টান টান উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে এমপি অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ খান গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত

এসএম সুরুজ আলী/মোশাহেদ মিয়া ॥ টান টান উত্তেজনাকর পরিস্থিতি ও হাজার হাজার দর্শকদের উপস্থিতিতে এমপি অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ খান গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সব খেলার রেজাল্টের মাধ্যমে ফাইভ এন্ড সিক্স ফুটবল একাদশকে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হয়। আর রানার্সআপ হয় রোজেস এলিভেন একাদশ। গতকাল শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৩টায় বানিয়াচং শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামে (সাবেক এড়ালিয়া মাঠ) টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা শুরু হয়। এর আগে খেলা দেখার জন্য উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে হাজার হাজার লোকজন এসে মাঠ প্রাঙ্গণে ভিড় জমান। দেশ-বিদেশের নামি-দামি খেলোয়াড় নিয়ে উভয় টিম মাঠে নামেন। খেলার ১ম ও ২য় রাউন্ডে কোন গোল হয়নি। পরবর্তীতে কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী টাইব্রেকার দেয়া হয়। কিন্তু টাইব্রেকারে উভয় দল সরাসরি ৯টি করে বল করার পরও ফলাফল ড্র হওয়ায় বিপাকে পড়েন কর্তৃপক্ষ। এতে উভয় দলকে একটি করে শট করার সিদ্ধান্ত দেন আয়োজক কমিটি। এতে ফাইভ এন্ড সিক্স টিম সফল হলেও অন্ধকার হওয়ার অজুহাতে রোজেস এলিভেন শট দিতে রাজী না হলে চ্যাম্পিয়ন দল নির্বাচন করতে কঠিন সমীকরণে পড়েন আয়োজক কমিটি। এক পর্যায়ে সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, উপজেলা চেয়ারম্যান, জেলা ও উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার নেতৃবৃন্দসহ আয়োজক কমিটির নেতৃবৃন্দ একান্ত আলোচনায় বসেন। আলোচনায় বসে সিদ্ধান্ত হয় টুর্নামেন্টের শুরু থেকে সেমিফাইনাল পর্যন্ত যে দল ভাল ফলাফল করেছে তাকে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হবে। এ অবস্থায় সন্ধ্যার পর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে আয়োজক কমিটি উভয় দলের সবক’টি খেলার গোল পর্যালোচনা করেন। এতে দেখা যায় রোজেস এলিভেন সবক’টি খেলায় ৮টি ও ফাইভ এন্ড সিক্স ১৬টি গোল করেছে। এ প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের আইন অনুযায়ী খেলার সর্ব্বোচ্চ গোল ও অন্যান্য পারফরমেন্স বিবেচনা করে জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি ও জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান, সহ-সভাপতি পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যাসহ সকলের সম্মতিক্রমে ফাইভ এন্ড সিক্স একাদশকে চ্যাম্পিয়ান ঘোষণা করেন টুর্নামেন্টের প্রধান পৃষ্ঠপোষক অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ খান এমপি। খেলায় রেফারীর দায়িত্ব পালন করেন জেলা ক্রীড়া সংস্থার রেফারী আব্দুল মতিন।
পরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মামুন খন্দকারের সভাপতিত্বে ও উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার জয়েন্ট সেক্রেটারী সাহিবুর রহমানের পরিচালনায় পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন টুর্নামেন্টের প্রধান পৃষ্ঠপোষক হবিগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ খান। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, ফুটবল আমাদের দেশের একটি জনপ্রিয় খেলা। খেলাধুলা করলে মানুষের মধ্যে সম্প্রীতির বন্ধন সৃষ্টি হয়। খেলায় জয়পরাজয় বড় কথা নয়। খেলায় অংশগ্রহন করাই একটি মহত্বের নিদর্শন। বানিয়াচংবাসী খেলাপ্রেমী মানুষ। ভাল টুর্নামেন্ট হলেই হাজার হাজার দর্শক রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে মাঠে খেলা দেখতে চলে আসেন। কিন্তু খেলাধুলা করতে গিয়ে আমরা যেন আঞ্চলিকতার বিরোধ সৃষ্টি না করি, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নের মানুষই ঐতিহ্যবাহী বানিয়াচং উপজেলার মানুষ। এক এলাকার মানুষকে অপর এলাকার মানুষ প্রতিপক্ষ ভাবলে খেলার বিনোদন বিনষ্ট হয়। বানিয়াচং উপজেলাবাসীর বিনোদনের জন্য আমি জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মাধ্যমে এড়ালিয়া মাঠে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম তৈরি করেছি। মনে রাখতে হবে এ স্টেডিয়ামকে উন্নত করতে হলে একে অপরের হিংসাত্মক মনোভাব পরিহার করতে হবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে নবাগত জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান বলেন, আমি নিজে একজন ফুটবল খেলোয়াড় ছিলাম। অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ খান এমপি মহোদয়ের আমন্ত্রণে মহাগ্রাম বানিয়াচং আসার সুযোগ পেয়েছি। এখানে না আসলে জানতেই পারতাম না অত্রাঞ্চলের মানুষ ফুটবলকে এতোটা ভালবাসেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা পিপিএম বিপিএম বলেন- আইভেরিকোস্টে সেরা ফুটবল খেলোয়াড় দ্রগবা তাঁর দেশের গৃহযুদ্ধ নির্মুল করে ফেলেছেন। একজন ভালো খেলোয়াড় একটি এলাকাকে বদলে দিতে পারে। তিনি বলেন খেলাধুলা মানুষের বিনোদনের পাশাপাশি মাদক, জুয়া, ইভটিজিংসহ নানা অপকর্ম থেকে বিরত রাখে। আব্দুল মজিদ খান এমপি মহোদয় একজন খেলাপ্রেমী মানুষ। তার পৃষ্ঠপোষকতায় শান্তিপূর্ণভাবে একটি বড় টুর্নামেন্ট শেষ হয়েছে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কাশেম চৌধুরী, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন কলি, সহ-সভাপতি আব্দুর রহমান, উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আমির হোসেন মাস্টার, বানিয়াচং থানার অফিসার ইনচার্জ রঞ্জন কুমার সামন্ত, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ফারুক আমিন, জেলা পরিষদ সদস্য রৌশনারা ভূঁইয়া লাকী প্রমুখ।
অন্যান্যের বক্তব্য রাখেন টুর্নামেন্টের আহ্বায়ক এনামুল মুহিত খান, ইউপি চেয়ারম্যান রেখাছ মিয়া, ওয়ারিশ উদ্দিন খান, ফাইভ এন্ড সিক্স একাদশের টিম ম্যানেজার মোত্তাকিন বিশ^াস, উপজেলা আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া লিলু শাহজাহান মিয়া, আওয়ামী লীগ নেতা নজরুল ইসলাম, যুবলীগ নেতা ছায়েব আলী, বাবুল মিয়া, শাহজাহান মিয়া, আজমল হোসেন খান, ছোবেদ আলী, অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান খান তুহিন, জসিম উদ্দিন, উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি এজেডএম উজ্জল, সেক্রেটারী রফিকুল আলম চৌধুরী রিপন, যুবলীগ নেতা মাজহারুল ইসলাম অপু, ইমদাদ মিয়া, ৩নং ইউনিয়ন যুবলীগ সেক্রেটারী রায়হান মিয়া, ওমর শেখ জিতু প্রমুখ।