বানিয়াচঙ্গে জলাবদ্ধতা নিরসনে খালগুলো পুনরুদ্ধারে কমিটি গঠন
এসএম সুরুজ আলী ॥ বানিয়াচং-হবিগঞ্জ সড়ক সংলগ্ন আতুকুড়া হাওরে হবিগঞ্জ পৌরসভার ময়লা আবর্জনা ফেলার ডাম্পিং স্পট করতে দেবে না বানিয়াচংবাসী। ওই ডাম্পিং স্পট প্রতিরোধে বানিয়াচং উপজেলার জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক সমাজ, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গসহ সর্বস্তরের মানুষ শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে অংশ নেবে। বিশেষ করে আতুকুড়া, সুবিদপুর, সুনারু, করিমনগর, করিবপুরসহ আশপাশের কয়েক গ্রামের লোকজন শীঘ্রই আন্দোলনে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এদিকে গতকাল মঙ্গলবার বানিয়াচঙ্গ উপজেলা পরিষদ হলরুমে উপজেলা আইন-শৃঙ্খলা সভায় বানিয়াচং উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কাশেম চৌধুরী বলেন জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে অনুরোধ করা হয়েছে আতুকুড়ার ডাম্পিং স্পটটির স্থান ছেড়ে দেয়ার জন্য। এ ব্যাপারে তিনি সভায় উপস্থিত আইন শৃঙ্খলা কমিটির সদস্যদের মতামত জানতে চান। সভায় বক্তারা বলেন, হবিগঞ্জ জেলা সদর থেকে বানিয়াচঙ্গ উপজেলার প্রবেশমুখ হলো সুবিদপুর ইউনিয়নের আতুকুড়া। আর যে স্থানটি ডাম্পিং স্পট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, সেই স্থানের পাশে খান বাহাদুর এহিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, সুবিদপুর ইউনিয়ন পরিষদ, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, জামে মসজিদ, চক্ষু হাসপাতালসহ একটি বাজার রয়েছে। এছাড়াও ডাম্পিং স্পটের নির্ধারিত স্থানের পাশে আরেকটি কলেজ নির্মাণের প্রস্তুতি চলছে। তাছাড়াও ওই স্থান সংলগ্ন হবিগঞ্জ-বানিয়াচঙ্গ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন বানিয়াচঙ্গ ও আজমিরীগঞ্জসহ ভাটি অঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষ যাতায়াত করছেন। ভবিষ্যতে ওই সড়কটি বানিয়াচঙ্গ-আজমিরীগঞ্জ হয়ে সুনামগঞ্জের শাল্লা পর্যন্ত আঞ্চলিক মহাসড়কে রূপান্তরিত করতে সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে। এ অবস্থায় এ গুরুত্বপূর্ণ স্থানটি ডাম্পিং স্পট করলে শিক্ষার্থী, অসুস্থ রোগীসহ প্রতিনিয়তই চলাচলকারী লক্ষাধিক মানুষকে দুর্গন্ধের শিকার হতে হবে। এলাকার মানুষের স্বাস্থ্য সেবা হুমকির মুখে পড়বে। তাছাড়া স্থানটি বানিয়াচং উপজেলার জায়গা। যুগ যুগ ধরে আতুকুড়া গ্রামবাসী ভোগ দখল করে আসছেন। প্রায় ৭ বছর পূর্বে হবিগঞ্জ পৌরসভার তৎকালীন মেয়র জি কে গউছ এলাকাবাসী ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের পরামর্শ না নিয়ে জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে লিজ নেন। অপরদিকে ওই স্থানটি লিজ দেয়ার সময় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এলাকাবাসীর সাথে কোন পরামর্শ সভা বা মতামত নেয়া হয়নি। যে কারণে ৭ বছর পূর্বে যখন জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জায়গাটি পৌরসভারকে হস্তান্তর করতে গিয়েছিলেন তখন আতুকুড়াসহ আশপাশের গ্রামবাসীরা বাঁধা প্রদান করেন। পরবর্তীতে এ ঘটনায় পৌরসভার নিয়োগকৃত ঠিকাদার আতুকুড়া গ্রামবাসীকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করেন। এখনও আতুকুড়া গ্রামবাসী বিক্ষুব্ধ। পৌরসভার ওই জায়গা দখলে যাওয়ার চেষ্টা করলে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির আশংকা রয়েছে। সভায় উল্লেখিত স্থানে পৌরসভার ডাম্পিং স্পট করা উচিত হবে না বলে অধিকাংশ সদস্য মতামত ব্যক্ত করেন। এছাড়া সর্বসম্মতিক্রমে আতুকুড়ায় পৌরসভার ডাম্পিং স্পট না করার সিদ্ধান্ত জানানো হয়। এ তথ্য নিশ্চিত করেন বানিয়াচঙ্গ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কাশেম চৌধুরী ও ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ ফারুক আমিন।
ইউএনও মো. মামুন খন্দকারের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কাশেম চৌধুরী, থানার ওসি মোহাম্মদ রাশেদ মোবারক, ভাইস চেয়ারম্যান ফারুক আমিন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান হাসিনা আক্তার, মন্দরী ইউপি চেয়ারম্যান শেখ সামছুল হক, মক্রমপুর ইউপি চেয়ারম্যান আহাদ মিয়া, সুজাতপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুছ শামীম, পুকড়া ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন, ইউপি চেয়ারম্যান রেখাছ মিয়া, ইউপি চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন, ইউপি চেয়ারম্যান ওয়ারিশ উদ্দিন খান, ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান খান, খাগাউড়া ইউপি চেয়ারম্যান শেখ শওকত আরেফিন সেলিম, কাগাপাশা ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ এরশাদ আলী, বড়ইউড়ি ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান, পৈলারকান্দি ইউপি চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান খান, মুরাদপুর ও সুবিদপুর ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানদ্বয়।
সভায় আরও বক্তব্য রাখেন সরকারি জনাব আলী কলেজের অধ্যক্ষ সাফিউজ্জামান খান, সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আবদাল হুসেন খান, আইডিয়েল কলেজের অধ্যক্ষ স্বপন কুমার দাশ, সুফিয়া মতিন মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ ছালামত আলী খান, বানিয়াচং দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সেক্রেটারি আতাউর রহমান, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্যপরিষদ সেক্রেটারি স্মৃতি চ্যার্টাজি কাজল, প্রেসক্লাব সেক্রেটারি তোফায়েল রেজা সোহেল, ছাত্রলীগ সভাপতি এজেডএমউজ্জলসহ সকল ইউপি চেয়ারম্যান প্রমূখ।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এমপি অ্যাডভোকেট আবদুল মজিদ খান বলেছেন, প্রিয়া সাহার বক্তব্য একজন ব্যক্তির বক্তব্য। একজন ব্যক্তির কথায় যেন কোনো সাম্প্রদায়িকতা বা উগ্রতা সৃষ্টি না হয় সেদিকে আমাদের সকলকে সচেতন থাকতে হবে। প্রিয়া সাহাকে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ বহিস্কার করেছে। এটি কি তার ব্যক্তিগত অভিমত নাকি অন্য কোনো ষড়যন্ত্র রয়েছে। সরকারও বিষয়টি গভীরভাবে খতিয়ে দেখছে। একজন ব্যক্তির বক্তব্য নিয়ে যেন কোনো গোষ্ঠী বা সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয় এজন্য আমাদের সকলকেই সচেতন থাকতে হবে। যুগ যুগ ধরেই এখানকার হিন্দু-মুসলিম মিলেমিশে একাকার। মনে রাখতে হবে, বানিয়াচং ও আজমিরীগঞ্জ হল সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পীঠস্থান। তিনি আরও বলেন, ছেলে ধরার বিষয়ে যা প্রচার হচ্ছে তার সবই গুজব। ছেলে ধরা বলতে কিছু নেই। মানুষ যেন এসব গুজবে কান না দেন। আতংকিত না হন। সন্দেহজনক কাউকে দেখলে আইন হাতে তুলে নেবেন না। থানা পুলিশকে বিষয়টি জানানোর জন্য এলাকাবাসীর প্রতি আহবান রাখেন।
অপরদিকে বানিয়াচঙ্গে জলাবদ্ধতা নিরসনে খালগুলো পুনরুদ্ধারে কমিটি গঠন করা হয়েছে। সহকারি কমিশনারকে (ভূমি) প্রধান করে ১৫ সদস্যর কমিটি গঠন করে দেন এমপি আবদুল মজিদ খান। কমিটির সদস্যরা হলেন সদর চার ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান ও সাবেক আট জন চেয়ারম্যান, উপজেলা পরিষদের দুজন ভাইস চেয়ারম্যান, চারটি বাজার কমিটির চারজন সভাপতি। আর উপদেষ্টা কমিটিতে রয়েছেন এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউএনও এবং থানার ওসি।