ভোট না কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে কমিটি?

আসছেন ওবায়দুল কাদের নুরুল ইসলাম নাহিদ ও মাহবুবুল আলম হানিফ ॥ প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলীও আছেন অতিথি তালিকায়
১০ হাজার নেতাকর্মীর জন্য মধ্যাহ্ন ভোজের আয়োজন ॥ ৮ পদে প্রার্থী হয়েছেন ৩০ জন

এসএম সুরুজ আলী ॥ দীর্ঘ ৬ বছর পর আজ ১১ ডিসেম্বর বুধবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন ও কাউন্সিল। সকাল ১০টায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয় প্রাঙ্গণ নিমতলায় সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন উদ্বোধন করা হবে। সম্মেলন শেষে হবিগঞ্জ জেলা পরিষদ অডিটরিয়ামে ২য় অধিবেশনে কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। কাউন্সিলে ৩৪৮ জন ভোটার গোপন ব্যালটে আগামী দিনের নেতা নির্বাচন করবেন এমন প্রস্তুতি নিয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি। এদিকে সম্মেলনকে ঘিরে জেলা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে চলছে উৎসবের আমেজ। ব্যানার ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে পুরো শহর। নৌকার আদলে মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। সম্মেলনে বিভিন্ন উপজেলা থেকে আগত কাউন্সিলরদের জন্য মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন চলছে। কয়েক হাজার নেতাকর্মীর জন্য করা হবে মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন। গতকাল সকালে সম্মেলন স্থল পরিদর্শন করেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমপি অ্যাডভোকেট মোঃ আবু জাহির, সাধারণ সম্পাদক এমপি অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ খানসহ জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। রাতেও তারা সম্মেলনস্থল পরিদর্শনে যান। সম্মেলনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী থেকে শুরু করে সবার মুখে মুখে এখন সম্মেলন নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। কাদের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে জেলা আওয়ামী লীগের দায়িত্ব এ নিয়ে চলছে চুলছেড়া বিশ্লেষণ।
এবারের নেতৃত্ব কি ইলেকশনে না কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে হবে তা নিয়েও আলোচনার শেষ নেই। তবে যাই হোক ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করা হবে বলে প্রত্যাশা করেন তৃণমূল নেতাকর্মীরা। এদিকে গতকাল সন্ধ্যায় সম্মেলনের স্থানে গিয়ে দেখা গেছে প্যান্ডেলের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতিক নৌকার আদলে তৈরি হয়েছে মঞ্চ। মঞ্চের পাশে জাতীয় পতাকা ও বিভিন্ন উপজেলা আওয়ামী লীগের পতাকা উত্তোলন স্থান করা হয়েছে। আর প্যান্ডেলটি ২টি অংশে ভাগ করা হয়েছে। এক অংশে জেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অংশগ্রহন করবেন। অপর অংশে মহিলালীগের নেতবৃন্দ অংশগ্রহন করবেন।
জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সাজ-সজ্জা প্রচার ও প্যান্ডেল উপ-কমিটির আহ্বায়ক মুকুল আচার্য্য জানান, সম্মেলনকে সফল করার জন্য আমরা উপজেলাগুলোতে বর্ধিত সভা ও সম্মেলন করেছি। সম্মেলন সফল করার জন্য আমরা সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। মঞ্চের সামনে প্রথম সারির মধ্য স্থানে প্রধান অতিথি বসবেন। প্রধান অতিথির পাশে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বসবেন। এরপর বিশেষ অতিথিবৃন্দ দু’দিকে বসবেন। সব মিলিয়ে মঞ্চে ৫০জন নেতার বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আর প্যান্ডেলে ৫হাজার চেয়ারের ব্যবস্থা রয়েছে। যারা সম্মেলনে আসবেন তাদের জন্য খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। তিনি আশাবাদী- প্রতিবারের ন্যায় এবারও কাউন্সিল হবে। আর কাউন্সিলে আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতারা জয়ের মালা পরবেন।
সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী জানান, কাউন্সিল আয়োজনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। এবার কাউন্সিলে মোট ৩০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে সভাপতি পদে ৬ জন, সাধারণ সম্পাদক পদে ৮ জন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে ১২ জন ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ৬ প্রার্থী রয়েছেন। তিনি বলেন-কাউন্সিলের জন্য আমরা সব ধরণের ব্যবস্থা করে রেখেছি। আশা করি প্রতিবারের ন্যায় এবারও জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি কাউন্সিলরদের ভোটেই হবে। এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমপি আব্দুল মজিদ খান বলেন- আমাদের কাউন্সিলের ধারাবাহিকতা রয়েছে। আশা করি এবারও কাউন্সিলের মাধ্যমে জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন করা হবে। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমপি মোঃ আবু জাহির বলেন- হবিগঞ্জে আওয়ামী লীগের একটি রেওয়াজ রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৩ সালে আওয়ামী লীগের একটি বিশাল সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ৬ বছর পর আজ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই কাউন্সিলকে সামনে রেখে ওয়ার্ড থেকে ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা আওয়ামী লীগ অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসাহ উদ্দিপনা সৃষ্টি হয়েছে। সম্মেলনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। আমরা বিশাল প্যান্ডেল ও মঞ্চ তৈরি করেছি। কাউন্সিলে বিভিন্ন উপজেলার নেতাকর্মীরা আসবেন। আমাদের টার্গেট আমরা ১০হাজার নেতাকর্মীকে আপ্যায়ন করাবো। তিনি বলেন- বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সুসংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ। জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদকসহ অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে আমরা দল পরিচালনা করে আসছি। আগামীতেও সেইভাবে দল পরিচালনা করবো।
সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বিশেষ অতিথি থাকছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নূরুল ইসলাম নাহিদ। প্রধান বক্তা যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ এমপি। এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিজবাহ উদ্দিন সিরাজ, কেন্দ্রীয় সদস্য র আ ম উবায়দুল মোক্তাদির চৌধুরী এমপি, কেন্দ্রীয় সদস্য বদরউদ্দিন আহমেদ কামরান, কেন্দ্রীয় সদস্য অধ্যাপক রফিকুর রহমান, বেসামরিক বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মাহবুব আলী এমপি, হবিগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য গাজী মোহাম্মদ শাহনওয়াজ মিলাদ।
আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা জানান, কাউন্সিলকে ঘিরে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ‘সিলেকশন না ইলেকশন’। তবে যাই হোক ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন হবে এটা নিশ্চিত। সম্মেলনে জেলার ১১টি সাংগঠনিক ইউনিটের ৩৪৮ জন কউন্সিলর ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন।