স্টাফ রিপোর্টার ॥ হবিগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোঃ আব্দুল মজিদ খান বলেছেন ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক ও বেদনার দিন। এই দিনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করেছে ঘাতকরা। তারা হত্যা করে নারী-শিশুসহ তাঁর পরিবারের অধিকাংশ সদস্যকে। আমাদের ইতিহাসে এ রকম নৃশংসতার নজির নেই। সে সময়ে বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা (বর্তমান প্রধানমন্ত্রী) ও শেখ রেহানা দেশের বাইরে ছিলেন বলে বেঁচে যান। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট যাঁরা জীবন দিয়েছেন, তাঁদের সবার প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধা।
২৪ আগস্ট শনিবার বিকালে আজমিরীগঞ্জ উপজেলার শিবপাশা উচ্চ বিদ্যালয়ে শিবপাশা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের উদ্যোগে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি আরো বলেন- কেন ঘাতকেরা সেদিন বঙ্গবন্ধুকেই আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু করেছিল? এটি নিছক ব্যক্তি বিশেষের হত্যাকান্ড ছিল না। ছিল জাতির অস্তিত্বের ওপর আঘাত। এর মাধ্যমে যে নীতি ও আদর্শের ভিত্তিতে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, সেই নীতি ও আদর্শকেই ঘাতকেরা হত্যা করতে চেয়েছিল। তারা প্রথম সুযোগে রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতি বিসর্জন দেয়, বাংলাদেশ বেতারের নাম পরিবর্তন করে পাকিস্তানি ধারায় এর নামকরণ করে রেডিও বাংলাদেশ। সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা মুছে ফেলে। ১৫ আগস্টের ঘাতকরা বেশি দিন ক্ষমতায় থাকতে না পারলেও তারা রাষ্ট্র ব্যবস্থায় যে ক্ষত তৈরি করেছিল, তার রেশ এখনো রয়ে গেছে।
১৫ আগস্টের পর ঘাতকেরা জেলখানায় বঙ্গবন্ধুর চার সহযোগী সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এ এইচ এম কামারুজ্জামান ও এম মনসুর আলীকে হত্যা করে। ক্ষমতা জবর দখলকারী খন্দকার মোশতাক আহমদ ইনডেমনিটি জারি করে ১৫ আগস্টের হত্যাকান্ডের বিচারের পথ রুদ্ধ করে দিয়েছিলেন। পরবর্তীকালে জিয়াউর রহমান সেই অধ্যাদেশকেই পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে আইনে পরিণত করেন, যা বাতিল করতে জাতিকে ২১ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে।
নানা বাধা-বিপত্তি কাটিয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার প্রথম বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের উদ্যোগ নিলেও এক মেয়াদে তা শেষ করা সম্ভব হয়নি। দ্বিতীয় মেয়াদে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারকাজ সম্পন্ন এবং পাঁচ ঘাতকের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করেছে। এটি যেমন স্বস্তিদায়ক, তেমনি বিদেশে পলাতক ছয় খুনির মৃত্যুদন্ড কার্যকর করতে না পারা দুর্ভাগ্যজনক। এ ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রাখার কথা বলা হলেও কার্যত তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। মৃত্যুদন্ডের বিধান নেই, এই অজুহাত তুলে কানাডা সরকার বঙ্গবন্ধু হত্যার অন্যতম দন্ডিত আসামি নূর চৌধুরীকে ফেরত না পাঠানোর যুক্তি দেখাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে পলাতক রাশেদ চৌধুরীর বেলায় সেই বাধ্যবাধকতা না থাকলেও মার্কিন সরকার এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের আহ্বানে সাড়া দেয়নি। যদিও সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র অপরাধীদের স্বর্গভূমি নয়।
যুক্তরাষ্ট্র যদি অপরাধীদের স্বর্গভূমিই না হবে, তাহলে এ রকম একজন আত্মস্বীকৃত ও দন্ডিত অপরাধী কেন সেখানে আশ্রয় পেয়ে নিরাপদে থাকবে? ওই দুই ব্যক্তি কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের আগে অপরাধ সংঘটিত করেছেন। অতএব, তাঁদের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দেশের আইন প্রযোজ্য হতে পারে না। নূর চৌধুরী, রাশেদ চৌধুরীসহ বিদেশে আশ্রিত সব খুনিকে ফেরত আনার ক্ষেত্রে তাই কূটনৈতিক উদ্যোগ ও সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে জোরালো দেনদরবার অব্যাহতভাবে চালিয়ে যেতে হবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৩তম মৃত্যুবার্ষিকীতে আমাদের আত্মজিজ্ঞাসা প্রয়োজন, তিনি যে সোনার বাংলা ও দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর স্বপ্ন দেখেছিলেন, সেই স্বপ্ন আমরা কতটা পূরণ করতে পেরেছি? তাঁর স্বপ্ন ছিল শোষণমুক্ত, গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা। কিন্তু আজকের বাংলাদেশ সেই চেতনা ও মূল্যবোধ থেকে অনেক দূরে। শুধু আনুষ্ঠানিকতার বৃত্তে বন্দী না থকে চিন্তা, মনন ও কর্মে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ ও তা বাস্তবায়ন করতে পারলেই তাঁর আরাধ্য সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা সম্ভব। তাঁর স্বপ্নের গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক, সমতাভিত্তিক সুখী ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়াই হোক জাতীয় শোক দিবসের অঙ্গীকার।
শিবপাশা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ছোরাব আলী চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ কে এম আজাদ চৌধুরী ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শরীফ উদ্দিনের পরিচালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন আজমিরীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মর্তুজা হাসান, জেলা পরিষদের সদস্য নজমুল হাসান, আজমিরীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মিছবাহ উদ্দিন ভূঁইয়া, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সম্পাদক মনোয়ার আলী, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান তকছির মিয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক জামান আলী, আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোঃ জিল্লুর রহমান চৌধুরী, উপজেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি জাহিদ হাসান জীবন প্রমূখ।
সভা শুরুর পূর্বে কাঙ্গালি ভোজের আয়োজন করা হয় এবং শেষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ সকল শহীদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনায় মিলিত মাহফিল ও বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজমিরীগঞ্জের শিবপাশায় শোকসভায় এমপি মজিদ খান
© স্বত্ব দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ ২০১৯
ওয়েবসাইটটি তৈরী করেছে ThemesBazar.Com