সকল বাধা বিপত্তি ও আইনী লড়াই পেরিয়ে অনুষ্ঠিত হলো নির্বাচন

মঈন উদ্দিন আহমেদ ॥ হবিগঞ্জ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি (ব্যক্স) এর দ্বি-বার্ষিক নির্বাচনে টানা দ্বিতীয় বারের মতো সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন মোঃ শামছুল হুদা এবং সাধারণ সম্পাদক পদে মোঃ আলমগীরও দ্বিতীয় বারের মতো নির্বাচিত হয়েছেন।
গতকাল শনিবার ব্যক্স হবিগঞ্জের দ্বি-বার্ষিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের একটি ভবনে একটানা ভোটগ্রহণ চলে। এতে সভাপতি প্রার্থী মোঃ শামছুল হুদা ছাতা প্রতিকে ৬৯০ ভোট পান। প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী হাজী আব্দুর রহমান তালুকদার পান ১৭ ভোট। সাধারণ সম্পাদক পদে মোঃ আলমগীর মোটর সাইকেল প্রতিকে ৬৬০ ভোট পান। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি মীর একেএম জমিলুন্নবী ফয়সল পান ৩৮ ভোট। অনেক বাধাবিপত্তি ও আইনী লড়াই পেরিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনকে বেশ বেগ পেতে হয়েছে।
ব্যক্স নির্বাচনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার আলহাজ¦ মর্তুজা ইমতিয়াজ জানান, ভোটগ্রহণ অত্যন্ত সুন্দর ও সুশৃঙ্খলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। তবে এতে সকলের অংশগ্রহণ না থাকায় অন্যান্য সময়ের মতো প্রাণবন্ত হয়নি। তিনি ভবিষ্যতে আরো অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করেন। তিনি জানান, এ বছর ব্যকসের মোট ভোটার ছিল ১ হাজার ৫৪১ জন। গতকাল অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সভাপতি পদে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন ৭৩৮ জন। সভাপতি পদে ভোট বাতিল হয়েছে ৩১টি। সাধারণ সম্পাদক পদে মোট কাস্টিং ভোট ৭৩৮টি। এ পদে বাতিল ভোট ৪০টি।
ইতিপূর্বে যে ১৫ প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন তারা সকলেই শামছুল হুদা-আলমগীর প্যানেলের প্রার্থী। আর গতকাল শনিবার সভাপতি পদে মোঃ শামছুল হুদা ও সাধারণ সম্পাদক পদে মোঃ আলমগীর নির্বাচিত হওয়ায় শামছুল হুদা আলমগীর প্যানেলের ১৭ প্রার্থীই নির্বাচনে বিজয়ী হলেন।
গতকাল অনুষ্ঠিত নির্বাচনে অন্যান্য সময়ের মতো জাঁকজমকপূর্ণ পরিবেশ লক্ষ্য করা যায়নি। অন্যান্য বছর নির্বাচনের আগের রাতে ভোট কেন্দ্রের আশপাশের এলাকা প্রার্থীদের পোস্টার লিফলেটে ছেয়ে যেত। সর্বত্র আনন্দমূখর পরিবেশ বিরাজ করতো। থাকতো সাজ সাজ রব। কিন্তু এবারের নির্বাচনে প্রার্থীদের অংশগ্রহণ কম থাকায় সেই উৎসবমূখর পরিবেশ লক্ষ্য করা যায়নি।
প্রসঙ্গত, আইনী জটিলতার কারণে এ বছর প্রতীক বরাদ্দের পরও জমে উঠেনি নির্বাচন। ভোটার তালিকা গঠনতন্ত্র বহির্ভূত বা নিয়ম বহির্ভূত ভোটার বানানো হয়েছে অভিযোগ এনে প্রতিকার চেয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছিলেন ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান ও মোঃ রুহুল আমিন। অভিযোগে তারা উল্লেখ করেন ভোটার তালিকায় দেখা গেছে পৌর এলাকার মালিকানাধীন তাদের কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নেই বা কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অংশীদারও নয় কিংবা তাদের পৌরসভার কোন প্রকার ট্রেড লাইসেন্সও নেই। এছাড়া দোকানের কর্মচারিদেরকেও সদস্য করা হয়েছে। এ অভিযোগের পরও থেমে থাকেনি নির্বাচনী কার্যক্রম। মনোনয়ন দাখিল যাচাই-বাছাই ও সর্বশেষ ৯ সেপ্টেম্বর ছিল মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন। মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিনে ১৫টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী না থাকায় নির্বাচন কমিশনার প্রাথমিকভাবে ১৫ জনকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
এদিকে ১১ সেপ্টেম্বর নির্বাচনে সভাপতি প্রার্থী হাজী আব্দুর রহমান তালুকদার ভোটার তালিকা সংশোধন করে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ২১ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচন স্থগিতাদেশ চেয়ে সিনিয়র সহকারি জজ আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলার প্রেক্ষিতে বিবাদীগণের বিরুদ্ধে কেন অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশ প্রদান করা হইবে না নোটিশ প্রাপ্তির ৭ দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়। এছাড়া নির্বাচন সংক্রান্ত সকল কার্যক্রম পরবর্তী আদেশ না দেয়া পর্যন্ত স্থগিত করা হয়। পরে আদালতে উভয়পক্ষের শুনানি শেষে ১৮ সেপ্টেম্বর নির্বাচনে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়। এ প্রেক্ষিতে সভাপতি প্রার্থী হাজী আব্দুর রহমান তালুকদার ও সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী মীর একেএম জমিলুন্নবী ফয়সল ১৯ সেপ্টেম্বর জেলা জজ আদালতে আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে বিজ্ঞ জেলা জজ তাদের আপিল নামঞ্জুর করেন। এরপর ২১ সেপ্টেম্বরের নির্বাচন বর্জন করেন হাজী আব্দুর রহমান তালুকদার ও মীর একেএম জমিলুন্নবী ফয়সল। আইনী জটিলতার কারণে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীরা প্রচার-প্রচারণায় ভোটারদের কাছে যেতে পারেননি। শহরে তাদের নির্বাচনী পোস্টারও তেমন চোখে পড়েনি। তবে আইনী জটিলতার অবসান হওয়ায় বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে সভাপতি প্রার্থী মোঃ শামছুল হুদা ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী মোঃ আলমগীর ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে আপ্রাণ চেষ্টা করছেন তাদেরকে সন্তুষ্ট করতে। ভোটারদের কাছে তারা ভোট ও দোয়া চেয়েছেন। এছাড়া শহরের বিভিন্ন স্থানে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থীদের মার্কা সম্বলিত রঙিন পোস্টার লাগান তাদের কর্মী সমর্থকরা। যাতে প্রার্থীরা ভোটারদের ভোট, দোয়া-আশির্বাদ ও সহযোগিতা কামনা করেছেন। একপক্ষ অনিয়মের অভিযোগে নির্বাচন বর্জন করলেও আইনী জটিলতা অতিক্রম করে নির্বাচন করতে পারায় অপরপক্ষের প্রার্থী, কর্মী-সমর্থকদের মাঝে বিজয়ের আনন্দ লক্ষ্য করা গেছে।