হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আতাউর রহমান সেলিমের ২১ দফা নির্বাচনী ইশতেহার
স্টাফ রিপোর্টার ॥ হবিগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা মার্কার প্রার্থী আতাউর রহমান সেলিম বলেছেন- আমি মেয়র নির্বাচিত হলে হবিগঞ্জ পৌরসভাকে দুর্নীতিমুক্ত, রাজনীতি মুক্ত ও আমার পরিবারমুক্ত রাখব। সম্মানিত পৌরবাসী যদি আমাকে নির্বাচিত করেন তাহলে আমি হবিগঞ্জ পৌরসভাকে একটি আধুনিক পৌরসভা হিসেবে গড়বো। গতকাল রাত সাড়ে ৭টায় হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি ২১ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন।
নি¤েœ সংক্ষেপে তাঁর নির্বাচনী ইশতেহার তুলে ধরা হলো।
১। মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন ঃ হবিগঞ্জ পৌরসভার কোন মাস্টারপ্ল্যান না থাকায় অপরিকল্পিত নগরায়নের কারণে আজ নানান সমস্যা জর্জরিত এই পৌরসভা। আমি নির্বাচিত হলে প্রথমেই মাস্টার প্ল্যান তৈরি করে পরিকল্পিতভাবে এই পৌরসভাকে গড়ে তুলব। পৌরসভার উন্নয়নে থাকবে স্বল্প মেয়াদী, মধ্য মেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা। একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়ায় এই পৌরসভার উন্নয়ন নিশ্চিত করা হবে।
২। জলাবদ্ধতা নিরসন ঃ হবিগঞ্জ শহরের একটি বড় সমস্যা জলাবদ্ধতা। আমি নির্বাচিত হলে বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের পরামর্শ নিয়ে বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ করে হবিগঞ্জ শহরকে ১ বছরের মধ্যে জলাবদ্ধতামুক্ত করব, ইনশাআল্লাহ্।
৩। পুরাতন খোয়াই নদীকে নান্দনিক প্রকল্পে রূপ দেওয়া ঃ হবিগঞ্জ পৌরসভার পুরাতন খোয়াই নদীকে কেন্দ্র করে বর্তমান সরকারের একটি নান্দনিক প্রকল্প গ্রহণ করার প্রস্তাবনা থাকলেও যথাযথ যোগাযোগ এবং তদবিরের অভাবে এই প্রকল্পটি বাস্তবে রূপ নিচ্ছে না। আমি নির্বাচিত হলে পুরাতন খোয়াই নদীকে হাতির ঝিলের ন্যায় নান্দনিক প্রকল্প রূপ দেওয়ার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাব।
৪। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ঃ হবিগঞ্জ পৌরসভার প্রধান সমস্যা দুর্বল ড্রেনেজ ব্যবস্থা এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাব। আমি নির্বাচিত হলে একটি সুনির্দিষ্ট প্লান্টে বর্জ্য অপসারণ এবং শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে ড্রেনেজ ব্যবস্থার আধুনিকায়নে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করব।
৫। খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক বিকাশ ঃ দেশের বিভিন্ন পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশন খেলাধুলা এবং সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক হিসাবে কাজ করলেও হবিগঞ্জ পৌরসভা এক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে। যদিও অতীতে এক্ষেত্রে পৌরসভার নেতৃস্থানীয় ভূমিকা ছিল। আমি নির্বাচিত হলে খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক বিকাশে বিশেষ বাজেট বরাদ্দের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের যোগ্য লোকজনকে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে কাজ করব। সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া সংগঠনগুলোকে অনুদানের ব্যবস্থা করা হবে।
৬। শিক্ষার উন্নয়ন ও বৃত্তি প্রদান ঃ দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌরসভা এবং সিটি কর্পোরেশন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা এবং শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করে থাকে। আমি নির্বাচিত হলে হবিগঞ্জে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা এবং দরিদ্র ও মেধাবীদের বৃত্তি প্রদানের ব্যবস্থা করব। পাশাপাশি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে সহায়তা প্রদান করিব।
৭। মশক নিধন ঃ পৌরবাসী যাতে মশার উপদ্রব এবং মশাবাহিত রোগ থেকে রক্ষা পায় তার জন্য মশক নিধনের জন্য বিশেষ বরাদ্দ ও প্রকল্প গ্রহণ করিব।
৮। সাংবাদিক এবং বিভিন্ন পেশাজীবীদের কল্যাণ ঃ আমি নির্বাচিত হলে সাংবাদিক, শিক্ষক, শিল্পী, ক্রীড়াবিদ সহ মননশীল কাজে নিয়োজিত বিভিন্ন ব্যক্তি ও পেশাজীবীদেরকে প্রনোদনা এবং দক্ষতার জন্য পুরস্কারের ব্যবস্থা করব।
৯। সিসিটিভি ও ফ্রি ওয়াই ফাই জোনের ব্যবস্থা ঃ আমি নির্বাচিত হলে শহরের প্রধান সড়কসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোকে সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় নিয়ে আসব। পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে ফ্রি ওয়াইফাই জোন করে জনগণকে বিনামূল্যে ইন্টারনেটের ব্যবস্থা করে দিব। প্রয়োজনে এ ব্যাপারে সরকার অথবা কোন সংস্থা থেকে বিশেষ প্রকল্প নিয়ে আসব।
১০। পৌরকর ও পৌর সেবা থেকে জনগণকে হয়রানী মুক্ত রাখা ঃ পৌরসভার পৌরকর এবং বিভিন্ন সেবা প্রদানের মাধ্যমে যে কর নেওয়া হয় তা সর্বনি¤œ রাখা এবং জনগণকে কোন ধরণের হয়রানী এবং উৎকোচ যাতে প্রদান করতে না হয় তার ব্যবস্থা করব।
১১। ট্রাক ট্রার্মিনাল নির্মাণ এবং যানজট মুক্ত পৌরসভা গড়া ঃ হবিগঞ্জ পৌরসভায় একটি ট্রাক ট্রার্মিনাল নির্মাণ করার পাশাপাশি শহরের যানজট মুক্ত করার জন্য বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়।
১২। পর্যটন বান্ধব শহর গড়া ঃ বর্তমান সরকার দেশের প্রত্যেকটি জেলাকে আলাদা করে ব্রান্ডিং করার উদ্যোগ গ্রহণ করলে হবিগঞ্জে ব্রান্ডিং করা হয় পর্যটন। কিন্তু সমগ্র জেলার কেন্দ্রবিন্দু এই শহরকে কোনভাবেই পর্যটন বান্ধব বলা যাবে না। আমি নির্বাচিত হলে শহরকে নান্দনিকভাবে গড়ে তোলে পর্যটকদেরকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করব।
১৩। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ঃ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য জনপদ হিসাবে হবিগঞ্জ পৌরসভাকে গড়ে তুলব। এক্ষেত্রে সকল ধর্মের ধর্মীয় উৎসব যাতে শান্তিপূর্ণভাবে পালন করতে পারে তার ব্যবস্থা করব। পাশাপাশি সকল ধর্মের প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সহায়তা করা হবে।
১৪। ব্যবসা বান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলা ঃ হবিগঞ্জ জেলার বিভিন্ন প্রত্যন্ত এলাকা সহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে লোকজন হবিগঞ্জ শহরে ব্যবসার জন্য আসেন। ব্যবসায়ীদের সকল সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করার পাশাপাশি পৌরসভার উন্নয়ন কাজ চলাকালীন সময় ব্যবসায়ীরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেই দিকে বিশেষ নজর রাখা হবে।
১৫। শিশুপার্ক ও চিত্ত বিনোদনের ব্যবস্থা ঃ হবিগঞ্জ পৌরসভার শিশু পার্ক ও চিত্ত বিনোদনের ব্যবস্থার দাবি অনেক পুরনো। আমি নির্বাচিত হলে শিশু পার্ক নির্মাণ এবং চিত্ত বিনোদনের ব্যবস্থা করব।
১৬। বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ঃ শহরের সকল নাগরিককে পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য অলিতে গলিতে পাইপ লাইন বসিয়ে সার্বক্ষণিকভাবে পানির সুবিধা নিশ্চিত করা হবে।
১৭। বিদ্যুৎ ও স্ট্রিটলাইটের উন্নয়ন ঃ শহরের সকল এলাকায় বিদ্যুৎ লাইনের ব্যবস্থা করার পাশাপাশি পাড়ায় পাড়ায় স্ট্রিটলাইটের ব্যবস্থা করা হবে।
১৮। খোয়াই নদীর দুটি ব্রীজ পাকাকরণ ঃ হবিগঞ্জ শহরের চৌধুরী বাজার এলাকায় খোয়াই নদীর উপর ঝুঁকিপূর্ণ ২টি লোহার পুল অপসারণপূর্বক স্থায়ী সেতু নির্মাণের ব্যবস্থা করব। এর জন্য সড়ক পরিবহন ও যোগাযোগ মন্ত্রী এবং সরকারের উচ্চপর্যায়ে ব্যক্তিগতভাবে এবং স্থানীয় সংসদ সদস্যের মাধ্যমে কার্যকরী যোগাযোগ গড়ে তুলব।
১৯। পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থা গড়ে তোলা ঃ হবিগঞ্জ শহরে এখনও কোন পয়ঃনিস্কাশনের লাইন বা পয়ঃঅপসারণের ব্যবস্থা নেই। আমি নির্বাচিত হলে পয়ঃ নিস্কাশন লাইন নির্মাণ ও অপসারণের ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
২০। বেকার যুবকদের পথ দেখানো ঃ শহরে বেকার যুবকদেরকে কর্মসংস্থান এবং সাবলম্বী করতে ট্রেনিং, সহজ শর্তে ঋণ, বিদেশে প্রেরণ এবং বিভিন্ন সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকুরীর সুযোগ করে দেওয়ার জন্য বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ করা হবে।
২১। স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন ঃ আমি নির্বাচিত হলে হবিগঞ্জ শহরের ২৫০ শয্যা আধুনিক হাসপাতালের ডাক্তার ও নার্সের সংকট নিরসনে স্বাস্থ্য মন্ত্রীর সাথে যোগাযোগ করে দ্রুত ডাক্তার ও নার্স পদায়নের ব্যবস্থা করব। পাশাপাশি হাসপাতালের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় পৌরসভা থেকে সার্বিক সহযোগিতার ব্যবস্থা করব।