এলাকায় শিল্প স্থাপনের পাশাপাশি আর্থসামাজিক উন্নয়নেও ব্যাপক ভূমিকা রাখছে সায়হাম গ্রুপ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ২০১৮-১৯ কর বছরে দীর্ঘ সময় আয়কর প্রদানকারী করদাতা নির্বাচিত হওয়ায় দেশের বৃহৎ রপ্তানিমূখী শিল্পগ্রুপ সায়হাম গ্রুপের কর্ণধার আলহাজ্ব সৈয়দ মোঃ ফয়সলকে সেরা করদাতার সম্মাননা পত্র দেয়া হয়েছে। গত ১৪ নভেম্বর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকার হোটেল রেডিসনে এক অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল সৈয়দ মোঃ ফয়সলের হাতে সেরা করদাতার ক্রেস্ট এবং টেক্সকার্ড ও সম্মাননা পত্র তুলে দেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর অর্থ বিষয়ক উপদেষ্টা ডঃ এম মসিউর রহমান, অর্থ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী এম এইচ মাহমুদ ও এনবিআরের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন সহ অর্থ মন্ত্রণালয় ও রাজস্ব বোর্ডের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সৈয়দ মোঃ ফয়সল এর নেতৃত্বে সায়হাম টেক্সটাইল মিলস্ লিঃ ১৯৮১ সালে জয়েন্ট স্টক কোম্পানীতে তালিকাভূক্ত হয়। ১৯৮২ সালে বাংলাদেশ শিল্প ঋণ সংস্থার আর্থিক সহায়তায় হবিগঞ্জ জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল মাধবপুরের নয়াপাড়া গ্রামে মাত্র ৫শ জনবল নিয়ে দেশের সর্ববৃহৎ কম্পোজিট টেক্সটাইল মিলস সায়হাম টেক্সটাইল মিলস লিঃ যাত্রা শুরু করে। তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী এয়ার ভাইস মার্শাল সুলতান মাহমুদ এর উদ্বোধন করেন। যার উৎপাদিত পণ্য ছিল সার্টিং, স্যুটিং, শাড়ী, ড্রেস মেটেরিয়ালস এবং বেডশীট। পণ্যের গুনগত মানের কারণে পরবর্তীতে দেশ ও বিদেশে সায়হাম টেক্সটাইলের সুনাম ছড়িয়ে পড়ে যা এদেশের গার্মেন্টস্ শিল্পে ইধপশধিৎফ খরহশধমব হিসাবে স্থান করে নেয়। পরবর্তীতে ১৯৮৬ সালে হামিদা বস্ত্র শিল্প নামে একটি উইভিং মিল স্থাপন করা হয়। ১৯৮৮ সালে সায়হাম টেক্সটাইল মিলস্ লিঃ শেয়ার মার্কেটে তালিকাভূক্ত হয়। ১৯৯০ সালে সায়হাম স্পিনিং ইউনিট নামে রপ্তানিমূখী একটি সুতার মিল যাত্রা শুরু করে, যা ১৯৯১ সালে উৎপাদনে যায়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৯৬-৯৭ সালে খুলনার মংলায় সায়হাম সিমেন্ট ফ্যাক্টরী স্থাপন করা হয়। পরবর্তীতে ২০০২ সালে ৩৫ হাজার স্পিন্ডল বিশিষ্ট শতভাগ রপ্তানিমূখী সায়হাম কটন মিলস্ লিঃ নামে সুতার মিল স্থাপন করা হয়। উক্ত মিলের সুতার গুণগত মানের সুনাম দেশ ও বিদেশে ছড়িয়ে পড়ে এবং বিপুল চাহিদার কারণে ২০০৬ সালে ৩১ হাজার স্পিন্ডল বিশিষ্ট শতভাগ রপ্তানিমূখী ফয়সল স্পিনিং মিলস্ লিঃ নামে আরও একটি সুতার মিল স্থাপন করা হয়। সৈয়দ মোঃ ফয়সল ২০০৯ সালে শতভাগ রপ্তানিমূখী সায়হাম নীট কম্পোজিট লিঃ নামে আরও একটি নতুন মিল চালু করেন। যা পরবর্তীতে টঝএইঈ এৎববহ চৎড়লবপঃ হিসাবে স্বীকৃতি পায়। যার উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় তিন মিলিয়ন পিস। ২০১১ সালে সায়হাম টেক্সটাইল মিলস্ লিঃ জরমযঃ ঝযধৎব এর মাধ্যমে ৩০ হাজার ৯৬০ স্পিন্ডল বিশিষ্ট মিলাঞ্জ ইউনিট নামে শতভাগ রপ্তানিমূখী নতুন সুতার মিলের যাত্রা শুরু করে এবং একই বছরে সায়হাম কটন মিলস্ লিঃ ওচঙ এর মাধ্যমে ৩৩ হাজার স্পিন্ডল বিশিষ্ট সায়হাম কটন মিলস্ লিঃ (ইউনিট-২) শতভাগ রপ্তানিমূখী আরও একটি সুতার মিলের যাত্রা শুরু হয়। ২০১৪ সালে রাজধানীর গুলশান-১ এ পরিবেশ বান্ধব ১৪ তলা ও ৩টি বেজমেন্ট বিশিষ্ট “সায়হাম টাওয়ার” ভবন নির্মাণ শুরু হয় যা ২০১৭ সালে সম্পন্ন হয়। পরিবেশ বান্ধব এ টাওয়ারটি ‘কোর এন্ড শেল’ ক্যাটাগরিতে ‘লীড এনসি ভিথ্রি” প্লাটিনাম’ স্বীকৃতি দিয়েছে ইউএসজিবিসি, যা বাংলাদেশে প্রথম।
ঐঝইঈ ব্যাংকের অর্থায়নে ফয়সল স্পিনিং মিলস্ লিঃ (ইউনিট-২) ২০১৮ সালে ৪৩ হাজার ২শ স্পিন্ডেল বিশিষ্ট নতুন সুতার মিল সায়হাম গ্রুপে সংযোজন হয়। ২০১৯ সালে সায়হাম স্যুট নামে আরও একটি প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু করে সায়হাম গ্রুপ। বর্তমানে এই গ্রুপে নারী পুরুষ মিলিয়ে প্রায় ১০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। যার প্রায় ৭৫% স্থানীয়।
প্রতিষ্ঠাকালীন অনুন্নত যোগায়োগ ব্যাবস্থা সহ প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিল্পস্থাপন ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও গ্রুপের কর্ণধার সৈয়দ মোঃ ফয়সল সহ তাঁর পরিবার শিল্পস্থাপনে অনগ্রসর নয়াপাড়া সহ হবিগঞ্জ জেলাকে এগিয়ে নিতে সবকয়টি মিল হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলার নয়াপাড়ায় স্থাপন করেন। তাদের এ প্রচেষ্টায় বর্তমানে এই অঞ্চলটি শিল্প নগরীতে পরিণত হয়েছে। এলাকায় শিল্পস্থাপনের পথপ্রদর্শক সৈয়দ মোঃ ফয়সলের প্রতিষ্ঠিত সায়হাম গ্রুপকে অনুসরণ করে বর্তমানে মাধবপুর সহ এ অঞ্চলে দেশের বৃহৎ কর্পোরেট শিল্পগ্রুপগুলো শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। সৈয়দ মোঃ ফয়সল শুরু থেকে সায়হাম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসাবে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছেন, বর্তমানে তিনি সায়হাম গ্রুপের চেয়ারম্যান। আগামীতে সায়হাম গ্রুপ ডেনিমস্, ফার্মাসিউটিক্যালস্ খাতে বিনিয়োগের মাধ্যমে এলাকার বেকারত্ব হ্রাস, কর্মসংস্থান সৃষ্টি সহ সর্বোপরি আর্থ সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা অব্যাহত রাখবে। বর্তমানে এই গ্রুপ রপ্তানির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন তথা সরকারী কোষাগারে কর প্রদানের মাধ্যমে দেশের আর্থ সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে বিরাট অবদান রাখছে।
এলাকায় শিল্প স্থাপনের পাশাপাশি আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নেও ব্যাপক ভূমিকা রাখছে সায়হাম গ্রুপ। শিক্ষা বিস্তারে কলেজ, হাইস্কুল, প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা, এতিমখানা, মসজিদ ও দৃষ্টিনন্দন ঈদগাঁ স্থাপন সহ শিক্ষার মানোন্নয়নে আর্থিক অনুদান প্রদান করে আসছে সায়হাম গ্রুপ। এলাকার কৃতি, দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিক্ষাবৃত্তি প্রদান এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। প্রতি বছর সায়হাম গ্রুপ বিনামূল্যে চক্ষু চিকিৎসা শিবির করে অসংখ্য মানুষের সেবা করে আসছে। সায়হাম গ্রুপের চক্ষু শিবিরে হবিগঞ্জ জেলা ছাড়াও পার্শ¦বর্তী ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার লোকজনও সেবা নিতে আসে। প্রতি বছর মাধবপুর উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে শীতার্ত মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করে আসছে সায়হাম গ্রুপ। এছাড়া প্রতি রমজান মাসে মাধবপুর উপজেলার অধিকাংশ মসজিদে মাসব্যাপী ইফতারির আয়োজন ছাড়াও দরিদ্র কয়েক সহস্রাধিক মানুষের মধ্যে সারা মাসের ইফতার সামগ্রী বিতরণ করা সহ নানা ধরনের অবকাঠামোগত উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি ভবিষ্যতে এর কার্যক্রম আরো বিস্তৃত করার কথা জানান গ্রুপের উদ্যোক্তারা।