বাহুবল উপজেলার নিজগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা দুপুরে ছাত্রছাত্রীদের ছুটি দিয়ে স্কুলে তালা মেরে বাড়ি চলে গিয়েছিলেন

এসএম সুরুজ আলী ॥ বাহুবল উপজেলায় প্রাইমারি স্কুলগুলোতে শিক্ষার মান নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আয়েশা হক। প্রাথমিক শিক্ষার মান এগিয়ে নিতে জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিকসহ সকলের সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি। এদিকে যখন তখন শিক্ষকদের স্কুলে যাওয়া নিয়েও অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল সোমবার দুপুর ১২টার দিকে নিজগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের ছুটি দিয়ে বাড়িতে চলে যান। এ সংবাদ বাহুবল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পৌঁছলে তিনি সাথে সাথে গাড়ি নিয়ে স্কুলে যান। সেখানে গিয়ে দেখেন স্কুলের দরজাগুলোতে তালা। এ সময় ইউএনও স্কুলের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের সাথে কথা বললে অভিভাবকরা জানান, ওই স্কুলের শিক্ষকরা নিজেদের ইচ্ছামত স্কুল পরিচালনা করছেন। তারা যখন খুশি স্কুলে আসেন। আবার যখন খুশি স্কুল ছুটি দিয়ে বাড়ি চলে যান। এ সময় উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিদ্যালয়ের দপ্তরীকে ডেকে স্কুলের ক্লাস রুমের তালা খুলেন এবং শিক্ষকদেরকে বিদ্যালয়ে আসার জন্য খবর পাঠান। ইউএনও স্কুলের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের মাধ্যমে খবর দিয়ে স্কুলে নিয়ে আসেন। বেলা ২টার দিকে বাড়ি থেকে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের স্কুলে এনে ক্লাস শুরু করান ইউএনও আয়েশা হক। বিকেল ৩টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ক্লাস করানো হয়। খবর পেয়ে দু’জন শিক্ষক বিদ্যালয়ে আসলেও দুজন শিক্ষক আসেননি। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অসুস্থতার কারণে ছুটিতে রয়েছেন।
এ ব্যাপারে বাহুবল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আয়েশা হকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বাহুবলের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার বেহাল অবস্থা। এর থেকে উত্তরণের জন্য আমি নিয়মিত স্কুলগুলো পরিদর্শন করছি। গতকাল আমার কাছে সংবাদ আসে নিজগাঁও স্কুলের শিক্ষকরা দুপুর ১২টায় স্কুলের শিক্ষার্থীদের ছুটি দিয়ে বাড়িতে চলে গেছেন। আমি স্কুলে গিয়ে স্কুল তালাবদ্ধ পাই। পরে খবর দিয়ে বাড়ি থেকে স্কুলের ২ জন শিক্ষক ও ৪০/৪৫ জন শিক্ষার্থীকে নিয়ে আসি। আমিসহ শিক্ষকরা বেলা ৩টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ক্লাস করান।
ইউএনও আয়েশা হক আরো জানান, গত ১০ জুলাই সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার রাজাপুর স্কুলে গিয়ে দেখেন কোন শিক্ষক স্কুলে আসেননি। এ স্কুলে ৫জন শিক্ষক রয়েছেন। ইউএনও স্কুলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর একজন শিক্ষক স্কুলে আসেন। এ স্কুলের প্রধান শিক্ষক ১ মাস ধরে স্কুলে যাননি বলেও জানিয়েছেন ইউএনও। এ স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা মিনারা বেগম ১ মাসের ছুটির দরখাস্ত করেছিলেন। কিন্তু তার ছুটি মঞ্জুর করা হয়নি। তারপর মিনারা বেগম হবিগঞ্জে বদলী হয়েছেন। তিনি বলেন, উপজেলার বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে আমার কাছে নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। আমি স্কুল শিক্ষকদের সরকারের নিয়ম অনুযায়ী ক্লাস করানোর নির্দেশ দিয়েছি। সরকারের নির্দেশ না মানলে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমি যতদিন বাহুবলে থাকবো শিক্ষার মানোন্নয়নে কাজ করবো। প্রধানমন্ত্রী গ্রামকে শহর করতে চান। আর গ্রামকে শহরে রূপান্তর করতে হলে শিক্ষার মানোন্নয়ন করতে হবে। বাহুবলে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে সকলে এগিয়ে আসবে বলে আশাবাদী ইউএনও আয়েশা হক।