মতবিনিময় সভায় পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা

মাদকের মা-বাবা হলো সিগারেট, তাই শিক্ষার্থীদেরকে সিগারেটসহ মাদকদ্রব্য থেকে বিরত থাকতে হবে

এসএম সুরুজ আলী ॥ হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা (বিপিএম-পিপিএম-সেবা) প্রত্যেকের ছেলেমেয়েকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে হবে। ছেলেমেয়েদের সু-শিক্ষায় শিক্ষিত হিসেবে গড়ে তুললে পরিবারের সুখ-শান্তি আসবে। তিনি বৃহস্পতিবার হবিগঞ্জ সদর উপজেলার কাকিয়ারআব্দা, এড়ালিয়া ও পইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং পইল উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকা, অভিভাবক, ম্যানেজিং কমিটির নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময়, শিক্ষার্থীদের সচেতন করে তোলার জন্য আয়োজিত রচনা প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন। তিনি আরো বলেন, মাদকের মা-বাবা হলো সিগারেট। তাই শিক্ষার্থীদের সিগারেটসহ সকল প্রকার মাদক থেকে বিরত থাকতে হবে। কোন শিক্ষার্থীকে অভিভাবকরা যাতে বাল্যবিবাহ দিতে না পারেন, সেজন্য সকলকে সচেতন থাকবে হবে। বাল্যবিবাহ হলে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত অন্ধকার হয়ে যাবে। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, বিএ পাস ছাত্রীর বিয়ে হওয়ার পর যদি তার স্বামীর সাথে সম্পর্ক ভেঙ্গে যায় তখন বিএ পাস মেয়েটি বলতে পারবে, আমার কাছে বিএ পাসের সার্টিফিকেট রয়েছে। আমি কোথাও চাকুরী করবো। যোগ্যতা অনুযায়ী চাকুরী করতে পারবে মেয়েটি। পুলিশ সুপার বলেন, ইভটিজিং প্রতিরোধেও ছাত্রছাত্রীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে। হবিগঞ্জ একটি ঐতিহ্যবাহী জেলা। কিন্তু গ্রাম্য দাঙ্গার কারণে এ জেলার সুনাম বিনষ্ট হচ্ছে। ছোটখাটো বিষয় নিয়ে এ জেলার অধিবাসীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে যাচ্ছেন। এই সংঘর্ষ প্রতিরোধে শিক্ষার্থীদের ভূমিকা রাখতে হবে। বাবা, ভাইসহ পরিবারের লোকজন সংঘর্ষে জড়িত হতে চাইলে ছাত্রছাত্রীদের অভিভাবকদের বুঝিয়ে সংঘর্ষ থেকে বিরত রাখতে হবে। তিনি বলেন, উচ্চ শিক্ষা গ্রহণকারী অনেক শিক্ষার্থীকে ইসলামের অপব্যাখ্যা দিয়ে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদে জড়িত করছে। জঙ্গিবাদ থেকে শিক্ষার্থীদের সচেতন থাকতে হবে। শিক্ষার্থীদের উচ্চ পর্যায়ে যেতে হলে নিয়মিত স্কুলে যেতে হবে। স্কুল থেকে বাসা-বাড়িতে মনোযোগ সহকারে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে হবে। মা-বাবার কথা শুনতে হবে। অবসর সময়ে খেলাধুলা করতে হবে। খেলাধুলা করলে মন ভালো থাকে। তিনি বলেন, খেলাধুলা না করে আজকাল অনেক শিক্ষার্থী স্কুল থেকে এসে মোবাইল ফোনে গেমস খেলা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এ ভাবে মোবাইল দেখার কারণে শিক্ষার্থীদের চোখে সমস্যা হচ্ছে। তাই শিক্ষার্থীদের অপ্রয়োজনে মোবাইল ফোন ব্যবহার থেকেও বিরত থাকবে হবে। স্মার্টফোন শিক্ষার্থীদের জন্য ভয়ংকর। শিক্ষার্থীরা যাতে স্মার্টফোন ব্যবহার করতে না পারে সেজন্য অভিভাবকদের সচেতন থাকবে হবে।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাসুক আলী, হবিগঞ্জ টিভি জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এসএম সুরুজ আলী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোঃ ছানু মিয়া প্রমূখ।
উল্লেখ্য, হবিগঞ্জকে দাঙ্গা মুক্ত করার জন্য পুলিশ সুপার কাজ করে যাচ্ছেন। দাঙ্গার কু-ফল নিয়ে বিভিন্ন শ্লোগান লেখছেন। সেগুলো সাইনবোর্ড দিয়ে বিভিন্ন স্থানে লাগানো হয়েছে। এছাড়া তিনি জেলার বিভিন্ন স্থানে স্কুল-কলেজে গিয়ে মাদক, বাল্যবিবাহ, জঙ্গিবাদ সম্পর্কে সচেতনতামূলক সভা-সমাবেশ করছেন। শিক্ষার্থীদের এসব থেকে সতর্ক থাকার জন্য রচনা প্রতিযোগিতা দিচ্ছেন পুলিশ সুপার। রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ী ও অংশ গ্রহণকারীদের মধ্যে তাঁর ব্যক্তিগত উদ্যোগে শিক্ষা-উপকরণ বিতরণ করছেন। শিক্ষার্থীদের পুরস্কার হিসেবে যেসব খাতা প্রদান করা হচ্ছে সেগুলোর মধ্যে দাঙ্গা বিরোধী সচেতনতামূলক শ্লোগান রয়েছে। পুলিশ সুপারের এ ধরণের ব্যতিক্রমী উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছেন শিক্ষক-শিক্ষিকা, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীসহ সকল শ্রেণীর লোকজন।