মহান আল্লাহ্ তা’আলা পবিত্র কুরআনুল কারীমের সুরাতুন নিসার ৯৩নং আয়াতে এরশাদ করেন- আর যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে কোন মুসলমানকে হত্যা করলো তার প্রতিদান চিরস্থায়ী জাহান্নাম, আল্লাহর গজব এবং অভিশাপ। আর আল্লাহ্ তাআলা তার জন্য মহাশাস্তির ব্যবস্থা রেখেছেন। এ কথা দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট যে, কারবালার প্রান্তরে অভিশপ্ত এজিদ বাহিনী ইমাম হুসাইন (রাঃ) সহ যাদের হত্যা (শহীদ) করেছিল তা ইচ্ছাকৃত ও অন্যায়ভাবে। দুধের নিষ্পাপ বাচ্চাও যাদের নিষ্ঠুরতা হতে রেহাই পায়নি। ছিহাহ ছিত্তার অন্যতম হাদীসগ্রন্থ বুখারী শরীফের সংকলক আবু আব্দিল্লাহ্ মুহাম্মদ ইসমাইল বুখারী (রহঃ) এর অন্যতম উস্তাজ আল্লামা ইমাম যুহরী (রহঃ) বলেন- ইমাম হুসাইন (রাঃ)-এর শাহাদাতের সাথে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে যারা জড়িত ছিল, তাদের কেউই রেহাই পায়নি, দুনিয়াতেই তারা ভয়ঙ্কর পরিণতি ও শাস্তিপ্রাপ্ত হয়েছে, যা পরকালের শাস্তির তুলনায় অতি নগণ্য। আসল শাস্তি হবে পরকালে।
আল্লামা ইমাম জাওযী (রহঃ) এর নাতি হতে বর্ণিত- এক বৃদ্ধ ইমাম হুসাইন (রাঃ) এর শাহাদাতে প্রত্যক্ষ মদদ দিয়েছিল। পরবর্তীতে সে অন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তার অন্ধত্বের কারণ জিজ্ঞেস করলে সে জবাবে বলে- আমি স্বপ্নে একটি ঘটনা দেখেছি, ঘটনার এক পর্যায়ে দেখলাম ইমাম হুসাইন (রাঃ) আমার চোখে রক্ত লাগিয়ে দিলেন- ঘুম থেকে উঠে দেখি আমি অন্ধ।
হযরত ইবনে জাওযী (রহঃ) বলেন যে, যে ব্যক্তি ইমাম হুসাইন (রাঃ) এর কাটা শির মোবারক তার ঘোড়ার ঘাড়ের সাথে বেঁধে লটকিয়ে নিয়েছিল তার চেহারা আলকাতরার মত কাল ও কুৎসিত হয়ে গিয়েছিল। লোকজন তাকে জিজ্ঞেস করল, তুমি আরবের সবচেয়ে সুন্দর মানুষ ছিলে, তোমার চেহারার এ অবস্থা হলো কিভাবে? জবাবে সে বলে- কারবালার ঘটনার পর আমি একদিন স্বপ্নে দেখলাম দুইজন লোক আমাকে দুই বাহুতে ধরে জ¦লন্ত আগুনে নিক্ষেপ করে। এরপর থেকে আস্তে আস্তে আমার চেহারার এই করুণ পরিণতি হয়।
ঐতিহাসিকগণ লিখেছেন, যে ব্যক্তি ইমাম হুসাইন (রাঃ) কে তীর নিক্ষেপ করেছিল এবং তৃষ্ণার্থ ইমামের হাত থেকে পানির পাত্র কেড়ে নিয়ে জমিনে ফেলে দিয়েছিল, সে ব্যক্তি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তৃষ্ণায় ছটফট করেছে, পর্যাপ্ত পানি পান করেও তার তৃষ্ণা নিভৃত হয়নি। এক পর্যায়ে মাত্রাতিরিক্ত পানি পানের ফলে পেট ফেটে তার মৃত্যু হয়।
সকল ঐতিহাসিকগণ একমত যে, কারবালার ঘটনার মূলনায়ক এজিদ কারবালার ঘটনার পর দুই অথবা তিন বছর আট মাস জীবিত ছিল। এই সময়ের একটি দিনও তার শান্তিতে কাটেনি। ইমাম হুসাইনের রক্তের ছিটে পড়ে গোটা মুসলিম বিশে^ এজিদের বিপক্ষে ক্ষোভ আর লানতের বর্ষণ হয়ে গিয়েছিল। সেই অপদস্ততার মধ্যেই তার মৃত্যু হয়। কারবালার ঘটনায় সবচেয়ে বেশি অভিশপ্ত পাপিষ্ট সীমারের মৃত্যুর পর তার লাশ কুকুরে টেনে হেচড়ে নিয়েছিল, ঠিকমত দাফনটুকুও হয়নি।