শহীদ চৌধুরী বললেন- হবিগঞ্জে আওয়ামী লীগে ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচনের ঐতিহ্য অনেক পুরনো। তাই এবারও ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে ॥ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ ৮টি পদে ২৯ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন
এসএম সুরুজ আলী ॥ আগামী ১১ ডিসেম্বর হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন। এই সম্মেলনকে সফল করার লক্ষ্যে সংবাদ সম্মেলন করেছে হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ। সোমবার দুপুরে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মোঃ আবু জাহির এমপি, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ খান এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন প্রস্তুতি ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী।
সংবাদ সম্মেলনে অ্যাডভোকেট মো. আবু জাহির বলেন কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রথমে সমঝোতার মাধ্যমে কমিটি গঠনের আলোচনা করা হয়। সমঝোতা হলে কাউন্সিল হয় না। সে ক্ষেত্রে নেত্রীর নির্দেশে কমিটি ঘোষণা করে যান কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। তবে ১৯৯৩ সাল থেকে হবিগঞ্জ জেলায় আওয়ামী লীগে কাউন্সিলের মাধ্যমে নেতা নির্বাচন হয়ে আসছে। এবার আশা করি তার ব্যতিক্রম হবে না। এবার ১০টি ইউনিটের ৩৫৯ জন কাউন্সিলার সরাসরি ভোটে তাদের নেতা নির্বাচন করবেন। ইতোমধ্যে ১০টি ইউনিটের মধ্যে ৭টি ইউনিটের বর্ধিত সভা সম্পন্ন করা হয়েছে। আমরা সকল প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। সব সময় একে অন্যের সাথে সম্পর্ক বজায় রেখে দলীয় কাজ করে আসছি। এবারের সম্মেলন সফলভাবে সম্পন্ন করা হবে। তিনি বলেন, সম্মেলন করতে গিয়ে কোন প্রকার চাঁদা উত্তোলন করা হয়নি। তবে দলের নেতাদের যারা আগ্রহী প্রার্থী তারা নিজের ইচ্ছামত যে যত টাকা দেয়ার সামর্থ্য আছে তারাই দিচ্ছেন। সম্মেলনে যে সব প্রার্থী আবেদন করেছেন সেগুলো যাচাই-বাছাই করা হবে। যারা আবেদন করেছেন অনেকেই আওয়ামী লীগের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেননি। তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন নির্বাচন পরিচালনা কমিটি। আমাদের কাউন্সিল দেখে অন্য আরেকটি দল ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচন করেছিল। কিন্তু ঢাকাতে গিয়ে নেতা পরিবর্তন হয়ে যায়। আওয়ামী লীগ সেই রকম দল নয়। আওয়ামী লীগ কথা ও কাজে বিশ^াসী। সম্মেলনকে সামনে রেখে অনেকেই ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার চেষ্টা করছেন। তাদের কাছ থেকে সতর্ক থাকতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমপি অ্যাডভোকেট মোঃ আব্দুল মজিদ খান বলেন, আমাদের দলের নেতাকর্মীদের কাছ থেকে আমরা সম্মেলন করছি। আশা করি এটি একটি সফল সম্মেলন হবে।
১১ ডিসেম্বর সকালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনের নিমতলা প্রাঙ্গণে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। বিকেলে জেলা পরিষদ অডিটরিয়ামে কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি। প্রধান বক্তা হিসাবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ এমপি। বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন প্রেসিডিয়াম সদস্য নুরুল ইসলাম নাহিদ এমপি, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, অ্যাডভোকেট মিজবা উদ্দিন সিরাজ, কেন্দ্র্রীয় সদস্য বদরউদ্দিন আহমেদ কামরান, বিমান প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মাহবুব আলী এমপি, র আ ম উবায়দুল মোক্তাদির এমপি ও অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম।
এদিকে হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে সব সময় ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচন করা হয়। এবারও সেই ঐতিহ্য ধরে রাখতে বদ্ধ পরিকর জেলা আওয়ামী লীগ। তৃণমূলের নেতারাও চান অতীতের ন্যায় নিজেরাই ভোটের মাধ্যমে তাদের নেতা নির্বাচিত করবেন। কাউন্সিল উপলক্ষে জেলা আওয়ামী লীগের গঠিত নির্বাচন কমিশন রবিবার মনোনয়ন দাখিলের শেষ সময় পর্যন্ত ৮টি পদে ২৯ জন প্রার্থী মনোনয়ন দাখিল করেছেন। যা বিগত যে কোন কাউন্সিলের তুলনায় নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে।
নির্বাচনে সভাপতি পদে বর্তমান সভাপতি এমপি অ্যাডভোকেট মোঃ আবু জাহির, সাবেক সভাপতি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ডাঃ মুশফিক হুসেন চৌধুরী, সংরক্ষিত আসনের সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবুল হাসেম মোল্লা মাসুম ও অ্যাডভোকেট ফজলে আলী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।
সাধারণ সম্পাদক পদে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক এমপি অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ খান, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আলমগীর চৌধুরী, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট চৌধুরী আবু বকর ছিদ্দিকী ও হবিগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ মোতাচ্ছিরুল ইসলাম মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ৩টি বর্তমান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট লুৎফুর রহমান তালুকদার, আজমিরীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান মর্তুজা হাসান, অ্যাডভোকেট সালেহ উদ্দিন আহমেদ, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাকির হোসেন চৌধুরী অসীম, সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ মর্তুজ আলী, দপ্তর সম্পাদক আলমগীর খান সাদেক, প্রচার সম্পাদক অনুপ কুমার দেব মনা, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট নিলাদ্রী শেখর পুরকায়স্থ টিটু, প্রাক্তন সমাজকল্যাণ মন্ত্রী এনামুল হক মোস্তফা শহীদের পুত্র নিজামুল হক মোস্তফা শহীদ রানা, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সৈয়দ কামরুল হাসান, অ্যাডভোকেট সুমঙ্গল দাশ সুমন, অ্যাডভোকেট আতাউর রহমান, অ্যাডভোকেট আবুল আজাদ ও মাহবুবুল আলম মালু মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। সাংগঠনিক সম্পাদক ৩টি পদে বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক মশিউর রহমান শামীম, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি নুর উদ্দিন বুলবুল, জেলা পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট সুলতান মাহমুদ, বানিয়াচং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল আহাদ মিয়া, অ্যাডভোকেট আব্দুল মুতাকিম চৌধুরী খোকন ও অ্যাডভোকেট ফয়জুল বশির চৌধুরী সুজন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।
জেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও আওয়ামী লীগ জাতীয় কমিটির সদস্য শহীদ উদ্দিন চৌধুরী জানান, হবিগঞ্জে ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচনের ঐতিহ্য অনেক পুরনো। তাই হবিগঞ্জকে আওয়ামী লীগের মডেল জেলা বলা হয়। এবারও ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। তৃণমুলের নেতাকর্মীরা চায় ভোটের মাধ্যমে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে।