আবুল কালাম আজাদ, চুনারুঘাট থেকে ॥ চার ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট সুজনের চাকুরি করার খুবই ইচ্ছা ছিল। বড় ৩ ভাই প্রবাসে থাকলেও তাই সে প্রবাসে যেতে চায়নি। আকড়ে ধরে রেখেছিল পরিবারকে। লেখাপড়া শেষ করে একটি ভাল চাকুরি করার ইচ্ছায় সোমবার রাতে সে উদয়ন এক্সপ্রেস যোগে চট্টগ্রাম যাচ্ছিল। কিন্তু কে জানতো এ যাওয়াই তার শেষ যাওয়া। বিবাড়িয়ার মন্দবাগ স্টেশনে ট্রেন দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়ে কফিনবন্দি হয়ে মঙ্গলবার রাতে নিজ বাড়ি হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার পীরেরগাঁও গ্রামে ফিরেছে সুজন। মঙ্গলবার রাতেই তার জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। এতে স্থানীয় চেয়ারম্যানসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। প্রয়াতের লাশ বাড়িতে পৌছলে মা বোন ও আত্মীয় স্বজনদের কান্নায় আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠে। সুজন ছিল হাস্যোজ্জল ও সবার প্রিয়। এলাকার মানুষের সাথে তার চলাফেরা আর আচার আচরণই তাকে সকলের প্রিয় করে তুলেছিল।
হবিগঞ্জ সরকারি বৃন্দাবন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে সে ¯œাতক পাস করে চাকুরির সন্ধান করছিল। পাশাপাশি সে হবিগঞ্জে মুহুরীর কাজও করছিল। সুজনরা ছিল ৪ ভাই ২ বোন। বড় সকল ভাই প্রবাসী। সুজন ছিল সবার ছোট এবং আদরের। পিতা মারা গেছেন দেড় বছর আগে। এর পর থেকে সে-ই পরিবারের হাল ধরেছিল। দেখাশুনা করতো সকল কাজ।
উপজেলার পীরেরগাঁও গ্রামের সুজন একটি চাকুরির ইন্টারভিউ দেওয়ার কথা বলে সোমবার রাত ৮টার দিকে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। পরে চুনারুঘাট শহরে এসে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে রাত সাড়ে ১০টায় চুনারুঘাট থেকে শায়েস্তাগঞ্জ রেল স্টেশনের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয় বলে তার বন্ধুরা জানায়। এ সময় তার সাথে তার এক বন্ধু রাজনও চট্টগ্রাম যায়। রাত ১২টায় উদয়ন এক্সপ্রেসে চট্টগ্রামে যাত্রা করে পৌনে ৩টার দিকে কসবার মন্দবাগ স্টেশনে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় সে মারা যায়। সকাল সাড়ে ৯টায় চুনারুঘাট থানা পুলিশ সুজন নিহতের খবরটি ফোনে বাড়িতে জানায়। দুর্ঘটনায় সুজনের বন্ধু রাজন গুরুতর আহত হয়। তাকে বিবাড়িয়া হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ব্যাপারে সুজনের চাচা বাচ্চু মিয়া জানান, সুজন একটি চাকুরির ইন্টারভিউ দিতে রাতে আমাকে বলে যায়। তবে কি চাকুরি সে বিষয়ে কিছু জানায়নি। সুজন সুস্থ অবস্থায় গিয়ে ফিরে আসলো লাশ হয়ে।