সৈয়দ মোহাম্মদ ইব্রাহীম

হবিগঞ্জ শহরের শংকর বস্ত্রালয় এলাকা থেকে উদ্ধার হওয়া ৩টি গন্ধগোকুল বনবিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। রবিবার দুপুরে হবিগঞ্জ সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মোতাচ্ছিরুল ইসলাম প্রাণীগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে বনবিভাগের কাছে হস্তান্তর করেন। বন বিভাগের পক্ষে গ্রহণ করেন ফরেস্ট রেঞ্জার, বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ হবিগঞ্জের রেহান মাহমুদ।
সম্প্রতি হবিগঞ্জ শহরের শংকর বস্ত্রালয়ের কাছে ৩টি গন্ধগোকুল পাওয়া যায়। ১৪ জুন সন্ধ্যায় এলাকাবাসী একটি গন্ধগোকুলের বাচ্চা দেখতে পান। ১৫ জুন সকালে আরো একটি বাচ্চা দেখতে পান ওই এলাকার মোঃ আমিনুর রহমান তানিম। তানিম বাচ্চাগুলোকে সংরক্ষণ করেন। রাত সাড়ে ১০টায় বাচ্চাগুলোর খুঁজে মা গন্ধগোকুল এলে সেটিও কৌশলে আটক করে বাচ্চাগুলোর সাথে রাখা হয়। এসময় বাচ্চাগুলো মায়ের দুধ পান করতে থাকে। ধারণা করা হয় বাচ্চাগুলোর বয়স হবে প্রায় দেড় মাস।
এ ব্যাপারে হবিগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ফজলুল জাহিদ পাভেল এবং বিভাগীয় বন কর্মকর্তাকে অবহিত করা হয়। এ প্রেক্ষিতে প্রাণীগুলো নিতে বন বিভাগের লোকজন হবিগঞ্জ শহরে আসেন। গতকাল দুপুরে বন বিভাগের প্রতিনিধিদের কাছে প্রাণীগুলো হস্তান্তর করা হয়।
রবিবার বিকেল ৪টায় সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে বাচ্চাসহ গন্ধগোকুল অবমুক্ত করেন বন বিভাগ ও সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটি। এসময় উপস্থিত ছিলেন সহকারি বন সংরক্ষক রেহান মাহমুদ, সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আলহাজ্ব শামছুন্নাহার, সহ-সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, সাতছড়ি রেঞ্জ কর্মকর্তা মাহমুমদ, বিট কর্মকর্তা রুমি সামসুদ্দিনসহ নেতৃবৃন্দ।
প্রসঙ্গত, আইইউসিএন এই প্রাণীটিকে ইতোমধ্যে বিপন্ন প্রাণী হিসেবে চিহ্নিত করেছে। বিশেষজ্ঞদের অভিমত প্রাকৃতিক পরিবেশ বজায় রাখার জন্য এই প্রাণীগুলো সংরক্ষণ করা খুব জরুরী।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জের সেক্রেটারি তোফাজ্জল সোহেল বলেন, আস্তে আস্তে বন-জংগল উজাড় হয়ে যাওয়ায় অনেক বণ্যপ্রাণী খাবারের খুঁজে লোকালয়ে চলে আসে। এখানেই বংশ বিস্তার করছে। আমাদের নিজেদের প্রয়োজনে এদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে। প্রাকৃতিক পরিবেশে বেড়ে উঠা এসব প্রাণী বন ছেড়ে লোকালয়ে চলে আসাটা ভাবনার বিষয়। এরা আমাদের অনেক উপকার করে। এগুলো আমাদের সম্পদ। তাই এগুলোকে রক্ষার ব্যাপারে আমাদের নিজেদেরকেই উদ্যোগী হতে হবে।
এ ব্যাপারে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক প্রাণীবিদ ড. মোহাম্মদ ফারুক মিয়া বলনে, এটি বাংলাদেশের একটি বিপন্ন প্রজাতির প্রাণী। আইইউসিএন এই প্রাণীটিকে বিপন্ন ঘোষণা করেছে। প্রাণীটি সাধারণত ইঁদুর এবং মুরগি জাতীয় মৃত প্রাণী খেয়ে আমাদের পরিবেশকে রক্ষা করে। এগুলো সংরক্ষণ করা অত্যন্ত জরুরী।
প্রাণী হস্তান্তর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দৈনিক হবিগঞ্জের জনতার এক্সপ্রেস সম্পাদক মোঃ ফজলুর রহমান, হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আমেরিকার জনপ্রিয় ম্যাগাজিন দিনবদল এর প্রধান সম্পাদক সেলিম আজাদ, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জের সেক্রেটারি তোফাজ্জল সোহেল, জহুরচান বিবি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ জালাল উদ্দিন রুমি, মোঃ আমিনুর রহমান তানিম প্রমূখ।