বাগানের নিরাপত্তা এবং চা গাছের স্বার্থে পর্যটকদের সুযোগ দিতে রাজী নন চন্ডিছড়া চা বাগান কর্তৃপক্ষ

আবুল কালাম আজাদ, চুনারুঘাট থেকে ॥ বাস্তবে কোন পরী নেই বা আসেও না। তারপরও বিলের নাম হয়েছে পরীর বিল। বর্ষায় সাদা পদ্ম ফুটলে সারা বিলে দেখা যায় রূপকথার পরীর মতো যেন কারা দাঁড়িয়ে আছে। এ থেকেই হয়তো এই বিলের নাম হয়েছে পরীর বিল। বর্ষার শেষের দিকে সাদা পদ্ম ফুটে, কিছুদিন পর তা শুকিয়ে শরতের প্রথমেই পুনরায় লাল পদ্ম ফুটতে শুরু করে। সাদা আর লাল পদ্ম একমাত্র এ বিলেই দেখা যায়। এ অঞ্চলের আর কোন বিলে এমন দৃশ্য দেখা যায় না। তাই এ বিলের আকর্ষণ দিন দিন বাড়ছে। চারদিকে চা বাগান ঘেরা সবুজ প্রকৃতির মাঝে হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার চন্ডিছড়া চা বাগানে এ বিলের অবস্থান।
এ পরীর বিল সম্পর্কে সাধারণ মানুষ এখনো কিছু জানেন না। চা বাগানের অভ্যন্তরে এবং সংরক্ষিত এলাকা হওয়ার কারণে সাধারণ মানুষ খুব একটা এখানে যান না। ৮ থেকে ১০ বছর আগে এ পরীর বিল সম্পর্কে এলাকার কিছু মানুষজন জানলেও পর্যটনের মওসুমে চা বাগান দেখতে আসা কিছু মানুষকে এ বিলে যেতে দেখা যায়। মঙ্গলবার বিকেলে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিলের চারদিকে অনেকেই ঘুরাফেরা করছেন, কেউ কেউ গাছের ছায়ায় বসে প্রকৃতির নির্মল বাতাস নিচ্ছেন আর পরীর বিলের সাদা পদ্ম দেখছেন। পাশের গ্রাম থেকে ছেলে মেয়েরা এসেছেন এ বিলের সৌন্দর্য্য দেখতে। তার মধ্যেও এলাকার কিছু কিছু ছেলেরা বিলে নেমে শালুক তুলে নিয়ে যাচ্ছে।
চা বাগান ঘেরা আর শেডট্রির ছায়ার নিচে বিলের পাড়ে বিকেলে গেলে সবারই ভাল লাগবে। অন্তত: কিছু সময়ের জন্য হলেও প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যাবেন, প্রকৃতির নির্মল বাতাস আর ফুলের ঘ্রাণে তাদের মন ভরে উঠবে।
ন্যাশনাল টি কোম্পানীর চন্ডিছড়া চা বাগানের অধীনে থাকা এ পরীর বিলে পর্যটক আসুক এটা কখনোই চা বাগান কর্তৃপক্ষ চান না। কারণ এটি তাদের সংরক্ষিত এলাকা এবং অতিমাত্রায় পর্যটক আসলে চা বাগানের ক্ষতি হবে। এছাড়া বিলের এ সৌন্দর্য্যও তাড়াতাড়ি নষ্ট হবে। তাই বাগান কর্তৃপক্ষ চায় সীমিত সংখ্যক পর্যটক আসুক। নিরব পরিবেশে তারা আনন্দ উপভোগ করুক।
এ বিষয়ে বাগান ব্যবস্থাপক রফিকুল ইসলাম বলেন, এটি অত্যন্ত সুন্দর একটা জায়গা। এ বিলটি আমরা দীর্ঘদিন ধরে রক্ষণাবেক্ষন করে আসছি। বছরে এই সময়ে বিলটিকে অত্যন্ত সুন্দর দেখায়। এছাড়া শীতকালে এখানে নানা জাতের পাখি আসে। তাই আমরা তাদের ডিস্টার্ব করি না এবং আবাসস্থল ধ্বংস করি না। প্রকৃতিকে প্রকৃতির মতোই দেখতে চেয়েছি আমরা। তারপরও শীতকাল এবং পদ্মফুল ফুটলে কিছু কিছু পর্যটক আসেন। যা আমাদের সহনীয় মাত্রায় আছে। খুব বেশি সংখ্যক পর্যটক আমরা ‘এলাউ’ করতে পারবো না। কারণ বাগানের নিরাপত্তা বিঘিœত এবং চা গাছের ক্ষতি সাধন হতে পারে।
এ বিষয়ে চুনারুঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মঈন উদ্দিন ইকবাল বলেন, অত্যন্ত সুন্দর একটি জায়গা এ পরীর বিল। যদিও এটি চা বাগানের অভ্যন্তরে এবং তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন জমির মধ্যে পড়েছে। চা বাগান কর্তৃপক্ষ ইচ্ছে করলে তাদের ব্যবস্থাপনায় পরীর বিলকে আরো সুন্দর করে তুলতে পারেন।