দুই দেশের ৫০টি করে ১শ’ দোকান থাকবে ॥ প্রতিদিন ক্রেতা থাকবেন এক হাজার

আবুল কালাম আজাদ, চুনারুঘাট থেকে ॥ হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার গুইবিল সীমান্তে বর্ডার হাট অনুমোদন পেয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় উক্ত সীমান্তে হাট বসানোর নীতিগত সিদ্ধান্ত দিয়েছে। এর আগে উপজেলা প্রশাসন সীমান্তে হাটের স্থান পরিদর্শন শেষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠিয়েছিল। বর্ডার হাট অনুমোদন হওয়ায় চুনারুঘাটবাসী আনন্দিত। তাদের বহুদিনের স্বপ্ন দু’দেশের মানুষ একত্রে আবারও কেনাকাটা করতে পারবে।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে সীমান্তের কোন স্থানে বর্ডার হাট বসানো যায় এ বিষয়ে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য জেলা প্রশাসনের কাছে একটি পত্র আসে। জেলা প্রশাসকের পত্রের আলোকে চুনারুঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মঈন উদ্দিন ইকবাল সরজমিনে কয়েকটি সীমান্ত পরিদর্শন করেন। এসময় গুইবিল সীমান্তের ১৯৭০ পিলার সংলগ্ন নো ম্যান্স ল্যান্ডের ১.৮ একর জমি বর্ডার হাটের জন্য উপযুক্ত বলে উপজেলা প্রশাসন নির্ধারণ করেন। স্থানীয়রা জানিয়েছেন ঐ সীমান্তের ত্রিপুরা বেলছড়া আর বাংলাদেশের গুইবিল সীমান্তে ব্রিটিশ আমলেও একবার হাট ছিল।
হাট বসবে সপ্তাহে ৩ দিন। প্রতি হাটে বাংলাদেশের ৫শ’ এবং ভারতের ৫শ’ করে এক হাজার ক্রেতা থাকবে। দুই দেশ মিলে তৈরী করবে ৫০টি করে ১শ’টি দোকান। এসব দোকানে ক্রেতা-বিক্রেতার জন্য রুপি এবং টাকা বিনিময়ের জন্য থাকবে মানি এক্সচেঞ্জ। থাকবে দুদেশের নিরাপত্তা। হাটে প্রবেশ করতে লাগবে টিকেট। যা উপজেলা প্রশাসন থেকে নিতে হবে। গতকাল সকালে সীমান্তের ১৯৭০ নং মেইন পিলারের নিকট গিয়ে দেখা যায়, নো ম্যান্স ল্যান্ডের মধ্যে যে হাটের জমি নির্ধারণ করা হয়েছে তা অত্যন্ত সুন্দর এবং পরিপাটি। হাটে যেতে নালুয়া চা বাগান থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার রাস্তা পাকাকরণ প্রয়োজন হবে। চা বাগান ঘেরা অত্যন্ত মনোরম পরিবেশে এ হাট চালু হলে দুদেশের সম্পর্ক বাড়ার পাশাপাশি চোরাচালান কমে আসবে বলে মনে করছেন সবাই।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মঈন উদ্দিন ইকবাল জানান, বর্ডার হাটের জন্য গুইবিল সীমান্তের ১৯৭০ মেইন পিলার সংলগ্ন স্থানে ১.৮ একর জমি নির্ধারণ হয়। আমরা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে উক্ত সীমান্তে হাট বসানোর বিষয়ে একটি প্রস্তাবনা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিলাম। মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে সার্ভেটিম পাঠিয়ে সার্ভে করে উভয় দেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন কর্তৃপক্ষ একমত হওয়ায় দুদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের সর্বশেষ সভায় বিষয়টি অনুমোদন পায়। আমরা যত দ্রুত সম্ভব হাটের কাজ শুরু করব।
তিনি বলেন, বর্ডার হাট হলে সীমান্তে চোরাচালান কমে আসবে। স্থানীয়রা নানা পণ্য হাট থেকে কিনতে পারবেন। এতে দু’দেশের মধ্যে ভ্রাতৃত্বও বাড়বে। এছাড়া পর্যটনের ক্ষেত্রও প্রসারতা লাভ করবে।
এ বিষয়ে আহমদাবাদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবেদ হাসনাত সনজু চৌধুরী বলেন, আমার ইউনিয়নের গুইবিল সীমান্তে বৃটিশ আমলেও একবার হাট ছিল। বর্তমানে হাট অনুমোদন হওয়ায় আমার ইউনিয়নের ব্যবসায়ীরা খুশি। তারা ব্যবসা বাণিজ্য করতে পারবে। পাশাপাশি সারা উপজেলার যে কেউ এ হাটে কেনাকাটা করতে পারবে। প্রত্যেকেই তার চাহিদামত জিনিসপত্র স্বল্পমুল্যে কিনতে পারবে। একইভাবে ভারতীয়রা তার প্রয়োজনীয় বাংলাদেশী জিনিস কিনতে পারবে।
সীমান্ত হাটের প্রথম যাত্রা শুরু হয় ২০১১ সালের জুলাই মাসে কুড়িগ্রাম জেলার বালিয়ামারি সীমান্তে সোনাভরি নদের তীরে। উদ্দেশ্য ছিল সীমান্তের দুই পাড়ের মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকা-কে চাঙ্গা করে একদিকে তাঁদের জীবিকার সংস্থান করা এবং অন্যদিকে তাদের জীবন যাত্রার মানের উন্নয়ন। এর আর একটি উদ্দেশ্য ছিল দু’দেশের মানুষের মধ্যে সম্প্রীতি, ভালবাসা এবং ভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টি করা। বর্তমানে বাংলাদেশ ভারত সীমান্তে ১০টি বর্ডার হাট রয়েছে। এটি ২২টিতে পর্যায়ক্রমে উন্নীত করা হবে বলে দুদেশের বর্ডার হাট স্মারক কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
চুক্তি অনুযায়ী বর্তমানে সংশ্লিষ্ট জেলায় উৎপাদিত কৃষি ও তৈরি পণ্য ছাড়াও বর্ডার হাটে দুই দেশের অধিবাসীরা মেলামাইন ক্রোকারিজ, ফলের জুস ও টয়লেট্রিজ জাতীয় শিল্প পণ্য ছাড়াও স্থানীয়ভাবে উৎপন্ন কৃষিজাত পণ্য, তাজা ও শুঁটকি মাছ, ডেইরি বা পোল্ট্রি পণ্য, কাঠ ও বেতের তৈরি পণ্য ও হস্তশিল্পজাত পণ্য কেনাবেচা করতে পারবেন। চুক্তি অনুযায়ী দু’দেশের ৫০ জন করে মোট ১শ’ বিক্রেতা পণ্য বিক্রি করতে পারতেন। দু’দেশের সীমান্ত এলাকার সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের ৫ কিলোমিটারের মধ্যে যাদের বসবাস শুধু তারাই বর্ডার হাটের ক্রেতা-বিক্রেতা হতে পারবেন। ইতিপূর্বে দেড় হাজার করে দু’দেশের ৩ হাজার ক্রেতাকে বর্ডার হাটে পণ্য কেনার অনুমতি পত্র দেয়া হয়। হাটে ভিজিটর এন্ট্রি ফি হচ্ছে ২০ টাকা। বর্তমান বর্ডার হাটের ক্রয়সীমা ২০০ ডলার বা ১৬ হাজার টাকা অর্থাৎ প্রত্যেকে ১৬ হাজার টাকার পণ্য ক্রয় করতে পারবেন। বেচাকেনায় বাংলাদেশী মুদ্রা টাকা ও ভারতীয় রুপী ব্যবহার করা হচ্ছে। এছাড়া বর্ডার হাটের একজন বিক্রেতা দেড় থেকে আড়াই লাখ টাকার মালামাল বিক্রি করতে পারেন। তবে তা শর্তশিথিল করে বিক্রয়সীমাও বাড়ানো যাবে।
সমঝোতা অনুযায়ী বর্ডারহাটে কেনা-বেচা হওয়া পণ্য তালিকায় যুক্ত হয়েছে- স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত সব পণ্য, শাড়ি, হস্তশিল্পজাত পণ্য ও স্টেশনারি। বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা ছানাচুর, চিপস, আলু, তৈরি পোশাক, শুঁটকি, সাবান, শিম, সবজি, গামছা ও তোয়ালে, কাঠের টেবিল ও চেয়ার, গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত লোহার তৈরি পণ্য বিক্রির অনুমতি পায়। অন্যদিকে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা ফল, সবজি, মসলা, মরিচ, হলুদ, পান, সুপারি, আলু, মধু, বাঁশ ইত্যাদি বিক্রি করে থাকেন।