মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোতে সরকারের ॥ পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ চাইলেন হবিগঞ্জের কিন্ডারগার্টেন মালিকরা

মঈন উদ্দিন আহমেদ ॥ মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতে কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোতে সরকারের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ চাইলেন হবিগঞ্জের কিন্ডারগার্টেন মালিকরা। সরকারের নিয়ন্ত্রণ না থাকায় যেখানে সেখানে কিন্ডারগার্টেন গড়ে উঠছে। কিন্তু বাড়ছে না শিক্ষার মান। ফলে অভিভাবকদের মাঝে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
এ প্রসঙ্গে হবিগঞ্জে কিন্ডারগার্টেন স্কুল প্রতিষ্ঠার স্বপ্নদ্রষ্টা শাইনিং স্টার মডেল স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা সৈয়দ এবাদুল হাসান বলেন, বাংলাদেশে প্রাইভেট স্কুল রেজিস্ট্রেশন হত ১৯৬২ সালের প্রাইভেট স্কুল রেজিঃ অর্ডিনেন্স দ্বারা। আমার জানা মতে প্রথম ২০০১ সালে কেজি স্কুল রেজিস্ট্রেশনের জন্য ১৯৬২ সালের অর্ডিনেন্সের সংশোধনী প্রকাশ করা হয়। কিন্তু কেজি বলতেই প্রাইভেট ইংরেজি মাধ্যম স্কুল নির্দেশ করায় আইনটি ফলদায়ক হয়নি। যদিও শাইনিং স্টার স্কুলের রেজিস্ট্রেশনের জন্য আবেদন করা হয়েছিল। পরবর্তী পর্যায়ে ২০০৭ সালের ১৯ নভেম্বর নতুন সংশোধনী প্রকাশ হয়। কিন্তু একই সমস্যা কেজি বলতেই ইংরেজি মাধ্যম। ২০১১ সালের ১৪ আগস্ট প্রথম বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যম হিসাবে কেজি স্কুলকে স্বীকৃতি দেয়া হয়। পরবর্তিতে ২০১২ সালের ২৯ আগস্ট সংশোধনী এবং ২০১২ সালের ১৩ আগস্ট গেজেট অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহনের নিমিত্তে গেজেট জারি করে শিক্ষা অফিস সমূহে পত্র প্রেরণ করা হয়। যথানিয়মে প্রতিবার শাইনিং স্টার মডেল স্কুল এবং ২০১২ সালের গেজেট অনুযায়ী শাইনিং স্টার মডেল স্কুল, গ্রীণ লীফ ল্যাবরেটরি স্কুল ও হেভেন টাচ্ স্কুল রেজিস্ট্রেশনের জন্য আবেদন করে। তার অনুলিপি জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, শিক্ষা অফিসসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে দেয়া হয়। কিন্তু আজও এর কোন ফল পাননি। ২০১৬ সালের ১৬ আগস্ট গেজেটে সংশোধনীসহ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কমিটি করে যাচাই বাছাই করে আগ্রহী কেজি স্কুল সমূহের তালিকা সুপারিশসহ কেন্দ্রে প্রেরণের জন্য শিক্ষা অফিস সমুহকে নির্দেশ দেয়া হয়। সরকারের গেজেট থাকলেও তার বাস্তবায়ন নেই, যাকে তিনি দুঃখজনক বলে উল্লেখ করেন।
তিনি জানান, শুনেছেন ২০১৭ সালে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত রেজিস্ট্রেশনের নিমিত্তে আরো একটি গেজেট প্রকাশিত হয়েছে। তিনি ব্যক্তিগতভাবে কিন্ডারগার্টেন স্কুলে সরকারের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ চান। তিনি মনে করেন এতে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত হবে। এছাড়া ডিসি, এসপির সমন্বয়ে পরিচালনা কমিটি গঠনের কথা থাকলেও তার বাস্তবে তা নেই। এটি হলে অবশ্যই তা শিক্ষা ব্যবস্থায় সুফল বয়ে আনত বলে তিনি মনে করেন। এছাড়া তিনি ট্রেইনার শিক্ষকের মাধ্যমে শিক্ষার মানোন্নয়নে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেন।
মাতৃছায়া কেজি এন্ড হাই স্কুলের পরিচালক বন্ধু মঙ্গল রায় বলেন, কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলো রেজিস্ট্রেশনভূক্ত করতে সরকার ৩ বার গেজেট প্রকাশ করে। গেজেট প্রকাশের পর আমি যথারীতি আবেদনও করি। কিন্তু সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে আজও এ ব্যাপারে কিছু জানানো হয়নি। মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতে অবিলম্বে তিনি গেজেট বাস্তবায়নের দাবি জানান।
হেভেন টাচ্ স্কুলের পরিচালক নীহার রঞ্জন সরকার বলেন, কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোকে নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকার রেজিস্ট্রেশনভূক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়। যথারীতি গেজেটও প্রকাশ করা হয়। গেজেট অনুযায়ী তিনি সিলেট বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে আবেদন করেন। কিন্তু কোন ফল পাননি। যোগাযোগ করা হলে কর্তৃপক্ষ জানায়, পরে জানানো হবে। এছাড়া আবেদনের কোন রিসিভ কপিও তাদেরকে দেয়া হয় না। কবে স্কুল ভিজিট করা হবে তাও বলেনি তারা। শুধু বলে পরে জানানো হবে। কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলো রেজিস্ট্রেশনভূক্ত করা হলে সরকারের নিয়ন্ত্রণে আসতো। এতে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত হতো বলে তিনি মনে করেন।
ব্লু বার্ড প্রি-ক্যাডেট স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মোঃ নাছির উদ্দিন বলেন, মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে প্রতিটি স্কুলকে একটি নিয়মনীতির অধিনে নিয়ে আসা উচিত। তাছাড়া রেজিস্ট্রেশনকৃত প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়মিত মনিটরিং করতে হবে। প্রশাসনিকভাবে শিক্ষা নীতি বাস্তবায়ন করতে হবে। তবেই গুণগত ও মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব।
এম. আলী স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মোঃ মোছাদ্দর আলী খান বলেন, কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোকে একটি নীতিমালার মধ্যে আনা উচিত। এটি পরিচালনায় সরকারের দিক নির্দেশনা থাকা উচিত। আজকাল দেখা যায় যে যেখানে মন চায় প্রতিষ্ঠান করছেন। যেখানে সেখানে ২/৩টি রুম ভাড়া নিয়ে স্কুল খুলে ফেলছেন। সেখানে বাচ্চাদের খেলার জায়গা নেই, হাটা-চলার জায়গা নেই। এভাবে বদ্ধ ঘরে শিশুদের শিক্ষা গ্রহণ করে মেধার বিকাশ হয় না। তাই কিন্ডারগার্টেন করতে হলে এর সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকা উচিত।