পুলিশের উপর হামলা করে পালিয়ে যাওয়া মুছাকে ধরতে পুলিশের অভিযান ॥ মুছার বাড়ি থেকে দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার এবং প্রাইভেট কার ও মোটর সাইকেল জব্দ। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মুছার বোনসহ ৫ জনকে আটক করেছে পুলিশ
স্টাফ রিপোর্টার ॥ নবীগঞ্জের ত্রাস দুটি হত্যাসহ বিভিন্ন মামলার আসামী দুর্ধর্ষ শীর্ষ সন্ত্রাসী সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সোহান আহমেদ মুছাকে গ্রেফতার করতে গেলে সন্ত্রাসী মুছা বাহিনী নবীগঞ্জ থানার একদল পুলিশের উপর হামলা করে নবীগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) উত্তম কুমার দাশ (৪০) ও এসআই ফখরুজ্জামানকে কুপিয়ে ক্ষতবিক্ষত করেছে। গুরুতর আহত অবস্থায় ওসি উত্তম কুমার দাশকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। এ ঘটনায় তাৎক্ষনিক অভিযান চালিয়ে সন্ত্রাসী মুছার বোনসহ ৫ জনকে আটক করা হয়েছে। মুছাকে ধরতে রাতভর সাড়াশি অভিযান পরিচালনা করেছে পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে নবীগঞ্জ-আউশকান্দি সড়কে সালামতপুর এলাকায় ব্র্যাক অফিসের নিকটে উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি সোহান আহমেদ মুছার নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী ধারালো অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে রাস্তায় অবস্থান নেয়। এ খবর পেয়ে নবীগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) উত্তম কুমার দাসের নেতৃত্বে একদল পুলিশ মুছাকে গ্রেফতার করতে সালামতপুর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় মুছার নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী রামদাসহ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে পুলিশের উপর হামলা করে। মুছা ধারালো রামদা দিয়ে নবীগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) উত্তম কুমার দাশ (৪০) ও এসআই ফখরুজ্জামানকে (৩৫) কুপিয়ে ক্ষতবিক্ষত করে। এ ঘটনায় আরো দুই পুলিশ কনেস্টেবল আহত হয়।
পরে তাদের উদ্ধার করে নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আশংকাজনক অবস্থায় ওসি তদন্তকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন। অপর পুলিশ সদস্যদের নবীগঞ্জ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইকবাল হোসেন জানান, মুছা একজন তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী ও ইয়াবা ব্যবসায়ী। তার বিরুদ্ধে পরোয়ানা থাকায় পুলিশ তাকে গ্রেফতার করতে অভিযান চালালে সে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে দুই কর্মকর্তাকে আহত করেছে। মুছাকে ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।
প্রসঙ্গত, গত ৮ সেপ্টেম্বর হবিগঞ্জ জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় নবীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ফজলুল হক চৌধুরী সেলিম এই মুছার অপকর্মের নানা কাহিনী তুলে ধরে তাকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছিলেন। তিনি এও বলেছিলেন যে, মুছা নিজেকে আওয়ামী লীগের নেতা পরিচয় দিয়ে মানুষকে ভয়ভীতি দেখিয়ে অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে।
২০১৮ সালের ২৮ জানুয়ারি পুলিশ ও র্যাবের যৌথবাহিনী সন্ত্রাসী মুছার বাড়ি ঘিরে ফেলে। রাত প্রায় সাড়ে ১২টা থেকে পৌনে ২টা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় যৌথবাহিনী। মুছার স্বীকারোক্তিতে ৫৬৭ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়।
যেভাবে দুর্ধর্ষ হয়ে উঠে মুছা ঃ ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে ছাত্রলীগ নেতা হেভেনকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। মুছাকে ওই হত্যা মামলার আসামী করা হয়। উক্ত হত্যাকা-ের পর থেকেই বেপরোয়া হয়ে উঠে এই মুছা। এরপর থেকে সে একের পর এক সন্ত্রাসী কর্মকা-ের মাধ্যমে নবীগঞ্জ শহরসহ এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে।
অতি সম্প্রতি সে প্রকাশ্য দিনদুপুরে নবীগঞ্জ শহরের ওসমানী রোডের হীরা মিয়া গার্লস স্কুলের সামনে প্রকাশ্য অস্ত্র দেখিয়ে ৩টি দোকানে হামলা, ভাংচুর, লুটপাটসহ ৩টি মোটর সাইকেলসহ ৭ লাখ টাকা মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। এর আগে গত ১২ ডিসেম্বর বিকালে মুছা শ্রমিক নেতা হেলাল আহমদের বাড়ির সীমানায় বেড়া দিয়ে ওই পরিবারের চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে দেয়। এ বিষয়ে অভিযোগের প্রেক্ষিতে এসআই সুজিত চক্রবর্তীর নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে অভিযোগের তদন্ত করতে গিয়ে মুছা ও তার পরিবারের সদস্যদের রোষানলে পড়ে। এক পর্যায়ে মুছাকে গ্রেফতারের চেষ্টা করলেও তার হুমকিতে ফিরে আসতে বাধ্য হয় পুলিশ। মুছার সাম্প্রতিক সময়ের এসব সন্ত্রাসী কর্মকা-ে নবীগঞ্জ শহরে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। স্থানীয় লোকজন জানান, মুছা এখন শহরে এক আতঙ্কের নাম।
তার বিরুদ্ধে শুধু ছাত্রলীগ নেতা হেভেন হত্যা মামলাই নয় তার সৎ ভাই হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে ইয়াবা বিক্রি, সন্ত্রাসী কর্মকা-, রোড ডাকাতি, ইন্ডিয়ান চোরাই মোটর সাইকেল ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপকর্মে জড়িত থাকার অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। তার দাপটে কেউই প্রতিবাদ করার সাহস পায় না। অভিযোগ রয়েছে, মুছা তার চাচা নিজাম উদ্দিনের বাড়িঘর জোরপূর্বক দখল, ফিশারির মাছ লুট, কয়েক লক্ষাধিক টাকার গাছ জোরপূর্বক কেটে বিক্রি করে। এর প্রতিবাদ করায় ধারালো আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে তার চাচাদের হুমকি দেয়। প্রাণের ভয়ে তারা বাড়িঘর ছাড়া রয়েছে।