এসএম সুরুজ আলী ॥ হাইস্কুল, কলেজ, মাদ্রাসাসহ হবিগঞ্জের ৪৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩টি কলেজ, ৩৪টি হাইস্কুল ও ৮টি মাদ্রাসা রয়েছে। তন্মধ্যে হবিগঞ্জ সদর, লাখাই ও শায়েস্তাগঞ্জে ১২টি হাইস্কুল ও ৫টি মাদ্রাসা; বানিয়াচং-আজমিরীগঞ্জে ২টি কলেজ, ৯টি হাইস্কুল ও ১টি মাদ্রাসা; নবীগঞ্জ-বাহুবলে ১টি কলেজ, ৭টি হাইস্কুল ও ১টি মাদ্রাসা এবং চুনারুঘাট-মাধবপুরে ৬টি হাইস্কুল ও ১টি মাদ্রাসা এমপিওভুক্ত হয়েছে। গতকাল বুধবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির ঘোষণা দেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। এর মধ্য দিয়ে বহু শিক্ষক-কর্মচারীর দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণ হলো। প্রধানমন্ত্রী গতকাল ঘোষণা দিলেও এমপিওভুক্তির সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে গত জুলাই মাস থেকে। সাড়ে ৯ বছর পর বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হলো। সব যোগ্য প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যাদেরকে এমপিওভুক্ত করা হলো তাদের এই যোগ্যতা ধরে রাখতে হবে। নীতিমালা অনুযায়ী যোগ্যতা ধরে রাখতে না পারলে এমপিও বাতিল করা হবে। এসময় এমপিও হওয়া সব শিক্ষক-কর্মচারীকে অভিনন্দন জানান তিনি। প্রায় এক ঘণ্টার মতবিনিময় সভায় শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, নতুন নীতিমালা অনুযায়ী যোগ্য প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা হবে। যোগ্য বিবেচিত একটি প্রতিষ্ঠানও বাদ যাবে না। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক পরিচয় দেখা হবে না। স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে আবেদন বাছাই করে যোগ্য তালিকা তৈরি করা হয়েছে। বিশেষ বিবেচনায় কেবল পিছিয়ে পড়া এলাকার প্রতিষ্ঠানকে বিবেচনা করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রেও সংশ্লিষ্ট উপজেলার মেধাক্রম অনুসারে সেরা প্রতিষ্ঠানকে বেছে নেয়া হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি আরও বলেন, এমপিওভুক্ত হওয়াসহ সব প্রতিষ্ঠানকে নীতিমালা অনুযায়ী মান ধরে রাখতে হবে। এতে কোনো প্রতিষ্ঠান ব্যর্থ হলে সেটির এমপিও সাময়িক স্থগিত করা হবে। পুনরায় যোগ্যতা অর্জন করতে পারলে এ সুবিধার আওতায় আবার আনা হবে। তিনি বলেন, এখনও সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নজরদারির আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। এখন থেকে এমপিওভুক্তি প্রতিষ্ঠানকে নজরদারির আওতায় আনা হবে।
হবিগঞ্জের যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়েছে সেগুলো হলো- হবিগঞ্জ সদর উপজেলার হাজী আলিম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়, তরপ উচ্চ বিদ্যালয়, রামপুর উচ্চ বিদ্যালয়, আশেঢ়া উচ্চ বিদ্যালয়, ধল-বামকান্দি পাচঁগ্রাম জুনিয়র হাইস্কুল, বামকান্দি আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়, উমেদনগর পৌর উচ্চ বিদ্যালয়, তেলিয়াখাল উচ্চ বিদ্যালয়; লাখাই’র ভবানীপুর উচ্চ বিদ্যালয়, মুড়িয়াউক উচ্চ বিদ্যালয়, রিচি মোহাম্মদীয়া ছুন্নিয়া দাখিল মাদ্রাসা, চান্দপুর দারুচ্ছুন্নাৎ দাখিল মাদ্রাসা, শরীফাবাদ দাখিল মাদ্রাসা, দারুল হুদা দাখিল মাদ্রাসা ও নুরে মোহাম্মদীয়া ছুন্নীয়া দাখিল মাদ্রাসা; শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার শায়েস্তাগঞ্জ জহুরচান বিবি মহিলা কলেজ, শায়েস্তাগঞ্জ ইসলামী একাডেমী এন্ড হাইস্কুল; বানিয়াচং উপজেলার আইডিয়াল কলেজ, সুফিয়া মতিন টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ, বিএসডি মহিলা আলিম মাদ্রাসা, রতœা উচ্চ বিদ্যালয়, আমবাগান উচ্চ বিদ্যালয়, বিথঙ্গল বিজিএম উচ্চ বিদ্যালয়, ইকরাম নন্দপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়, মেধাবিকাশ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, চমকপুর একতা উচ্চ বিদ্যালয় ও উত্তর সাঙ্গর উচ্চ বিদ্যালয়; আজমিরীগঞ্জের সাতগাও নি¤œ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও পশ্চিমবাগ উচ্চ বিদ্যালয়; নবীগঞ্জ উপজেলার দিনারপুর কলেজ, বনকাদিপুর-আমজাদ আলী উচ্চ বিদ্যালয়, মতিউর রহমান চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়, বিবিয়ানা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় ও তাজিয়া মোবাশি^রিয়া দাখিল মাদ্রাসা; বাহুবল উপজেলার ফতেহপুর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়, বিসি জুনিয়র মাধ্যমিক বিদ্যালয়, হাজী এ ওয়াহিদ উচ্চ বিদ্যালয় ও জগতপুর উচ্চ বিদ্যালয়; চুনারুঘাট উপজেলার চন্দ্রমল্লিকা উচ্চ বিদ্যালয়, কচুয়া উচ্চ বিদ্যালয় ও হাজী জোবায়দা দাখিল মাদ্রাসা; মাধবপুর উপজেলার আহমেদপুর উচ্চ বিদ্যালয়, ডাঃ জরিফ হোসেন জুনিয়র হাইস্কুল, সুলতানপুর জুনিয়র হাইস্কুল ও সাহেবনগর উচ্চ বিদ্যালয়।
প্রধানমন্ত্রী এমপিও তালিকা প্রকাশ করার পর থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষিকারা বিভিন্ন শ্রেণী পেশার লোকজনদের মিষ্টিমুখ করান। শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি ও নিজ নিজ সংসদীয় আসনের এমপিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
এদিকে, এমপি অ্যাডভোকেট মোঃ আবু জাহিরের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় হবিগঞ্জ সদর-লাখাই ও শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার ১৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হওয়ায় এলাকায় আনন্দের বন্যা বইছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে এমপি আবু জাহিরকে মিষ্টি মুখ করানো হয় এবং তাকে ফুলের তোড়া দিয়ে শুভেচ্ছা ও কৃতজ্ঞতা জানানো হয়।
সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরে হবিগঞ্জ সদর-লাখাই ও শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিভুক্তির জন্য এমপি আবু জাহির এর কাছে দাবি জানিয়ে আসছিলেন এলাকাবাসী ও শিক্ষক কর্মচারীবৃন্দ। অবশেষে তাঁর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় উল্লেখিত ৩ উপজেলায় ১৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হয়েছে। এগুলো হলো- হবিগঞ্জ সদর উপজেলার রামপুর উচ্চ বিদ্যালয়, তরফ উচ্চ বিদ্যালয়, হাজী আলীম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়, আষেঢ়া উচ্চ বিদ্যালয়, উমেদনগর পৌর জুনিয়র হাইস্কুল, তেলিখাল উচ্চ বিদ্যালয়, ধল-বামকান্দি মাধ্যমিক উচ্চ বিদ্যালয়, বামকান্দি আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়, শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার জহুরচান বিবি মহিলা কলেজ, শায়েস্তাগঞ্জ ইসলামী একাডেমী এন্ড হাইস্কুল, লাখাই উপজেলার মুড়িয়াউক উচ্চ বিদ্যালয়, ভবানীপুর উচ্চ বিদ্যালয়, হবিগঞ্জ সদর উপজেলার দারুল হুদা ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসা, নূরে মোহাম্মদিয়া সুন্নিয়া দাখিল মাদ্রাসা, চানপুর দাখিল মাদ্রাসা, শরীফাবাদ দাখিল মাদ্রাসা ও রিচি মোহাম্মদীয় সুন্নিয়া দাখিল মাদ্রাসা।
এ ব্যাপারে তরফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, এমপি আবু জাহির একজন শিক্ষানুরাগী রাজনীতিবিদ। শিক্ষাকে প্রাধান্য দিয়েই তিনি হবিগঞ্জের সার্বিক উন্নয়ন কাজ করে যাচ্ছেন। জেলার ৪টি আসনের মধ্যে তাঁর নির্বাচনী এলাকায় সর্বোচ্চ সংখ্যক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির তালিকায় এসেছে। হাজী আলীম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ হোসেন আলী বলেন, শুধু আমিই নই, যে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে এমপি আবু জাহির এর শরণাপন্ন হলে তিনি ফিরিয়ে দেন না। তাঁর নির্বাচনী এলাকায় অসংখ্য স্কুল-কলেজ প্রতিষ্ঠান করেছেন তিনি। নিজের নির্বাচনী এলাকার প্রায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেই এক এবং একাধিক ভবন নির্মাণ করে দিয়েছেন। শিক্ষাক্ষেত্রে তার এই কর্মতৎপরতায় আমরা কৃতজ্ঞ। নিজামপুরের শরীফাবাদ দাখিল মাদ্রাসার সুপার শেখ মুহাম্মদ খাইরুদ্দীন বলেন, শুধু উন্নয়ন কাজই নয়; সারা বছর প্রতিষ্ঠানে ঠিকমতো লেখাপড়া হচ্ছে কি না সেই খবরও এমপি আবু জাহির রাখেন। যে কোন প্রতিষ্ঠানের পাশ দিয়ে কোথাও যাতায়াত করলে তিনি ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীদের সাথে কথা বলে যান। বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করেন। সঠিক উত্তর দিলে প্রতিষ্ঠানের প্রধানের প্রতি ধন্যবাদ জানান। আর লেখাপড়ার খারাপ অবস্থা দেখলে ভবিষ্যতে ভাল করার নির্দেশ দেন। হবিগঞ্জের ইতিহাসে এ ধরণের শিক্ষানুরাগী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব আমি দেখিনি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে এমপি আবু জাহির বলেন, হবিগঞ্জের শিক্ষাক্ষেত্রের উন্নয়নে আমাকে কেউ বলতে হয় না। কোন প্রতিষ্ঠানে কি করতে হবে আমি নিকে থেকেই খোঁজ রাখি। ইতোমধ্যে আমরা শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছি। যতদিন বেঁচে থাকব হবিগঞ্জের শিক্ষার উন্নয়নে কাজ করার চেষ্টা করবো। তথ্য প্রযুক্তির শিক্ষার দিকে গুরুত্ব দিতে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন তিনি।