নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ রেস্টুরেন্ট শুধুই ভোজনের স্থান হবে, এ ধারণা এখন পাল্টে যাচ্ছে। রেস্টুরেন্ট হয়ে উঠছে পরিপূর্ণ নির্মল বিনোদনের জায়গা। যেখানে হরেক রকমের খাদ্যসম্ভারের পাশাপাশি থাকবে সময় উপভোগের আরো নানা উপাদান। এরকম ভাবনা থেকেই যুক্তরাজ্যের বার্মিংহামে রেস্টুরেন্ট ব্যবসা শুরু করেন হবিগঞ্জের তরুণ নজমুল সায়াদাত তোহেল। বার্মিংহাম শহরে খোলেন রেস্টুরেন্ট। কিন্তু তোহেলের মন টানছিল বাংলাদেশের মাটি। পরিকল্পনা শেয়ার করেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের সঙ্গে। পরিকল্পনা অনুযায়ি ঢাকার মিরপুরে খোলা হয় ‘সাকিব ৭৫’ নামে একটি অত্যাধুনিক রেস্টুরেন্ট। সঙ্গে যুক্ত থাকেন আরেক তারকা খেলোয়াড়, বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের ওপেনার ইমরুল কায়েস। এখানেও সফল হন তোহেল। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১২ জানুয়ারি ঢাকার ধানম-িতে ‘সাকিব ৭৫’ এর আরেকটি শাখা উদ্বোধন করা হয়। নজমুল সায়াদাত তোহেলের পরিকল্পনায় এ রেস্টুরেন্টকে আরো আধুনিক ও আকর্ষণীয় করতে ঢেলে সাজানো হয়। একে রেস্টুরেন্ট না বলে সাকিবময় এক ক্রিকেট রাজ্য বলা যায়।
রেস্টুরেন্টের থরে থরে রয়েছে সাবিক আল হাসানের ক্রিকেটের স্মরণীয় মুহূর্তগুলোর ছবি। ব্যাট-বলসহ ক্রিকেট খেলার সরঞ্জামাদি দিয়ে সাজানো হয়েছে পুরো রেস্টুরেন্টটি। সবচেয়ে আকর্ষণীয় হল- ইনডোর ক্রিকেট একাডেমি। এখানে সত্যিকার খেলার মাঠের আমেজে রয়েছে ক্রিকেট খেলার ব্যবস্থা। সুযোগ আছে সাকিব আল হাসানের বলে ছয়-চার পেটানোরও। এছাড়াও কেউ চাইলে কিনতে পারবেন সাকিবের স্বাক্ষর করা ব্যাট-বল। ভোজনরসিকদের বাড়তি আনন্দ দেয়ার পাশাপাশি এরকম আয়োজন বাংলাদেশে প্রথম বলে জানান নজমুল সায়াদাত তোহেল।
ধানম-ির সাত মসজিদ রোডের রূপায়ন জেড আর প্লাজা ভবনের ৯ম তলায় ‘সাকিব ৭৫’ রেস্টুরেন্টটি উদ্বোধন হয় ১২ জানুয়ারি। এ উপলক্ষে রেস্টুরেন্টে আয়োজন করা হয় জমকালো অনুষ্ঠানের। সাকিব আল হাসান বোলিং মেশিনের মাধ্যমে নিজের বলে নিজে ব্যাটিং করে রেস্টুরেন্টের উদ্বোধন করেন। এসময় ইমরুল কায়েস, সাব্বির হাসানসহ জাতীয় ক্রিকেট দলের খেলোয়াড় উপস্থিত ছিলেন।
উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন নজমুল সায়াদাত তোহেল বলেন, ‘সাকিব আল হাসান একজন বিশ্বজয়ী অলরাউন্ডার। তাঁকে ব্যবসায়িক পার্টনার হিসেবে পাওয়া অনেক সৌভাগ্যের ব্যাপার। ‘সাকিব ৭৫’ রেস্টুরেন্টটি সকলের কথা মাথায় রেখেই করা হয়েছে। যাতে করে সবাই রেস্টুরেন্টে এসে আনন্দময় মুহূর্ত কাটাতে পারেন, এ ভাবনা থেকেই এত আয়োজন।’
রেস্টুরেন্টে খাবারের ধরণ কেমন থাকবে, এমন প্রশ্নের উত্তরে সায়াদাত তোহেল বলেন, ‘স্বাস্থ্যসম্মত খাবার পরিবেশনই আমাদের প্রধান অঙ্গীকার। খাবারের তালিকায় থাকবে থাই, চাইনিজ, ইন্ডিয়ান ফিউশন, ম্যাক্সিকান খাদ্যের সমাহার। আর সাকিবের জার্সি নাম্বারের বিষয়টিকে বিবেচনা করে কফির মূল্য রাখা হয়েছে ‘৭৫‘ টাকা।’
উদ্বোধন উপলক্ষে সম্প্রতি দেশে আসেন নজমুল সায়াদাত তোহেল। ঘুরে যান নিজ শহর হবিগঞ্জেও। এসময় কথা হয় তোহেলের সাথে। তিনি জানান, নানা দেশের বিভিন্ন ধরণের খাবারের প্রতি তাঁর আগ্রহ রয়েছে। এ থেকেই মূলত রেস্টুরেন্ট ব্যবসার প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠা তার। যে কারণে পেশায় একজন স্টক ব্রোকার ও ফরেন এক্সচেঞ্জার হয়েও যুক্ত হয়েছেন রেস্টুরেন্ট ব্যবসার সাথে। বার্মিংহামে গড়ে তুলেছেন শের-ই-পাঞ্জাব ও ফ্লেভার-ই-আজম নামে দু’টি রেস্টুরেন্ট। আর প্রতিনিয়ত পরিকল্পনা কষতে থাকেন, কিভাবে রেস্টুরেন্টকে আরো আধুনিকীকরণ করা যায়।
সফল এই তরুণ উদ্যোক্তা নজমুল সায়াদাত তোহেলের জন্ম ও বেড়ে ওঠা হবিগঞ্জ শহরে। সিনেমা হল রোডে তার পৈত্রিক নিবাস। বাবা হবিগঞ্জের স্বনামধন্য আইনজীবী অ্যাডভোকেট আজমান আলী। হবিগঞ্জ হাইস্কুল থেকে এসএসসি, ঢাকার স্ট্যামফোর্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে ভর্তি হন ইস্ট-ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে ম্যানেজম্যান্ট ও ফিন্যান্স বিষয়ে বিবিএ পাশ করেন তোহেল। তারপর উচ্চশিক্ষা গ্রহণে ২০০৬ সালের শেষের দিকে যুক্তরাজ্যে চলে যান তিনি। সেখানকার বার্মিংহাম সিটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ম্যানেজম্যান্ট ও ফিন্যান্সে এমএসসি সম্পন্ন করেন। তিনি চার্টার্ড একাউন্টের ১ম অংশ উত্তীর্ণ হয়েছেন। বর্তমানে যুক্তরাজ্যের বার্মিংহামে স্ত্রী, ১ ছেলে ও ১ মেয়েকে নিয়ে বসবাস করছেন তোহেল।