অভিযোগে বলা হয়- রেলওয়ে জংশনের পরিত্যক্ত ভূমিতে পৌর মার্কেট সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেড় শতাধিক দোকানঘর নির্মাণ করে দোকানঘর বরাদ্দের নামে সিকিউরিটি-সেলামি বাবদ প্রায় ৫ কোটি টাকা ও প্রতি মাসে ভাড়া বাবদ প্রায় ৫ লাখ টাকা পৌরসভার নামে আদায় করে পৌরসভার কোষাগারে জমা না দিয়ে সমুদয় অর্থ আত্মসাৎ করেন মেয়র ছালেক মিয়া
নিজস্ব প্রতিনিধি ॥ শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার অর্জিত অর্থ আত্মসাৎ ও বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে অনিয়ম-দুর্নীতি ও অসদাচরণের কারণে মেয়র মোঃ ছালেক মিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ করেছেন পৌরসভার ৭ কাউন্সিলর। অভিযোগকারী কাউন্সিলররা হলেন- জালাল উদ্দিন মোহন, মাসুদউজ্জামান মাসুক, খায়রুল আলম, আব্দুল জলিল, শিউলী বেগম, মোঃ নওয়াব আলী, মোহাম্মদ তাহির মিয়া খান। ৯ সেপ্টেম্বর তাদের স্বাক্ষরিত অভিযোগ দুদক চেয়ারম্যান বরাবর প্রেরণ করা হয়েছে।
অভিযোগে তারা উল্লেখ করেন, আমরা নি¤œস্বাক্ষরকারীগণ শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার কাউন্সিলর। শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মোঃ ছালেক মিয়া ২০১৭-১৮ ও ২০১৮-১৯ ইং দুইটি অর্থ বছরের এডিপি বরাদ্দ ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকা একত্রিত করে বিভিন্ন প্রকল্পের টেন্ডার করেন এবং এর মধ্য হতে কিছু ভূয়া প্রকল্পের মাধ্যমে বাস্তবে কোন কাজ না করেই সমুদয় অর্থ আত্মসাৎ করেন। যাহা আইন এবং নিয়মের পরিপন্থি।
চলমান প্রজেক্ট এমজিএসপি-১, ডব্লিউ ৪ প্রকল্পের (প্রায় ৩৭ কোটি টাকার) আওতায় পরিচালিত পুরাতন প্রায় ১ হাজার ফুট ড্রেনেজের উপরি কাঠামো সাধারণ আস্তর দিয়ে দায়সারাভাবে নির্মাণ করে ঠিকাদার হতে বিপুল অংকের টাকা উৎকোচ গ্রহণ করেন। এমনকি এমজিএসপির চূড়ান্ত ডিজাইন মেয়র আর্থিক সুবিধা অর্জনের জন্য ন্যাক্কারজনক ভাবে পরিবর্তন এবং নি¤œমানের কাজ সম্পাদন করছেন। উক্ত প্রকল্পের মেইনটেনেন্স বরাদ্দের বিপুল অংকের টাকা নামমাত্র কাজ করে ও ভূয়া প্রকল্প তৈরি করে আত্মসাত করেন।
এছাড়াও শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার রোড রোলার, ড্রাম ট্রাক, গার্ভেজ ট্রাক, পানি সরবরাহ ট্রাক ট্যাঙ্ক এর নিয়মিত ভাড়া হতে অর্জিত অর্থ প্রায় কোটি টাকা পৌর কোষাগারে জমা না দিয়ে বেআইনীভাবে আত্মসাৎ করেন।
শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ছালেক মিয়া কর্তৃক টমটম (অটোবাইক) এর বার্ষিক নাম্বার প্লেইট বরাদ্দের নামে রাস্তায় চলাচলরত যেকোন টমটমকে যে কোন অজুহাতে আটক করে ৩ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করে বছরে প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা পৌরসভার একাউন্টে জমা না দিয়ে নিজে আত্মসাৎ করেন।
মেয়র মোঃ ছালেক মিয়া পৌরসভার মেয়র হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করার পর নাগরিকদের হোল্ডিং ট্যাক্স মনগড়া মতো বাড়িয়ে দেন এ ক্ষেত্রে অর্জিত টাকা পৌরসভার একাউন্টে জমা না দিয়ে অধিকাংশ টাকা নিজের মতো করে আত্মসাৎ করেন। আইন কানুনের তোয়াক্কা না করে যেনতেনভাবে নক্সা অনুমোদনের নামে বিপুল অংকের অর্জিত অর্থ পৌর কোষাগারে জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করেন।
বাংলাদেশ রেলওয়ে শায়েস্তাগঞ্জ জংশনের অধিনে অবস্থিত রেলওয়ের পরিত্যক্ত ভূমিতে (যে ভূমি নিয়ে হাইকোর্টে রিট মোকদ্দমা বহাল আছে) জোরপূর্বক শায়েস্তাগঞ্জ পৌর মার্কেট নামীয় সাইনবোর্ড লাগিয়ে প্রায় দেড় শতাধিক দোকানঘর নির্মাণ করে ইহা হতে দোকানঘর বরাদ্দের নামে সিকিউরিটি-সেলামি বাবদ প্রায় ৫ কোটি টাকা ও প্রতি মাসে ভাড়া বাবদ প্রায় ৫ লাখ টাকা পৌরসভার নামে আদায় করে পৌরসভার কোষাগারে জমা না দিয়ে সমুদয় অর্থ আত্মসাৎ করেন। ইহা সর্বজনবিদিত এবং এই সংক্রান্ত সংবাদ ইতিমধ্যে দেশের প্রতিটি ইলেক্টনিক মিডিয়া ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রচারিত হয়েছে।
মোঃ ছালেক মিয়া পৌর মেয়র হওয়ার পর হতে নিজে ধরাকে সরাজ্ঞান মনে করিয়া সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিগণের সহিত মারাত্মক অসৌজন্যমুলক আচরণ করেন। দাপ্তরিক প্রয়োজনে কোন কোন নাগরিক পৌর পরিষদে গেলে মেয়র ছালেক মিয়া মানুষের সাথে মারাত্মক খারাপ আচরণ করে থাকেন। যাহা পৌর পরিষদের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হওয়ার সামিল বটে।
শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভা কর্তৃক বিভিন্ন উন্নয়মূলক কাজে অন্যায় ভাবে হস্তক্ষেপ করার কারণে কোনো নামিদামি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভায় কাজ নিতে আগ্রহ বোধ করেন না। ফলে ছালেক মিয়া নিজের পছন্দের ঠিকাদার দিয়ে অথবা কোন কোন ক্ষেত্রে ঠিকাদারদের কাজ বেনামে ভাগিয়ে নিয়ে টেন্ডারকৃত কাজ দায়সারা ভাবে সম্পন্ন করে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেন। বিভিন্ন পুরাতন রাস্তা সংস্কারের নামে তিনি অবৈধভাবে বিপুল অংকের অর্থ আত্মসাৎ করেন। এছাড়াও অস্থায়ী ভিত্তিতে অপ্রয়োজনী ভাবে ৩৮জন জনবল নিয়োগ করে তার ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কাজে ব্যবহার করে থাকেন। ইহাতে পৌরসভা আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ও পৌর পরিষদের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে।
ইহাও ব্যক্ত থাকা আবশ্যক যে, পৈত্রিকভাবে প্রাপ্ত মাত্র ২ শতক ভূমির মালিক ছালেক মিয়া মেয়র হওয়ার পর মাত্র তিন বছরের মাথায় নামে বেনামে স্থাবর অস্থাবর প্রায় ১৫ থেকে ১৮ কোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন। যা জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে। ইহাতে পৌর পরিষদ ও পৌরসভার ভাবমূর্তি মারাত্মক ভাবে ক্ষুন্ন হওয়ার সাথে সাথে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে।
মেয়র ছালেক মিয়ার উপরোক্ত অপকর্মের প্রতিবাদ করতে গেলে কাউন্সিলদেরকে অপমান এবং কোন কোন সময় অফিস হতে অসৌজন্যমূলক আচরণের মাধ্যমে বের করে দেন।
শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার রাজস্ব তহবিল থেকে মেয়র ছালেক মিয়া বিভিন্ন অজুহাতে প্রতি মাসে বিপুল অংকের টাকা আত্মসাত করে থাকেন। এ বিষয়ে আমরা কাউন্সিলরগণ প্রতিবাদ করতে গেলে তিনি কঠোর কণ্ঠে বলেন- পৌরসভার মালিক আমি, যা ইচ্ছে তাই করব। ইচ্ছে হলে অফিসে আসো নতুবা পদত্যাগ কর।
উপরোক্ত বিষয়ের আলোকে শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মোঃ ছালেক মিয়ার বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতি, অর্থ আত্মসাৎ ও অসাদাচরণের অভিযোগে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে কাউন্সিলরগণ দুদক চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করেন।
অভিযোগের অনুলিপি সদয় অবগতি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রণের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রী, এমপি মোঃ আবু জাহির, এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী, সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার, হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও এমজিএসপি’র প্রকল্প পরিচালককে প্রদান করা হয়েছে।