সিলেটের গোলাপগঞ্জের দীপক দাস চোরচক্রের গডফাদার। তাদের সঙ্গী হবিগঞ্জের উমেদনগরের আলমগীর হোসেন হবিগঞ্জসহ সিলেট অঞ্চল থেকে মোটর সাইকেল চুরি করে খুলনা অঞ্চলে নিয়ে যায় ॥ চক্রের ৩ জনকে আটকের পর বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য ॥ তিন মাসে হবিগঞ্জ পুলিশ ৪২টি চোরাই মোটর সাইকেল উদ্ধার ও ৪৫ জনকে গ্রেফতার করেছে

এসএম সুরুজ আলী ॥ হবিগঞ্জ শহর থেকে ঘন ঘন মোটর সাইকেল চুরির রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। চোরচক্রের গডফাদারসহ ৩ জনকে আটকের পর এ রহস্য উদঘাটিত হয়। হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা জানান, চোর চক্রের সদস্যরা হবিগঞ্জ থেকে চুরি করা মোটর সাইকেলগুলো খুলনায় নিয়ে বিক্রি করতো এবং খুলনা থেকে চুরি করা মোটর সাইকেল হবিগঞ্জে এনে বিক্রি করতো। পুলিশের কাছে ধরা পড়ার পর যারা এসব তথ্য দিয়েছে তারা হলো- খুলনা জেলার সোনাডাঙ্গা উপজেলার বানিয়াখামার গ্রামের ইমদাদুল ইসলামের ছেলে সাইফুল ইসলাম পিয়াল, হবিগঞ্জ শহরের উমেদনগরের আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে আলমগীর হোসেন ও সিলেট জেলার গোলাপগঞ্জ উপজেলার গোলাপনগর এলাকার রায় মনি দাসের ছেলে দীপক দাস। সোমবার বিকেলে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা।
পুলিশ সুপার জানান, হবিগঞ্জে গত ৩ মাসে ৪২টি চোরাই মোটর সাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে ৪৫ জনকে। আর অবৈধ মোটর সাইকেলের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছে ৫৮৭টি। সবশেষ সোমবার আটক করা হয় ওই ৩ জনকে। তাদের কাছ থেকে খুলনা মেট্রোপলিটন ট্রাফিক পুলিশের অফিসিয়াল সীল, সাতক্ষীরা মোট্রোপলিটন পুলিশের লিখিত সীল ও ভুয়া কেসস্লীপ উদ্ধার করা হয়। এদের গডফাদার দীপক দাস। সে চোরাই মোটর সাইকেল ক্রয়বিক্রয় করে। আর পিয়াল খুলনা অঞ্চল থেকে মোটর সাইকেল ক্রয় করে হবিগঞ্জে এনে বিক্রি করে এবং আলমগীর হবিগঞ্জসহ সিলেট অঞ্চল থেকে মোটর সাইকেল চুরি করে খুলনা অঞ্চলে নিয়ে বিক্রি করে। একে অপরের সহায়তায় দীর্ঘদিন ধরে তারা এ ব্যবসা করে আসছে। কখনও তারা ট্রাফিক পুলিশ সেজে অভিযানের নাম করে মোটর সাইকেল চুরি করতো। আটককৃতরা স্বীকার করেছে তারা হবিগঞ্জ থেকে ১৪টি মোটর সাইকেল চুরি করে খুলনায় নিয়ে বিক্রি করেছে এবং খুলনা থেকে ১৮টি মোটর সাইকেল চুরি হবিগঞ্জে এনে বিক্রি করেছে। এর মধ্যে ৭টি সাইকেল বাহুবলে, ৭টি বানিয়াচঙ্গে, চুনারুঘাটে ৪টি বিক্রি করা হয়েছে।
পুলিশ সুপার বলেন- গত কয়েকদিন পূর্বে হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামন থেকে হবিগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান আউয়ালের মোটর সাইকেলটি চুরি হয়। এ প্রেক্ষিতে আমরা তাৎক্ষণিক জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সিসি ক্যামেরা থেকে ছবি সংগ্রহ করে চোরকে সনাক্ত করি। গত ২ জুলাই বিকালে শহরের বেবীস্ট্যান্ড এলাকা থেকে বাহুবলের লালাটলা গ্রামের সোনা মিয়ার ছেলে ইউসুফ হোসেন মোহনকে চোর হিসেবে সনাক্ত করে গ্রেফতার করা হয়। পরবর্তীতে তার তথ্য মতে ডিবি পুলিশের একটি টিম অভিযান পরিচালনা করে সিলেট জেলার কোম্পানীগঞ্জ থানা এলাকা থেকে সিলেট জেলার মোটর সাইকেল চোর সিন্ডিকেটের মূলহোতা ও মোটর সাইকেল চোরের বিক্রয়ের গডফাদার দীপক দাসকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিকভাবে গ্রেফতারকৃতরা হবিগঞ্জ শহরের জজকোর্ট এলাকা থেকে কয়েকটি মোটর সাইকেল চুরির কথা স্বীকার করে। এই দলের অন্যান্য চোরদের গ্রেফতারের চেষ্টাসহ চোরাই মোটর সাইকেল উদ্ধারে পুলিশের অব্যাহত অভিযান চলছে বলে জানান পুলিশ সুপার। তিনি বলেন, সম্প্রতি মোটর সাইকেল চুরি বৃদ্ধি পাওয়ায় পুলিশ ম্যারাথন অভিযানে নামে। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে। ইতোমধ্যে চুরি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে।