অ্যাডভোকেট আবুল খায়ের
মিডিয়ায় এখন যে কোন বিষয় সহজেই চলে আসে। ইতিবাচক বিষয়গুলো দেখে এই বৃদ্ধ বয়সে অনেক আনন্দিত হই। নেতিবাচক বিষয় মন খারাপ করে দেয়। ইদানিং ট্রেন দুর্ঘটনাসহ নেতিবাচক অনেকগুলো বিষয় মিডিয়ায় দেখে মনটা এমনিতেই খারাপ। এর উপর একটি সংবাদ আমাকে নতুন করে ভাবিয়ে তুলছে। তা হল ঘুষের ঝুঁকিতে নাকি বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষে আছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ঘুষবিরোধী আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ী সংগঠন ট্রেস ইন্টারন্যাশনাল ঘুষের ঝুঁকি বিষয়ক এক প্রতিবেদনে এমনটা বলেছে। প্রতিবেদনে বলা হয় চলতি বছরের সূচকে বাংলাদেশে ঘুষের ‘রিস্ক স্কোর’ এসেছে ৭২। গত বছরের তুলনায় তা দুই পয়েন্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। এর অর্থ হল- এ দেশে ঘুষের ঝুঁকি আগের চেয়ে বেড়েছে। ২০১৯ সালের সূচকে ১৭৮তম হয়েছে বাংলাদেশ। প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে ভারত হয়েছে ৪৮ পয়েন্ট নিয়ে ৭৮তম ও পাকিস্তান ৬২ পয়েন্ট নিয়ে ১৫৩তম। সূচক অনুসারে, বিশ্বের সবচেয়ে কম ঘুষের ঝুঁকি রয়েছে নিউজিল্যান্ড, নরওয়ে, ডেনমার্ক, সুইডেন ও ফিনল্যান্ডে।
আমরা জানি এক সময় বাংলাদেশ দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হত। বিএনপি-জামায়াত জোট যখন ক্ষমতায় ছিল তখন বাংলাদেশ দুর্নীতিতে হ্যাট্রিকও করেছে। কিন্তু বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে দুর্নীতির তালিকা থেকে নিয়ে এসেছেন উন্নত দেশের তালিকায়। এ নিয়ে আমাদের গর্বের শেষ নেই। শেখ হাসিনা দুর্নীতির জন্য নিজ দলের বড় বড় নেতাকেও ছাড় দেন না। ফলে আমরা যখন এর সুফল পেতে শুরু করেছি তখনই আমাদের সামনে চলে এসেছে এখনও আমরা ঘুষ থেকে বের হতে পারিনি। আমরা চলার পথে বিষয়টির সাথে মোটামুটি পরিচিত থাকলেও এর মাত্রা যে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলেও চলে গেছে তা বোধ হয় আমরা বুঝতে পারিনি।
আমরা দেশ পেয়েছি মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ও অনেক রক্ত ঝড়িয়ে। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। আর বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদেরকে স্বপ্ন দেখাচ্ছেন উন্নত রাষ্ট্র হওয়ার। আর উন্নত রাষ্ট্র হওয়ার জন্য উন্নয়নের মহাসড়কে যখন দুর্বার গতিতে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে তখনই আমাদের সামনে এসেছে ঘুষের ঝুঁকির বিষয়টি। আমাদের প্রধানমন্ত্রী চাকুরী ক্ষেত্রে অনেক সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করেছেন। পে স্কেলের মাধ্যমে একবারে দ্বিগুনের চেয়েও বেশী বেতন বৃদ্ধি করেছেন। এত এত সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির পরও কেন ঘুষ মহামারী আকারে রয়ে গেছে তা খুজে বের করার জন্য গবেষনা প্রয়োজন। এখানে কি সরকারের কোন দুর্বলতা আছে । না কি ব্যাক্তি মানষিকতার জন্য এমনটি হচ্ছে তা খুজে বের করা এবং এই ঘুষ বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা এখন জরুরী বিষয়।
আমরা জানি ঘুষ গ্রহণকারী এবং প্রদানকারী সমান অপরাধী। কিন্তু জনগণ নিরুপায় হয়ে ঘুষ প্রদান করেন। আর যারা ঘুষ গ্রহণ করেন তিনি তারা শুধু অপরাধীই নন, ধর্মীয়ভাবেও তারা গর্হিত অপরাধী।এখানে রাষ্ট্রের ভূমিকার পাশাপাশি পারিবারিক শিক্ষারও ভূমিকা রয়েছে। নতুন প্রজন্মকে ধর্মীয় মূল্যবোধ ও নৈতিকতার শিক্ষায় শিক্ষিত করা প্রয়োজন। আর চাকুরী পাওয়া এবং ভাল পদায়নের জন্য যে ঘুষ প্রদানের প্রথা আছে তাও বাতিল করতে হবে সর্বাগ্রে। তবে ইদানিং আমরা পুলিশের নিয়োগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এই ঘুষ গ্রহণ বন্ধ হয়েছে বলে মিডিয়ায় দেখতে পাই। সম্প্রতি ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব বিভিন্ন জেলার ভূমি প্রশাসনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ঘুষ গ্রহণ না করার জন্য শপথ গ্রহণ করাতে দেখেছি। দুদকের অনেক কর্মকান্ড এবং সরকারের শুদ্ধাচার কর্মসূচিগুলো আমাদের চোখে পড়ছে। কিন্তু সেই বৃটিশদের দেয়া টিপস এর প্রচলন থেকে ঘুষে রূপান্তরের বিষয়টি হঠাৎ করে বন্ধ না করা গেলেও দেশে যে প্রক্রিয়া আমাদের চোখে পড়ছে তাকে আরও বেগবান করতে হবে। আর না হলে আমাদের যে উন্নত দেশ হওয়ার সে স্বপ্ন যাত্রা ব্যাহত হবে। বাস্তব হবে না বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন।
অ্যাডভোকেট আবুল খায়ের
সিনিয়র আইনজীবী
ও
সভাপতি বঙ্গবন্ধু পরিষদ
হবিগঞ্জ জেলা শাখা
পাঠকের কলাম
© স্বত্ব দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ ২০১৯
ওয়েবসাইটটি তৈরী করেছে ThemesBazar.Com