হাসপাতালে ড. ফেরদৌসের মজার অভিজ্ঞতা অর্জন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ হবিগঞ্জ-৩ (সদর-লাখাই) আসনের সাবেক এমপি মরহুম আতিক উল্লাহ’র ছেলে, হবিগঞ্জের কৃতি সন্তান অধ্যাপক ডক্টর আমানউল্লাহ ফেরদৌসের গলব্লাডার অপারেশন হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে তার এই অপারেশন করা হয়। হাসপাতালে চিকিৎসাকালে মজার অভিজ্ঞতা অর্জন করেন ঢাকা বিশ^বিদালয়ের অধ্যাপক ড. ফেরদৌস।
হাসপাতালের অভিজ্ঞতা তিনি যেভাবে বর্ণনা করেছেন তা নি¤েœ তুলে ধরা হলো- বিপদ কখন আসবে আমরা কেউ তা আগে থেকে জানি না। দেশ-বিদেশের জনস্বাস্থ্য নিয়ে এতো এতো গবেষণা করি আর নিজের স্বাস্থ্যের খবর রাখি না এটাও ঠিক নয়। তবে অত্যধিক ব্যস্ততার কারণে কিছুটা যে অনিয়ন্ত্রিত জীবন হয়ে ওঠে না মাঝেমধ্যে সেটাও ঠিক নয়। গত পরশুদিন রাতে হঠাৎ করেই আমার গলব্লাডার ইনফ্লেমেটেড হয়ে এমন বিট্রে করে বসলো যে সঙ্গে সঙ্গে পার্শ্ববর্তী সিডনির লিভারপুল হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে ভর্তি হতে হলো। এই হাসপাতাল সম্পর্কে আমার ধারণা ভালো না যদিও আমি এদের সাথে কাজ করেছি সেই ১৯৯৭ সালে উপাত্ত সংগ্রহ করতে গিয়ে। আমি সাধারণত যাই RPA, North Shore বা Saint George এ যেখানে আমার প্রফেসররা বসে এবং অনেকের সাথেই আমার গবেষণা সুত্রে যোগাযোগ। এরা আমাকে বেশ আদর এবং সমীহ করে প্রধানত ঢাকায় কাজ করি বলে। ফলে লিভারপুল নিয়ে আমার কিছুটা সংশয় লেগেই ছিল। আমার একমাত্র ছোট ভাই রাসেলও গজগজ করতেছিল এ নিয়ে। আমার নিজের মেডিকেয়ার এবং ইন্টারন্যাশনাল হেলথ ইন্সুরেন্স কাভারেজ আছে ফলে কোথায় চিকিৎসা করালাম বিষয় না।
যাই হোক ভর্তির দুই মিনিটের মাথায় শুরু হলো বিশাল এক কর্মযজ্ঞ আমাকে নিয়ে। ইমার্জেন্সিতে এমনিতেই লোকে লোকারণ্য আরো অনেক ভয়ানক রোগীদের নিয়ে। কিন্তু আমি স্পষ্ট বুঝতে পারলাম যে এখানে আমাকে নিয়ে একটা ডেডিকেটেড গ্রুপ কাজ করছে এবং তার সংখ্যা কমপক্ষে ১০/১২ জন হবে। মনে মনে ভাবলাম, হায় হায় এরা চিনল ক্যাম্নে যে এইলোক তো বাংলাদেশের ভিআইপি!!! (কিডিং, এরা রাস্তার একজন টোকাইকেও একইভাবে দেখে)।
মোটামুটি কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই এরা কতবার যে আলট্রাসাউন্ড করলো, কতবার যে ব্লাড টেস্ট করলো, কতবার যে সিটি স্ক্যান করলো, আরো কতসব টেস্ট যে করলো তার কোন হিসাব নেই। প্রতি চল্লিশ মিনিট পরপর একটার পর একটা এন্টিবায়োটিক আইভি পুশ করতেই থাকল। পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করা পর্যন্ত তারা আমাকে আইসিইউতেই রাখল। এর মধ্যেই ঘটেছে মজার এক ঘটনা। এক মেয়ে এসে টাস টাস ইংরেজীতে বলে ‘আমি সার্জিক্যাল ডক্টর।’ শুনে আমার মাথায় হাত। বলে কি এই পুঁচকে মেয়ে? ধরা। জিজ্ঞেস করলাম কিছু প্রশ্ন। সে উত্তর দিতে দিতেই হাজারটা প্রশ্ন করা শুরু করলো। শেষে বলে, তুমি কি কাজ করো? বললাম পড়াই। বলে স্কুলে না কলেজে? ঢোক গিলে বললাম ইউনিভার্সিটিতে পড়াই। বলতেই সে মুখ হা করে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। বলে, তুমি কোন দেশের? বললাম বাংলাদেশ, ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে পড়াই, জনস্বাস্থ্য নিয়ে গবেষণাও করি। বলতেই খুশিতে এবং উত্তেজনায় তার হাত থেকে কলমটি ছিটকে বেরিয়ে গিয়ে পড়ল আমার স্ত্রীর গায়ে। ডাক্তার কন্যাটি জোরে বলে উঠল ‘আমিও বাংলাদেশী। আমার ন্যানি মৈর‌্যা গেসে ব্রেস্ট ক্যান্সারে, আমি তোমার সাথে কাজ করবো।’ বিদেশ বাড়িতে কন্যার এই কথা শুনে আমার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়তে লাগল। বললাম অবশ্যই করবে, আমি ব্রেস্ট ক্যান্সার নিয়ে ২০০৮ থেকে কাজ করছি ARC এবং Sydney University এর সাথে। বাকীটা ইতিহাস। কয়েক ঘন্টার মধ্যেই ঐ বাংলাদেশী কন্যা নয়, বড় একটা সিনিয়র গ্রুপ আমার একটা ওয়ার্ল্ড ক্লাস অপারেশন সফলভাবে সম্পন্ন করেছে। মনে হচ্ছিল একটু অন্য ব্যবহার পেলাম। ঐ বাংলাদেশী কন্যা নিশ্চই কিছু একটা লাগিয়েছে, নতুবা পুরো টিম এসে আমার সাথে সময় নিয়ে গল্প করতো না। যাক সব কপাল। বাংলাদেশের Quality Health Care নিয়ে রিপোর্ট লিখছি, বাস্তব এই কষ্টের অভিজ্ঞতা কাজে লাগবে। টোটাল বিল এসেছে জিরো ডলার। আমার একমাত্র ছোট ভাই রাসেল, সহকর্মী, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়স্বজন এবং পরিবারের সদস্যদের উপর দিয়ে একটা ভালো দখল গেল। সেরে উঠছি, শীঘ্রই ফিরবো, দোয়া করবেন সবাই। সৃষ্টিকর্তা যেন কোন বদমাইশ লোককেও এই কষ্টটা না দেন।
বারবার একটা কথাই মাথায় বাজছে, “আমার ন্যানি মৈর‌্যা গেসে ব্রেস্ট ক্যান্সারে, আমি তোমার সাথে কাজ করবো।” কাজ তো করবে কন্যা, আমাদের হেলথ সিস্টেম বিশ্বজুড়ে নামও করেছে সেটাও সত্য কিন্তু সব তো চলে গেছে পাড়া থেকে একদম কেন্দ্রীয় মাস্তানদের হাতে। আপনি কই কাজ করতে যাবেন কন্যা?