মামলার প্রধান আসামী ফরিদ লন্ডনে পলাতক, অপর আসামী মাদক স¤্রাট হামিদ গণপিটুনিতে মারা গেছে। আসামী বাদশা ও রাহুল জামিনে মুক্ত রয়েছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আজ সোমবার নবীগঞ্জের বহুল আলোচিত সাংবাদিক জুনাইদ আহমদ হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করা হবে। হবিগঞ্জের বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ এস এম নাছিম রেজা এই মামলার রায় ঘোষণা করবেন।
গত ১১ সেপ্টেম্বর মামলার দীর্ঘ যুক্তিতর্ককালে জুনাইদ আহমদের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন অতিরিক্ত পিপি অ্যাডভোকেট আব্দুল আহাদ ফারুক, অ্যাডভোকেট আকবর হোসেন জিতু, অ্যাডভোকেট আজিজুর রহমান ও অ্যাডভোকেট শাহ ফখরুজ্জামান। আসামীপক্ষে যুক্তিতর্কে অংশ নেন অ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমান, অ্যাডভোকেট আবুল ফজল ও অ্যাডভোকেট মোফাজ্জল হোসেন। পলাতক হয়ে বিদেশে চলে যাওয়া প্রধান আসামী ফরিদ মিয়ার পক্ষে স্টেট ডিফেন্স হিসাবে যুক্তিতর্ক করেন অ্যাডভোকেট জাকারিয়া। এর আগে ২০ আগস্ট যুক্তিতর্ক শুরু হয় আলোচিত এই মামলার।
প্রসঙ্গত, ২০১২ সালের ১০ জুলাই সাংবাদিক জুনাইদ আহমদ বাড়ি থেকে বের হয়ে জেলা সদর হবিগঞ্জে যান। ওই রাতেই দুর্বৃত্তরা তাকে হত্যা করে লাশের আলামত নষ্ট করার জন্য শায়েস্তাগঞ্জ রেল লাইনে ফেলে রাখে। পরদিন ১১ জুলাই সকালে সাংবাদিক জুনাইদ আহমদের মৃতদেহ প্রায় ২০ টুকরা অবস্থায় উদ্ধার করে রেলওয়ে পুলিশ। ঘটনার শুরুতেই জুনাইদ আহমেদের পরিবার এটাকে পরিকল্পিত হত্যাকান্ড বলে দাবি করে আসছিল। এক পর্যায়ে মোবাইল ফোনের কললিস্টের সূত্র ধরে জুনাইদের ভাই মোজাহিদ আহমদ বাদী হয়ে হবিগঞ্জের বিজ্ঞ আদালতে একই গ্রামের ফরিদ উদ্দিনকে প্রধান আসামী করে ৪ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করলে আদালত মামলাটি এফআইআর গণ্যে রুজু করার জন্য জিআরপি থানা পুলিশকে নির্দেশ প্রদান করেন। মামলার খবর পেয়েই প্রধান আসামী ফরিদ লন্ডনে পালিয়ে যায়। অপর আসামীরাও আত্মগোপন করে। এদিকে পুলিশের রহস্যজনক ভূমিকায় জুনাইদের পরিবার তৎকালিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দিন খান আলমগীরের কাছে উক্ত হত্যাকান্ডের বিচার ও আসামীদের গ্রেফতারের আবেদন করেন। মন্ত্রী এক মাসের মধ্যে আসামীদের গ্রেফতারে সংশ্লিষ্ট পুলিশকে নির্দেশ দিলেও কোন ফল হয়নি। এক পর্যায়ে নিহত জুনাইদের পরিবারের গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বাহুবল থেকে পুলিশ মামলার ২নং পলাতক আসামী আব্দুল হামিদকে তার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে। পরে রেলওয়ে পুলিশ শ্রীমঙ্গল জোনের তদন্ত কর্মকর্তা রিমান্ডের আবেদন করে তাকে ৩ দিনের রিমান্ডে নেয়। রিমান্ডে নিয়ে ওই কর্মকর্তা হত্যাকান্ডের কোন ক্লু উদঘাটন না করে আসামীদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলেন বলে অভিযোগ উঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে জুনাইদের পরিবার বাংলাদেশ রেলওয়ে পুলিশের ডিআইজি সোহরাব হোসেনের নিকট অভিযোগ দিলে তিনি নিহত সাংবাদিকের পরিবারকে শান্তনা দিয়ে এই হত্যাকান্ডের বিচারের আশ্বাস প্রদান করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ডিআইজি সোহরাব হোসেন শায়েস্তাগঞ্জে পৌঁছেন। তিনি এ সময় বলেন- সাংবাদিক জুনাইদ আহমদ হত্যাকান্ডের বিষয়ে কারো সাথে আপোষ হবে না। প্রয়োজনে সংঘবদ্ধভাবে পলাতক আসামীকে আটক করে পুলিশকে জানানোর জন্য সাংবাদিকসহ সুশীল সমাজের প্রতি আহ্বান জানান। এ মামলার প্রধান আসামী ফরিদ লন্ডনে পলাতক, অপর আসামী বাহুবলের মাদক স¤্রাট আব্দুল হামিদকে স্থানীয় জনতা আটক করে উত্তম মধ্যম দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে। প্রায় বছরখানেক জেল খেটে বের হলে স্থানীয় লোকজন তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে গণপিটুনি দিয়ে মেরে ফেলেন। ৩য় আসামী বাদশা ৬মাস জেল খাটার পর জামিনে মুক্তি পায়। ৪র্থ আসামী রাহুলও ৬ মাস জেল খাটার পর জামিনে মুক্ত রয়েছে।