এসএম সুরুজ আলী
বানিয়াচঙ্গের নাগুড়া গ্রামের সিতেশ চন্দ্র দাস নিজের কোন সম্পত্তি না থাকায় হবিগঞ্জ শহরের বিভিন্ন স্থানে বাসায় বাসায় গিয়ে কাঁধে করে কলা বিক্রি করে সংসার চালিয়ে আসছেন। প্রতিদিন তিনি দুই থেকে তিন ছরি কলা বিক্রি করতে পারতেন। ওই দুই ছরি কলা বিক্রি করে তিনি যে টাকা উপার্জন করতেন, সেই টাকা দিয়ে তার সংসার চলে। এ অবস্থায়ও তিনি ৩ ছেলেকে লেখাপড়া করিয়ে আসছেন। এতে অনেক সময় সন্তানদের স্কুলের বেতন, প্রাইভেটের বেতন দিতে হিমশিম খেতে হতো। তবে তিনি সব সময়ই স্বপ্ন দেখতে তার ছেলেরা লেখাপড়া করে একদিন মানুষ হবে এবং সরকারি চাকুরী করবে। আর সরকারি চাকুরী করলে পরিবারে স্বচ্ছলতা ফিরে আসবে। এমন স্বপ্ন দেখলেও মাঝে মধ্যে তিনি চিন্তা করতেন, বর্তমানে সমাজে যে অবস্থা চালু রয়েছে, সেখানে চাকুরী পেতে গেলেই ঘুষ দিতে হয়। তিনি কি করে টাকা দিবেন। ঘুষের টাকা দিতে না পারলে চাকুরী হবে না। এসব চিন্তা তার মাথায় আসতো। এর মধ্যে তার বড় ছেলে সৈকত চন্দ্র দাস এসএসসি পাস করে। সৈকত সরকারি চাকুরী করে বাবার কাঁধ থেকে কলার ছরির বার সরাবেন। এমন স্বপ্ন দেখেন। এর মধ্যে স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকার মাধ্যমে পুলিশ ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল পদে নিয়োগের সংবাদ জানতে পারেন সৈকত। তার বাবাকে না জানিয়ে ১শ’ টাকা খরচ করে কনস্টেবল পদে চাকুরীর জন্য আবেদন করেন। শারীরিকভাবে বাছাই পর্বে তিনি উত্তীর্ণ হন। লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেও কৃতকার্য হন সৈকত। মনস্তাত্ত্বিক ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেও উত্তীর্ণ হন সৈকত। সবশেষ গত রবিবার চুড়ান্তভাবে মনোনীত হয়ে হবিগঞ্জ পুলিশ লাইনে যাবার ডাক পান সৈকত। সাথে তার বাবা সিতেশ চন্দ্র দাশকে নিয়ে যান। পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা (বিপিএম-পিপিএম) প্রেস ব্রিফিংয়ের আয়োজন করেন। প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার সৈকতের বাবা সিতেশ চন্দ্র দাসকে সাংবাদিকদের সমানে হাজির করেন। এ সময় সিতেশ চন্দ্র দাস কান্নাজনিত কন্ঠে তার কলা বিক্রির বর্ণনা দেন। তার করুণ অবস্থার কথা শোনে পুলিশ সুপারসহ উপস্থিত সাংবাদিকরা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। সিতেশ চন্দ্র দাস বলেন- শহরের বিভিন্ন স্থানে কলা বিক্রি করে খুব কষ্ট করে সংসার চালাতেন তিনি। এর মধ্যে ছেলেমেয়েকে লেখাপড়া করাচ্ছেন। তার ছেলের চাকুরীর জন্য কারও কাছে তদবির করতে হয়নি। ১শ’ টাকা খরচের মাধ্যমে তার ছেলে সৈকতের চাকুরী হয়েছে। এজন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইজিপি, ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি, পুলিশ সুপারসহ নিয়োগ প্রক্রিয়ায় যারা ছিলেন তাদের কাছে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। নিয়োগপ্রাপ্ত সৈকত চন্দ্র দাস সাংবাদিকদের জানান, যেহেতু দারিদ্র্যতার মধ্যে মেধার ভিত্তিতে চাকুরী পেয়েছি সেজন্য দেশের সেবায় আন্তরিকভাবে কাজ করবো। এ জন্য তিনি সকলের সহযোগিতা ও আশির্বাদ কামনা করেন।