এসএম সুরুজ আলী ॥ বানিয়াচং উপজেলার সুবিদপুর ইউনিয়নের আতুকুড়া গ্রামের ধোপাজুড়া খালের উপর নির্মিত ব্রীজটি এখন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। প্রায় ৩০ বছর পূর্বে নির্মিত ব্রীজটি বর্তমানে নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। সাধারণ জনগণের চলাচলের এক আতংকের নাম এই ব্রীজ। প্রতিদিন এ ব্রীজ দিয়ে হাজারো লোকজন যাতায়াত করেন অনেকটা ঝুঁকি নিয়েই। এ অবস্থায় এটি ভেঙ্গে নতুন ব্রীজ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
এলাকাবাসী জানান, এরশাদ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন সময় সুবিদপুর ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন থেকে আতুকুড়া-বালিখাল বাইপাস সড়কের আতুকুড়া ও সুবিদপুর গ্রামের মধ্যবর্তী ধোপাজাড়ার খালে উপর এ ব্রীজটি নির্মাণ করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে এ ব্রীজটি সংস্কার না করায় বর্তমানে ব্রীজটি জরাজীর্ণ অবস্থায় আছে। ব্রীজের রেলিংয়ের দুই পাশই ভেঙ্গে গেছে। বাঁশ দিয়ে রেলিং আটকানো হয়েছে। ব্রীজের পাটাতনের বিভিন্ন স্থান ভেঙ্গে গেছে। এছাড়াও ব্রীজের নিচের পিলারগুলো দুর্বল হয়ে গেছে। গত বৈশাখ মাসে ব্রীজটি ভারী যাপন চলাচল করার কারণে ব্রীজটি আরো দুর্বল হয়ে যেন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। এ অবস্থায় এ অঞ্চলের জনসাধারণের জন্য বিকল্প রাস্তা বা যাতায়াতের পথ না থাকায় জীবনের ঝুকি নিয়ে তাদের ব্রীজটি দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। বিশেষ করে প্রতিদিন ওই এলাকার বিভিন্ন স্কুল কলেজের শতাধিক শিক্ষার্থীসহ হাজারো মানুষ যাতায়াতে এ ব্রীজটি ব্যবহার করেন। বিকল্প কোনো যাতায়াত পথ না থাকায়, মরণফাঁদ জেনেও তারা ওই ব্রীজ ব্যবহার করেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, ব্রীজের রেলিংয়ের দুইপাশ থেকে ভেঙ্গে যাওয়াসহ উপরের সিমেন্টের তৈরি পাটাতন ধ্বসে যাওয়ায় বাঁশ দিয়ে আটকানো রয়েছে রেলিং। ব্রীজ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাওয়ার কারণে রাস্তা প্রতিনিয়ত চলাচলকারী ব্যাটারি চালিত টমটম চলাচলও বন্ধ হওয়ার পথে। ছোট ছোট যানবাহন গুলো যাত্রী নামিয়ে পারাপার করা হচ্ছে।
এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে ব্রীজটি মেরামতের জন্য এলাকাবাসী দাবি জানিয়ে আসছেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা দেখেও যেন না দেখার ভান করছেন। যে কোনো সময় ভেেেঙ্গ যেতে পারে ব্রীজটি। যার ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন ও বড় ধরণের দুর্ঘটনার শিকার হতে পারেন পথচারী, শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসী। শত শিক্ষার্থীদের চলাচলের একমাত্র ব্রীজটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছেন অভিভাবকরাও।
ব্রীজের উপর দিয়ে প্রতিদিনই শতাধিক কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীসহ হাজার হাজার মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করেন। প্রায় প্রতিদিনই ছোট বড় নানান দুর্ঘটনার শিকার হন এলাকাবাসী। অথচ ব্রীজটি মেরামতের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোন মাথা ব্যথা নেই। এই ব্রীজের দিয়ে খুব সহজেই নবীগঞ্জ উপজেলা হয়ে অনেকেই সিলেটে যাতায়াত করেন। শুধু তাই নয়, ব্রীজটি ব্যবহার করে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দুইটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, একটি কলেজ ও একটি মাদরাসার কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। এ অবস্থা থেকে উত্তোরণে ব্রীজটি ভেঙ্গে নতুন ব্রীজ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। আতুকুড়া গ্রামের বাসিন্দা ইকবাল আহমেদ জানান, ওই ব্রীজে উঠলেই মনে হয় এই বুঝি ভেঙে পড়ল। প্রতিদিন ভয় নিয়ে আমরা এই ব্রীজ পারাপার হই। ব্রীজটি মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। জরুরী ভিত্তিতে এই ব্রীজটি ভেঙ্গে নতুন একটি ব্রীজ নির্মাণ করা খুব প্রয়োজন।
শিক্ষার্থী সাইফুল আলম শরিফুল আখঞ্জি বলেন, আমরা হবিগঞ্জে বৃন্দাবন কলেজে পড়ি। প্রতিদিন আমাদের কলেজে যেতে এ ব্রীজ ব্যবহার করতে হয়। জীবনের অনেকটা ঝুঁকি নিয়েই প্রতিদিন আমরা ব্রিজ পাড় হই। এই ব্রিজটি ভেঙ্গে নতুন ব্রীজ করা এখন এই এলাকার বাসিন্দাদের প্রধান দাবি।
এই এলাকার বাসিন্দা সামছু মিয়া জানান, ব্রীজটির অবস্থা খুবই ঝুকিপূর্ণ। প্রতিদিন বাচ্চাদের স্কুলে পাঠিয়ে উদ্বিগ্ন থাকতে হয় আমাদের। মাঝে মাঝে ছোটখাটো দুর্ঘটনাও হয়। জনপ্রতিনিধিদের এ ব্যাপারে কোনো মাথা ব্যথা নেই। আমরা এলাকাবাসী ব্রীজটি ভেঙ্গে আগামী শুকনো মৌসুমে নতুন ব্রীজ নির্মাণ করে দেয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি। এ ব্যাপারে সুবিদপুর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড মেম্বার আতুকুড়া গ্রামের বাসিন্দা জালাল মিয়া আখনজী জানান, এরশাদ সরকার যখন ক্ষমতায় ছিল তখন এ ব্রীজটি নির্মিত হয়েছিল। বর্তমানে ব্রীজটি ঝুকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ব্রীজটি নির্মাণের জন্য আমি তৎকালীন ইউপি চেয়ারম্যানের সাথে একাধিক বার আলাপ-আলোচনা করেছি। কিন্তু তিনি আমাকে জানিয়েছিলেন ব্রীজটি হয়ে যাবে। আমি এলাকাবাসী সাথে একমত পোষন করে ব্রীজটি ভেঙ্গে দ্রুত নতুন ব্রীজ নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি।
এ ব্যাপারে সুবিদপুর ইউনিয়ন পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান জয় কুমার দাস জানান, নির্বাচনী প্রচারণায় যখন মোটর সাইকেল নিয়ে ব্রীজটির উপর দিয়ে গিয়েছি তখন অনেক ভয় হয়েছে। যেহেতু এলাকার জনগণ আমাকে ভোট দিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেছেন এ হিসেবে এটি নির্মাণ হবে আমার প্রথম কাজ। এ বিষয়টি আমি মাসিক সমন্বয় সভায় উপস্থাপন করবো এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে ব্রীজটি নির্মাণের জন্য যোগাযোগ করবো।
এ ব্যাপারে বানিয়াচং উপজেলা প্রকৌশলী আলনূর তারেক জানান, আতুকুড়া ধোপাজুড়া খালের ঝুঁকিপূর্ণ ব্রীজ নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। আশা করি আগামী শুকনো মৌসুমে আগেই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে এবং ব্রীজের নির্মাণ কাজ শুরু করতে পারবো। তবে এখন এ ব্রীজটি দিয়ে অনেকটা সতর্কতার সাথে যাতায়াত করতে হবে।