তিনি বিশ্রি ভাষায় গালিগালাজ করে বলেন, টাকা তুললে তোর কি’। আমি টাকা তুলে খাই, তুই কেন ডিসি এসপি কিচ্ছু করতে পারবে না। তাকে টাকা না দিলে অনেক সময় গাড়িতে পাথর দিয়ে ঢিল ছুড়ার জন্য থাক করেন, তখন গাড়ি থামিয়ে চালক তাকে টাকা দেন। টোল প্লাজায় কর্মরত ইমান আলী ও আব্দুশ শহীদ বলেন, ‘এই কালিবাবা প্রতিদিন রুটিন মাফিক টাকা তুলেন। কাউকে কাছে গেলে টাকা দিতে হয় আর না হয় গালাগাল করেন। মা-বাবাকে নিয়ে বিশ্রি ভাষায় গালাগাল করে থাকেন তিনি। কাউকে ছবি তুলতে দেন না, কেউ তাকে বেশি টাকা দিলে ছবি তুলেন। তারা বলেন, আমরা শোনেছি তার বউ বাচ্চা সবই আছে, এটা তার একটা ছদ্মবেশ।
সরজমিনে খোঁজ নিতে কালিবাবার গ্রামের বাড়ি নবীগঞ্জ উপজেলার দেবপাড়া ইউনিয়নের হোসেনপুর গিয়ে তার বাড়ির সন্ধান পাওয়া যায়। গ্রামবাসী জানান, তিনি দিনের বেলা বেশির ভাগ সময় দরজা জানালা বন্ধ করে ঘরে বসে থাকেন। যখন বাহির হন তখন গায়ে কালি মেখে কালিবাবা সেজে বাহির হন। এটা হলো মানুষকে বোকা বানানোর ছদ্মবেশ।
গ্রামের আব্দুর রহিম নামে এক মুরব্বি বলেন, তার নাম আব্দুল খালিক। সে এরকম ছদ্মবেশে ২০ বছর যাবৎ চলাফেরা করছে। ছাত্র জীবনে সে মাদ্রাসায় লেখা পড়া করেছে। কিছুদিন গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীতে কাজ করেছে। এখন কালিবাবা সেজে রুজি করছে। যখন বাড়ি থেকে বের হয় তখন গায়ে কালি মেখে থাকে। তবে সে গ্রামের কারো কোন ক্ষতি করে না।
তার ঘরে গিয়ে দেখা যায়, তিনি ঘরে দরজা বন্ধ করে বসে আছেন। তার বড় মেয়ে রিমা বেগম (১৫) জানায়, ‘তার বাবা দিনের বেলা কারো সাথে কথা বলেন না। আমরা ১ ভাই ৩ বোন।’ এসময় আব্দুল খালিক ওরফে কালিবাবার স্ত্রী বেরিয়ে এসে বলেন, বাবা আমরা বেশি কথা বললে তিনি (কালিবাবা) আমাদেরকে মারপিট করবে। তিনি বলেন, ছেলে মেয়ের নাম হচ্ছে- রিমা, আলিয়া, রাইনা ও রিমন। ছোট ছেলে রিমন এর বয়স ৩ বছর হবে। এসময় হঠাৎ কালিবাবা বাহির হয়ে আসেন। তিনি আমাদেরকে মারতে তেড়ে আসেন। পরে বাড়ি থেকে বাহির হলে তিনি শান্ত হন। এসময় তিনি আমাদেরকে হাফ কিলোমিটার দূরে নিয়ে আসেন। কোন ছবি তুললে দা দিয়ে কুপিয়ে দিবেন বলে হুমকি দেন।
স্থানীয় গোপলার বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক হায়দার আলী বলেন, কালিবাবা আমাদের এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে এই ছদ্মবেশ ধরে আছেন। দিনের বেলা কালিবাবা, রাতে বাড়ি ফিরে গোসল করে তিনি ভালো মানুষ হয়ে যান। এভাবেই তিনি তার সংসার চালিয়ে যাচ্ছেন। ২০ ধরে কালিবাবা সাজলেও তার ছেলে-মেয়ে সব ১৫ বছরের মধ্যে। তিনি সংসার জীবন স্বাভাবিক ভাবে করছেন।
হোসেনপুর গ্রামের আব্দুল খালিক এখন ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের কালিবাবা বা সাধুবাবা নামে সবাই ডাকেন। তার পাশের ঘরের একজন মহিলা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, আমাদের আব্দুল খালিক একজন ভন্ড প্রতারক। সে তার স্ত্রী সন্তান নিয়ে বাড়ি ফিরে স্বাভাবিক জীবন যাপন করে। সে ছদ্মবেশি না হলে তার তিন মেয়ে এক ছেলে হলো কি করে? শেষ রাতে বাড়ি ফিরে গোসল করে ঘরে দরজা দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। আবার যখন সময় হয় তখন সে কালি মেখে বাহির হয়। কেউ ঘরে গেলে গালাগাল করে। এসব বিষয়ে কালিবাবা ওরফে আব্দুল খালিকের সাথে কথা বললে তিনি নানা রকম বিশ্রি ভাষায় গালি দিয়ে বলেন, ‘আমি কি করবো এটা আমার বিষয়, তোরাকে জিজ্ঞেস করার। শালার পুত মেরে ফেলবো। টাকা তুললে তোর কি। আমি টাকা তুলে খাই, তুই কেন ডিসি এসপি কিচ্ছু করতে পারবে না।’