চুনারুঘাটে চা বাগানে পাতা চয়ন শুরু
আবুল কালাম আজাদ, চুনারুঘাট থেকে ॥ গত ৫ মাস ধরে বৃষ্টি না হওয়ায় হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার লস্করপুর ভ্যালীর ১৭টি চা বাগান বড় ধরনের ক্ষতির মধ্যে পড়েছে। ফেব্রুয়ারি মাস থেকে চায়ের মওসুম শুরু হলেও চলতি বছর বৃষ্টি না হওয়ার কারণে ভ্যালীর চা বাগানগুলোতে পাতা চয়ন শুরু করতে দেরী হয়। মঙ্গলবার চন্ডিছড়া চা বাগানে পাতা চয়ন শুরুর মাধ্যমে ভ্যালীতে চায়ের উৎপাদন শুরু হলো। পাতা চয়ন উদ্বোধন করেন ন্যাশনাল টি কোম্পানীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোঃ জিয়াউল হাসান। এসময় বাগান ব্যবস্থাপক চৌধুরী মুরাদ আহমেদ ও চা শ্রমিকরা উপস্থিত ছিলেন।
তবে ভ্যালী সূত্র জানিয়েছেন দেরীতে পাতা চয়ন শুরুর কারণে ইতোমধ্যে তাদের প্রত্যেক বাগানে ৪০ থেকে ৫০ হাজার কেজি পাতা উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
নিয়ম অনুযায়ী প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসে বৃষ্টি দেখা দিলে এবং চা বাগানে উৎসবমুখর পরিবেশে চা পাতার চয়ন শুরু হয়। কিন্তু চলতি বছর মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহ চলে গেলেও ভ্যালীর কোথাও বৃষ্টির দেখা মেলেনি। প্রায় ৫ মাস ধরে বৃষ্টির দেখা না মেলায় সবগুলো চা বাগানেই প্রোনিং করা গাছে কুঁড়ি গজাতে দেরী হচ্ছে। এ অবস্থায় ৯ মার্চ মঙ্গলবার ভ্যালীর প্রথম চন্ডিছড়া চা বাগানে পাতা চয়ন শুরু হয়। ইতোমধ্যে সেচের মাধ্যমে কয়েকটি বাগান কিছু কিছু পাতা চয়ন শুরু করতে যাচ্ছে। কিন্তু পানির স্তর নেমে যাওয়া এবং জলাধারের পানি শুকিয়ে যাওয়ায় এখন সেচও দেওয়া যাচ্ছে না। এ অবস্থায় চরম ক্ষতির মধ্যে পড়তে যাচ্ছে চা শিল্প।
চন্ডিছড়া চা বাগানের ব্যবস্থাপক চৌধুরী মুরাদ আহমেদ জানান, ফেব্রুয়ারির দিকে বৃষ্টি হলে মার্চের প্রথমে চায়ের পুরো মওসুম শুরু হয়। এটাকে আমরা গোল্ডেন শাওয়ার বলি, কিন্তু এবার বৃষ্টি না থাকায় গাছে পাতা আসেনি। তারপরও আমরা চা পাতা চয়ন শুরু করেছি।
চান্দপুর চা বাগানের সহকারি ব্যবস্থাপক সরওয়ার রেজা চৌধুরী বলেন, এবার দেরিতে বৃষ্টি হওয়ায় এখন পর্যন্ত প্রতিটি বাগানের উৎপাদন ৪০ থেকে ৫০ হাজার কেজি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বৃষ্টি আসতে বিলম্ব হলে এ ক্ষতি আরো বাড়বে। বিশেষ করে নতুন করে লাগানো গাছ এবং প্রোনিং করা গাছের ক্ষতি বেশি হচ্ছে। দেউন্দি চা বাগানের সহকারি ব্যবস্থাপক দেবাশীষ দাস বলেন, এখনও যদি বৃষ্টি আসে, তাহলে ৮/১০ দিনের মধ্যে উৎপাদন শুরু করা যাবে। তিনি বলেন, সোমবার রাতে বৃষ্টি আসবে আসবে ভাব থাকলেও ছিটেফুটা পড়েছে। এতে বাগানের কোন উপকার হবে না।
লস্করপুর ভ্যালীর সভাপতি ও তেলিয়াপাড়া চা বাগানের ব্যবস্থাপক মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, চলতি বছর ভ্যালীতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে গত বছরের উৎপাদন ১ কোটি ১৮ লাখ কেজির চেয়ে বেশি। তাই বৃষ্টির দেখা দেরীতে হলে উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটবে।
বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিটিআরআই) পরিচালক মোহাম্মদ আলী বলেন, আগাম বৃষ্টি চা শিল্পের জন্য আনন্দময় প্রাপ্তি। এসময়ে প্রতিটি বৃষ্টির ফোটা চা গাছের জন্য অতি মুল্যবান। নতুন কুঁড়ি গজানো ও চারা সুরক্ষার জন্য এই বৃষ্টি আশীর্বাদস্বরূপ। কিন্তু এবার চলতি মাসেও বৃষ্টি না হওয়ায় চা শিল্পের জন্য ভয়ানক হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। তিনি আরো বলেন, খরার কারণে চা বাগানগুলো লাল মাকড়শা বা রেড স্পাইডার রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। পাশাপাশি হেলোফিলটিস বা মশার আক্রমণও দেখা দেয়।