নবীগঞ্জ প্রতিনিধি ॥ নবীগঞ্জের হাজ্বী আঞ্জব আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রিয়াজুল করিম জানুর বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। আওয়ামী লীগের নেতা পরিচয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ দখল করে ১৫ বছর নানা সুযোগসুবিধা ভোগ করেছেন। তিনি একই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও ইংরেজী শিক্ষকের পদে বেতন উত্তোলন করেছেন বলেও াভিযোগ রয়েছে।
বিগত সরকারের আমলে তার বিরুদ্ধে এলাকাবাসী একাধিক অভিযোগ সিলেট শিক্ষা বোর্ডের ডিজি, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে দিলেও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। সরকার পতনের পর বিদ্যালয়ের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মনসুর আহমদ আতিক সিলেট শিক্ষা বোর্ডের ডিজির কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। এ প্রেক্ষিতে জেলা শিক্ষা অফিস তদন্ত করেছে। তবে এখনও তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়নি বলে জানা গেছে।
অভিভাবক ও এলাকাবাসীর অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, মোঃ রিয়াজুল করিমের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, স্কুলের মাটি ভরাটের টাকা আত্মসাত, ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ফি আদায়, শিক্ষক-কর্মচারীদের সাথে খারাপ আচরণ, সরকারি বরাদ্দকৃত অর্থ আত্মসাতসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ বিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠাতার কাছে প্রথমে দেয়া হয়। পরে এই অভিযোগ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে দেয়া হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। বিষয়টি এলাকাবাসী বর্তমান স্কুল সভাপতিকে বারবার জানালেও তিনিও এ ব্যাপারে কোন ব্যবস্থা নেননি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক জানান, স্বেচ্ছাচারী মনোভাবের জন্য শিক্ষকগণ মনোক্ষুন্ন। সকল সুযোগ সুবিধা থেকে শিক্ষক-কর্মচারীদের বঞ্চিত রাখা হয়। অবৈধ কাজে সম্মতি না দিলে খারাপ আচরণসহ নানাভাবে হুমকি ও ভয়ভীতি দেখাতেন তিনি। এসব কারণে তাকে নিয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীসহ এলাকার শিক্ষানুরাগী, অভিভাবক ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। তদন্ত স্বাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানানো হয়েছে।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সাবেক সদস্য মিছলু মিয়া জানান- অতীতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবর অভিযোগ প্রদান করা হলেও রহস্যজনক কারণে নেওয়া হয়নি কোন ব্যবস্থা। তিনি দুটি পদে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও ইংরেজী শিক্ষকের বেতন উত্তোলন করেছেন। হাজী আঞ্জব আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের ইংরেজি শিক্ষক পদে নিয়োগ নেওয়ার পরে তিনি আওয়ামী লীগের নেতা পরিচয় দিয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের পদ দখল করেন। দীর্ঘ প্রায় ৭ বছর ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের পদ দখল করে অনৈতিক সুবিধা নিয়েছেন। তিনি ইংরেজি শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ নেন যার ইনডেক্স নং- ১০৭১৭৬৯। আবার আওয়ামী লীগের নেতা পরিচয় দিয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব নেন। ২০১৯ সালে আওয়ামী লীগের ক্ষমতা দিয়ে আবার সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ নেন।
একজন সহকারী শিক্ষক বলেন, তার দুর্নীতির বিরুদ্ধে এই প্রতিষ্ঠানের সব শিক্ষক ও কর্মচারী ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা হাজ্বী আনওয়ার আলী বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। তিনি সহকারী ইংরেজি শিক্ষক এর বেতন পান। ২০১০ থেকে ২০২৫ সালের আয়-ব্যয়ের সঠিক তদন্ত করে প্রকৃত হিসাব বের করার দাবি জানানো হয়।
একটি সূত্র জানায়, ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে সিলেট শিক্ষা বোর্ডের ডিজির কাছে অভিযোগ করা হলে ওই অভিযোগের প্রেক্ষিতে জেলা শিক্ষা অফিসে পাঠানো হয় তদন্তের জন্য। জেলা শিক্ষা অফিসার প্রতিষ্ঠানে এসে সকল কাগজপত্র দেখে বলেন, উনি অবৈধ নিয়োগ নিয়েছেন।
হাজ্বী আঞ্জব আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রিয়াজুল করিম জানুর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিগত সরকারের আমলে তিনি বিধি অনুযায়ী ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকসহ বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছেন। তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সত্য নয়। তিনি কোন অনিয়ম দুর্নীতি করেননি।
হাজ্বী আঞ্জব আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মনসুর আহমদ আতিক বলেন, আগের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আওয়ামী লীগের নেতা পরিচয় দিয়ে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতি করেছেন। তিনি দীর্ঘ ১৫ বছর প্রধান শিক্ষকের পদ দখল করেছিলেন। তার কাছে সবাই জিম্মি ছিল। আওয়ামী লীগের পতনের পর আমি তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করি, সেটি তদন্ত চলছে। তিনি একই সাথে স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও ইংরেজী শিক্ষকের পদে বেতন উত্তোলন করেছেন।
হবিগঞ্জ জেলা শিক্ষ অফিসার ফরিদা নাজমীন এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, অভিযোগের বিষয়টি তদন্তের জন্য একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছি। এখনো প্রতিবেদন পাইনি।
© স্বত্ব দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ ২০১৯
ওয়েবসাইটটি তৈরী করেছে ThemesBazar.Com