![](https://dailyhabiganjermukh.com/wp-content/uploads/2019/09/moni.jpg)
নবীগঞ্জ প্রতিনিধি ॥ নবীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি ও সিনিয়র সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ফেসবুকে মানহানিকর মিথ্যা স্ট্যাটাস এবং বিভিন্ন ভূয়া একাউন্ট খোলে প্রতারণার অভিযোগে ফয়জুন আক্তার মনি নামের এক নারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
গতকাল রবিবার বিকেলে জে.কে উচ্চ বিদ্যালয় পয়েন্ট থেকে নবীগঞ্জ থানার একদল পুলিশ ডিজিটাল নিরাপত্তা ও তথ্য প্রযুক্তি আইনের মামলায় তাকে গ্রেফতার করে। অভিযোগ উঠেছে, ওই নারী দীর্ঘদিন যাবত নিজেকে সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার লোকজনের সাথে প্রতারণা করে আসছিল। তার টার্গেট ছিল- নারী জনপ্রতিনিধি, বিভিন্ন দপ্তরের নারী কর্মকর্তা ও স্কুল-কলেজের ছাত্রী। প্রতি রাতেই নারীদের বিভিন্ন অশালীন ম্যাসেজ দিতো। এসব ম্যাসেজের স্ক্রীনশট প্রকাশ হওয়ায় মনি নারী না পুরুষ এ নিয়েও প্রশ্ন উঠে। মনির প্রতারণার ফাঁদে পড়ে কেউ প্রতিবাদ করলেই মনি তার ফেসবুক আইডিতে বিভিন্ন রকম হুমকি ধামকিমূলক ও মানহানিকর স্ট্যাটাস পোস্ট দিয়ে অপদস্ত করতো।
অভিযোগ রয়েছে- মনি নিজেকে সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার আত্মীয় এবং সংসদ সদস্যের ভাতিজি পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করতো। কিছুদিন পূর্বে নবীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও সমকাল প্রতিনিধি এম এ আহমদ আজাদ ও সাংবাদিক এম মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে তার ফেসবুক আইডিতে একাধিক মানহানিকর স্ট্যাটাস দিলে সংবাদিক আজাদ বাদী হয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা ও তথ্য প্রযুক্তি আইনে অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ উক্ত অভিযোগের সত্যতা পেলে গতকাল রবিবার বিকেলে থানার এসআই শামসুল ইসলাম ও এসআই শমীরণ দাশের নেতৃত্বে একদল পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। এসময় তার কাছ থেকে ২টি এনআইডি কার্ড, বেশ কিছু ভূয়া আইডি কার্ড, ৩টি মোবাইল ফোন, ১০টি সিম কার্ড, একটি কলম ক্যামেরাসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করে পুলিশ।
নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন গ্রেফতারের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, মনির বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। সে অনেক সম্মানিত ব্যক্তি ও সুশীল সমাজ এবং সরকারী কর্মকর্তাদের সম্মানহানি করেছে ফেসবুকে। ওসি আরো বলেন- নবীগঞ্জে অনেক ভূয়া সাংবাদিক রয়েছে। তারা সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে নানা অপকর্ম করছে, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ফয়জুন আক্তার মনি পুরুষ সেজে নবীগঞ্জের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নাজমা বেগম ও সাবেক মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সেলিনা পারভিন এবং বিভিন্ন নারী ইউপি সদস্যসহ আরও অনেককে অশ্লীল ম্যাসেজ পাঠিয়ে যৌন হয়রানি করে আসছিল। সে নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে অনেকের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলে। পরবর্তীতে তাদেরকে যৌন হয়রানী করতো। বিশেষ করে প্রবাসীদের বিভিন্ন ম্যাসেজ দিয়ে নানান উপহার সামগ্রী হাতিয়ে নিতো। এ বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিক আজাদ কিছুদিন পূর্বে মনিকে ডেকে বিষয়গুলো সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন এবং এ ধরনের কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকার জন্য পরামর্শ দেন। এতে সে ক্ষুব্ধ হয়ে সাংবাদিক আজাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। মনি সাংবাদিক আজাদের বিরুদ্ধে তার ফেসবুক আইডিতে নানারকম মানহানিকর স্ট্যাটাস দিয়ে তার ও তার পরিবারের সম্মানহানি করে আসছিল।
মনির অপকর্মের বিষয় মানুষ জানলেও তার এসব পরিচয়ের কারণে ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস করতেন না। অবশেষে নানা অপকর্মের হোতা ও একই অঙ্গে বহুরূপী ফয়জুন আক্তার মনি পুলিশের খাচাঁয় বন্দি হওয়ায় ভূক্তভোগীদের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে। সেই সাথে তার গ্রেফতারের খবরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে অনেককেই আনন্দ উল্লাস করে পোস্ট দিতে দেখা গেছে।