একটি মামলার যুক্তিতর্ক শুনানীকালে বিচারক জাকির হোসেন
স্টাফ রিপোর্টার ॥ কোনটা সত্য আর কোনটা মিথ্যা তা নিরূপন করা আদালতের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে মন্তব্য করে হবিগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্র্রেট মোঃ জাকির হোসেন বলেছেন- মামলা ব্যতিত তাৎক্ষনিক কিছু বিষয় আদালতের নজরে আনা হয়। আদালত সে ক্ষেত্রে কিছু আদেশও দেন। কিন্তু পরবর্তীতে এসব ঘটনার কোনো সত্যতা পাওয়া যায় না। তাতে আদালত বিব্রত বোধ করেন। বিশ্বাসের জায়গাটা সংকীর্ণ না করতে তিনি সকলের প্রতি আহবান জানান। গতকাল সিআর ৩৬৫/২৩ মামলার যুক্তিতর্ক শুনানীকালে বিচারক জাকির হোসেন এসব মন্তব্য করেন। ওই মামলার বিষয়বস্তু ছিল মামলার বাদী নাজমা আক্তার একটি মামলায় হাজিরা দিয়ে কোর্ট থেকে বের হওয়ার সময় মামলার আসামীগণ চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্র্রেট ভবনের ৩য় তলার সিড়ি কোটায় বাদীর উপর আক্রমণ করেন। তাৎক্ষনিক তিনি পুনরায় আদালতে গিয়ে মৌখিক নালিশ করেন যে, আসামীরা তাকে কোর্ট ভবনের ভেতরেই নাজেহাল করেছে। আদালত বাদীকে নতুন একটি মামলা দায়ের করতে পরামর্শ দেন। বাদী কিছু সময়ের মধ্যেই ৩ পাতার কম্পিউটার কম্পোজ করা একটি মামলা আদালতে দাখিল করেন। আদালত আসামীদের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট ইস্যু করেন। আসামীগণ পরদিন জামিন আবেদন করলে আদালত জামিন প্রদান করেন। মামলাটি বিচারের জন্য প্রস্তুত হলে ১২ জন স্বাক্ষীর মধ্যে ৪ জন স্বাক্ষী বিজ্ঞ আদালতে স্বাক্ষ্য প্রদান করেন। বাদীসহ কেউ হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করেননি। অথচ হাসপাতালের ডাক্তারকেও স্বাক্ষী মানা হয়েছে। মামলায় বাদী, বাদীর স্বামী তুরাব আলী, মেয়ে তামান্না আক্তার ও ভাসুর পুত্র সোহাগ মিয়া স্বাক্ষ্য প্রদান করেন। মামলার বাদী নাজমা আক্তার পইল গ্রামের সনজব আলী হত্যা মামলার আসামী। দীর্ঘদিন তিনি জেল হাজত ভোগও করেন। তাছাড়া নাজমা আক্তার হবিগঞ্জের একজন ডাক্তারকে ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা ঘুষ প্রদান করেও ময়না তদন্তের রিপোর্ট তার পক্ষে না আসায় ওই ডাক্তারের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক বরাবরে অভিযোগকারী। কোর্ট প্রাঙ্গনের ঘটনায় যাদেরকে আসামী করা হয়েছে তারা সনজব আলী হত্যা মামলার স্বাক্ষী। স্বাক্ষীগণ ঘটনা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হন। আদালত আসামী পইল গ্রামের আশরাফ উদ্দিন ও দুলাল মিয়াকে খালাস প্রদান করেন। আসামী পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন অ্যাডভোকেট এম এ মজিদ ও অ্যাডভোকেট ইমরান হোসেন রুহেল। বিচারক জাকির হোসেন যুক্তিতর্ক শুনানীকালে অবজারভেশনে বলেন- দুদিন আগে একটি মামলা শুনানী শেষে বাদী অভিযোগ করেন যে, আসামীকে জামিন দেয়ার পর আসামী আদালতের বাহিরে গিয়ে বাদীকে থুথু নিক্ষেপ করেছে। এমন একটি অভিযোগের বিষয়ে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা করে দেখা গেছে আদালত প্রাঙ্গনে এমন কোনো ঘটনাই ঘটেনি। আরেকটি মামলার উদাহরণ টেনে বিচারক জাকির হোসেন বলেন- এক মা তার ছেলের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন, ছেলেকে আদালত হাজতে পাঠিয়েছেন। পরবর্তীতে জামিন শুনানীর সময় মায়ের পক্ষের আইনজীবী জামিন আবেদনের বিরোধীতা করেন। আদালত জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন। পরক্ষনেই ওই মা বিজ্ঞ আদালতে কেঁদে কেঁদে বলেন, তার ছেলেকে জামিন দিয়ে দেয়ার জন্য। এসব অসংগতিতে আদালতকে কোনটা সত্য কোনটা মিথ্যা নিরূপন করতে প্রচন্ড বেগ পেতে হয়।