কৃষকদের কাছ থেকে ধান-চাউল ক্রয় না করে প্রভাবশালী মিল মালিকদের কাছ থেকে ক্রয় করছেন কর্তৃপক্ষ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ হবিগঞ্জে সরকারের খাদ্যশস্য সংগ্রহের আওতায় ধান-চাল সংগ্রহে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। কৃষকদের কাছ থেকে ধান-চাউল ক্রয় না করে প্রভাবশালী মিল মালিকদের কাছ থেকে ক্রয় করছেন কর্তৃপক্ষ। একই সাথে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে সরকারি খাদ্য গোদামের কর্মকর্তারা তাদের পছন্দের মিল মালিকদের কাছ থেকে প্রাপ্ত বরাদ্দের চেয়ে অতিরিক্ত চাল সরবরাহ করার ঘটনা নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। সম্প্রতি এক ব্যবসায়ী এর প্রতিকার চেয়ে সিলেটের আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেছেন। অপরদিকে কৃষকরা ধানের ন্যায্যমূল্য না পেয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। কৃষকরা ধানের ন্যায্যমূল্য পাওয়ার জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন।
সূত্র জানায়, খাদ্যশস্য কর্মসূচির আওতায় হবিগঞ্জ জেলায় ৮ হাজার ৬৬৭ টন সিদ্ধ চাল সরকারিভাবে সংগ্রহ করার কথা ছিল। শুরুর দিকে হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক মাহমুদুল কবীর মুরাদ সরকারের কর্মসূচি সফল করার জন্য ও কৃষকরা যাতে ন্যায্যমূল্য পায় সে লক্ষ্যে তিনি কৃষকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ধান ক্রয় করে কৃষকদেরকে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। জেলা প্রশাসকের কয়েকদিনের অভিযান শেষ হওয়ার পরই চাল সংগ্রহে শুরু হয় ব্যাপক অনিয়ম। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী প্রতি কেজি চাউলের সংগ্রহ মূল্য ৩৬ টাকা আর খোলাবাজারে প্রতি কেজি চাউলের দাম ২৫/২৬ টাকা হওয়ায় অতিরিক্ত মুনাফা লাভের জন্য সরকারি খাদ্য কর্মকর্তাদের উৎকোচের মাধ্যমে ম্যানেজ করে অসাধু মিল মালিকরা এ সুযোগ নেন। পরবর্তীতে কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান-চাল সংগ্রহ না করে মিল মালিকদের কাছ থেকে চাল সংগ্রহ করেন খাদ্য কর্মকর্তারা।
গত ২০ আগস্ট অভ্যন্তরীণ খাদ্যশস্য সংগ্রহ ২০১৯ কর্মসূচির আওতায় চাল বিভাজনে অনিয়মের অভিযোগ এনে সিলেটের আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকের বরাবরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন হবিগঞ্জ-নবীগঞ্জ রোডস্থ এসএন অটো রাইছ মিলের স্বত্ত্বাধিকারী বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদ শংকর পাল। অভিযোগের অনুলিপি সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে প্রেরণ করেন তিনি। লিখিত অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন প্রায় দেড় যুগের বেশি সময় ধরে সরকারি খাদ্য গুদামের চাল সরবরাহ কার্যক্রমের সাথে তাঁর প্রতিষ্ঠান সুনামের সাথে সম্পৃক্ত রয়েছে। চলতি মৌসুমে তার অনুকূলে বরাদ্দকৃত ৪৬৬ মেট্রিক টন চাল যথাসময়ে সরবরাহ করেন। তিনি বলেন, অভ্যন্তরীণ খাদ্য সংগ্রহ নীতিমালায় উল্লেখ রয়েছে, মিল মালিকদের স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয় করতে হবে। পরবর্তীতে সেই ধানগুলো থেকে নিজ মিলে চাল উৎপাদন করে সরকারি খাদ্য গুদামে সরবরাহ করতে হবে। কোন মিল চুক্তিকৃত চাল পরিশোধ করে আরো চাল সরবরাহ করতে আগ্রহী হলে একই চুক্তির আওতায় চাল সরবরাহ করতে পারবে। যা নীতিমালা ১৭ এর ছ ধারাতে উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু তাঁর মিলের সক্ষমতা সম্পন্ন হবিগঞ্জের মেসার্স জনতা ড্রাইয়ার অটোমেটিক রাইছ মিলের অনুকুলে পাক্ষিক ক্ষমতার ৪৬৬ মেট্রিক টনের স্থলে ১ হাজার ৪২৯ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ করা হয়েছে। সেই স্থলে উক্ত মিলটির মালিক উক্ত নামে পূর্বে বরাদ্দকৃত চালই সরবরাহ করেননি। কিন্তু উক্ত নামে অতিরিক্ত চাল বরাদ্দ প্রদান করে নীতিমালা লঙ্ঘন করা হয়েছে বলে তিনি অভিযোগে উল্লেখ করেন। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, তাঁর মিলটি চালু করতে ১৭০ কিলোওয়াট বিদ্যুত প্রয়োজন হয় এবং তাঁর মিলে ৪৬৬ মেট্রিক টন চাল উৎপাদন করতে ৫ লাখ ৪৬ হাজার ৭৬৭ টাকা বিদ্যুত বিল বাবদ ব্যয় হয়েছে। পক্ষান্তরে জনতা ড্রাইয়ার অটোমেটিক রাইছ মিলে ১ লাখ ১৯ হাজার ৯৯৮ টাকা বিলে কিভাবে ১ হাজার ৪২৯ মেট্রিক টন চাল উৎপাদন সম্ভব এ বিষয় নিয়ে তিনি সন্দেহ পোষণ করেন। তিনি বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানান। এতে মিল মালিক ও কৃষকরা উপকৃত হবেন বলে মনে করেন শংকর পাল।
অপর একটি সূত্র জানায়, হবিগঞ্জ জেলার আজমিরীগঞ্জ উপজেলায় কোন মিল নেই। নিয়ম অনুযায়ী যে উপজেলায় মিল নেই, সেই উপজেলার বরাদ্দকৃত চাল পাশ^বর্তী উপজেলার মিল মালিকদের দেয়ার কথা। কিন্তু আজমিরীগঞ্জ উপজেলার বরাদ্দকৃত চাল সরবরাহে অনিয়ম করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
অপরদিকে বিগত বোরো মৌসুমে হবিগঞ্জের হাওর অঞ্চলে ধানের ব্যাপক উৎপাদন হলেও কৃষকরা ধানের কোন ন্যায্যমূল্য পাননি। কৃষকরা ধানের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বর্তমান বাজারে মোটা প্রতিমণ ধানের মূল্য ৫২০/৫৩০ টাকা। আর চিকন ধানের মূল্য এর চেয়ে সামান্য বেশি। এ অবস্থায় কৃষকদের জমির হাল চাষ, রোপনসহ সকল উৎপাদন খরচ যোগ করলে জমি চাষ করে কৃষক অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। কৃষকরাও ধানের ন্যায্য মূল্য পাওয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন।