চুনারুঘাট প্রতিনিধি ॥ হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্ব পালনরত এসিল্যান্ড নুতরাত ফাতিমা ইউপি চেয়ারম্যানদেরকে কটুক্তি করেছেন মর্মে অসন্তোষ্ট হয়ে উপজেলা পরিষদের আইনশৃঙ্খলা সভাসহ ১১টি সভা বয়কট করেছেন চেয়ারম্যানগণ। চেয়ারম্যানদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে ভাইস চেয়ারম্যানদ্বয়সহ পৌর মেয়রও সভা বয়কট করেছেন। গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে এসব সভা হওয়ার কথা থাকলেও সকল চেয়ারম্যান সভা বয়কট করায় কোন সভা অনুষ্ঠিত হয়নি। এর আগে দুপুর ১টায় উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির লস্কর চেয়ারম্যানসহ সকলকে নিয়ে সমঝোতা বৈঠক করে বেলা ৩টায় সভা শুরু করলেও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ভুল স্বীকার না করায় চেয়ারম্যানগণ সভা থেকে বের হয়ে যান। তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) নুসরাত ফাতিমা বলেছেন, চেয়ারম্যানদের সভা বয়কট করার কিছু নাই। চেয়ারম্যানগণ সভায় অনুপস্থিত ছিলেন।
এদিকে নুসরাত ফাতিমা সহকারি কমিশনার (ভূমি) হিসেবে চুনারুঘাটে যোগদানের পর থেকেই বালুখেকোদের বিরুদ্ধে তার অভিযান চুনারুঘাটবাসীকে আশার সঞ্চার জাগিয়েছিল। তিনি ইতোমধ্যে ৫/৭টি অভিযান করে ১৬টি ড্রেজার মেশিন জব্দ করে পুড়িয়ে নষ্ট করেন এবং বালুখেকোদের জন্য আতংকে পরিণত হন।
ক্ষুব্ধ ইউপি চেয়ারম্যানগণ জানান, চুনারুঘাটের সহকারি কমিশনার (ভূমি) নুসরাত ফাতিমা ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। যোগদানের পর পরই তিনি উপজেলার গাজীপুর, শানখলা, দেওরগাছ, পাইকপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যানসহ বেশ কয়েকজন চেয়ারম্যানকে কটাক্ষ করে কথা বলেন। এ নিয়ে চেয়ারম্যানগণ উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির লস্করের কাছে বিচারপ্রার্থী হন।
গতকাল সকাল সাড়ে ৯টায় উপজেলা পরিষদের সমন্বয় ও আইন শৃঙ্খলা সভা, চোরাচালান প্রতিরোধ, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্য যৌক্তিক পর্যায়ে রাখা, নারী শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ, বাল্য বিবাহ প্রতিরোধসহ ১১টি সভা ছিল। কিন্তু সকাল থেকে সকল ইউপি চেয়ারম্যান ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার আচরণের প্রতিবাদে সভা বয়কট করেন। এসময় বিষয়টি মিমাংসার উদ্যোগ নেন ভাইস চেয়ারম্যান আবিদা খাতুন ও পৌর মেয়র নাজিম উদ্দিন। কিন্তু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাদের সাথেও খারাপ আচরণ করেন। পরে দুই ভাইস চেয়ারম্যান আবিদা খাতুন ও লুৎফুর রহমান এবং পৌর মেয়র নাজিম উদ্দিন ইউপি চেয়ারম্যানদের সাথে যোগ দেন। তারা ভাইস চেয়ারম্যান আবিদা খাতুনের কার্যালয়ে এ নিয়ে এক সভা আহবান করেন। এতে যোগ দেন মুক্তিযোদ্ধাসহ কমিটির অনেক সদস্য। সেখানে সকলে আলোচনা করে সভা বয়কটের সিদ্ধান্ত নেন। সাটিয়াজুরী ইউপি চেয়ারম্যান উপজেলার সকল সভা বয়কটের ঘোষণ দেন।
এ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির লস্কর, অফিসার ইনচার্জ শেখ নাজমুল হক ও শিক্ষা কর্মকর্তা মাসুদ রানা। বেলা ১টায় সকল চেয়ারম্যানদের নিয়ে সমঝোতা বৈঠকের পর চেয়ারম্যানগণ বেলা ৩টায় সমন্বয় সভায় গেলেও সেখানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) নুসরাত ফাতিমা সমন্বয় সভায় না আসায় কৃষি কর্মকর্তাকে সদস্য সচিব করে পরিষদের সমন্বয় সভা শেষে চেয়ারম্যানগণ সভা থেকে বেরিয়ে যান। পরে আর কোন সভা অনুষ্ঠিত হয়নি।
এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ মাস্টার বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ূন কবির খান, ফজলুর রহমান তরফদারসহ কয়েকজন চেয়ারম্যানের সাথে ভারপ্রাপ্ত ইউএনও কটু কথা বলেছেন। বিষয়টির সুষ্ঠু সমাধান না হওয়ায় আমরা পরিষদের সকল সভা বয়কট করেছি।
এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান তরফদার সবুজ বলেন, অবৈধ বালু নিয়ে অভিযান করায় আমি তাকে ধন্যবাদ জানালে প্রতিউত্তরে তিনি আমাকে তিরস্কার করে আমার সাথে খারাপ আচরণ করেন। নানা কটুক্তি করেন। ইউপি চেয়ারম্যান আবেদ হাসনাত সনজু চৌধুরী বলেন, তিনি আমাদের চেয়ারম্যানদের আরো আদব কায়দা শেখার রয়েছে বলে কটুক্তি করেন এবং চুনারুঘাট সম্পর্কে বাজে মন্তব্য করেন। তাই আমরা এর প্রতিবাদ করেছি। এর সুষ্ঠু সমাধান না হলে আমরা কোন সভায় যোগদান করব না।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) নুসরাত ফাতিমার সাথে মোবাইল ফোনে যোগযোগের চেষ্টা করা হলে দীর্ঘক্ষণ ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।