স্টাফ রিপোর্টার ॥ ট্রেনে প্রকাশ্যে ধূমপান এবং নিষেধ করার জন্য চিকিৎসক মো. রাফিউল সিরাজকে হেনস্থা করায় ক্ষমা চেয়েছেন মৌলভীবাজার সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুনজিত কুমার চন্দ। ভবিষ্যতে এ রকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে সে ব্যাপারে তিনি সতর্ক থাকবেন বলে সবার কাছে শপথ নিয়েছেন। গত শনিবার সকালে সুনজিত কুমার তার কর্মস্থল মৌলভীবাজার থেকে কিশোরগঞ্জের প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ মেডিকেল কলেজে যান। সেখানে গিয়ে তিনি চিকিৎসক রাফিউল সিরাজের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন।
প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ আ ন ম নৌশাদ খান বলেন, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। অপরাধের জন্য অপরাধীকে কখনো না কখনো অনুতপ্ত হতে হয়। অথবা শাস্তি পেতেই হয়। এ ঘটনায় চিকিৎসককে লাঞ্ছিত করা ও ক্রসফায়ারের হুমকি দেওয়া শায়েস্তাগঞ্জ থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) টুটুল এখনো অনুতপ্ত হননি। তিনি ক্ষমাও চাইতে আসেননি। তাই তারা ওই এএসআইয়ের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেবেন।
প্রসঙ্গত, ২১ জুন কিশোরগঞ্জ থেকে জয়ন্তিকা ট্রেনে করে সিলেট যাচ্ছিলেন ডা. রাফিউল সিরাজ। এ সময় সহকারী ভূমি কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুনজিৎ কুমার চন্দ ট্রেনের ভেতর ধূমপান করলে প্রতিবাদ করেন সিরাজ। পরের স্টেশনে ম্যাজিস্ট্রেট পুলিশ ডেকে ট্রেন থেকে টেনেহিঁচড়ে নামিয়ে ডা. সিরাজকে মারধর করা হয়।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ডা. রফিউল সিরাজ বলেন, ২১ জুন বিকেল ৫টায় মনতলা স্টেশনে ট্রেন থামতেই জ্বলন্ত সিগারেট নিয়ে ট্রেনে ওঠে ফুঁকতে থাকেন এক ব্যক্তি। প্রচন্ড গরমের মধ্যে সিগারেটের ধোঁয়া অসহনীয় লাগছিল। একপর্যায়ে বিরক্ত হয়ে ধূমপান না করার জন্য তাকে অনুরোধ করলাম। তিনি তো কথা শুনলেনই না বরং উদ্যত হয়ে আমাদের বললেন, ‘তোদের বাড়ি কই, আমারে চিনস? দাঁড়া সামনের স্টেশনে তোদের সব কয়ডারে বানামু।’
ডা. রফিউল সিরাজ আরও বলেন, তারপর যা হলো তার সঙ্গে সেই দৃশ্যগুলো এখনও ভুলতে পারছি না। ট্রেন শায়েস্তাগঞ্জ স্টেশনে থামলে হঠাৎ ওই লোকটার ডাকে ২০-২৫ জন ট্রেনে উঠে আমাদের কলার ধরে টেনেহিঁচড়ে নামিয়ে মারধর করে। এ সময় আমার কামরার অনেকেই পালিয়ে যায়। আমার সঙ্গে যারা ছিল তাদের ওই ম্যাজিস্ট্রেটের পায়ে ধরায়। আমি তার পা ধরতে রাজি না হওয়ায় আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। নিজেকে মহামান্য রাষ্ট্রপতির প্রতিষ্ঠানের একজন ডাক্তার বলে পরিচয় দেয়ার পরও ওই ম্যাজিস্ট্রেট তাচ্ছিল্যের সঙ্গে বলতে লাগলেন, কিসের মহামান্য? ওইখানে টুটুল নামে পুলিশের এক এসআই আমাকে জেলে ঢোকানো এবং ক্রসফায়ারে হত্যার হুমকি দেয়। সেই সঙ্গে আমাকে পা ধরতে বাধ্য করেন ম্যাজিস্ট্রেট।