মোঃ আলাল মিয়া, নবীগঞ্জ থেকে ॥ নবীগঞ্জে সুবিধাবঞ্চিত নারীদের সমস্যায় পাশে দাঁড়ান তথ্য আপা। প্রয়োজনে বাড়ি বাড়ি গিয়েও সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেন। ‘তথ্য আপা’ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছেন। বিশেষ করে স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসার ছাত্রীদের কাছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে সরকারের নতুন সেবামূলক একটি প্রকল্প ‘তথ্য আপা’। তথ্য আপার কাজ হলো তৃণমূলে নারীদের দোরগোড়ায় তথ্যসেবা পৌঁছে দেয়া। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, ব্যবসা, জেন্ডার, আইন এই ৬টি বিষয়ে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করা। নারীদের ক্ষমতায়নের উদ্দেশ্যে এ প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে জাতীয় মহিলা সংস্থা।
উপজেলা তথ্য সেবা সূত্রে প্রকাশ, গত চার মাস ধরে এ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এ পর্যন্ত দেড় হাজার নারী তথ্য আপার কাছ থেকে তথ্য সেবা নিয়েছেন। তথ্যসেবা কর্মকর্তা (তথ্য আপা) নাহিদা আক্তার বলেন, দুই তথ্য সেবা সহকারী শারমিন আক্তার পলি ও লিমা আক্তার ছাড়াও একজন অফিস সহায়ক সেবাকেন্দ্রে নিয়োজিত রয়েছেন। গত কয়েক মাসে অনেক বাল্যবিয়ে বন্ধ, স্বামী ও দেবর কর্তৃক নারী নির্যাতন সমাধান, যৌতুক নিরোধ ও প্রতি মাসে তৃণমূল নারীদের নিয়ে উঠোন বৈঠক করে তাদেরকে সচেতন করছেন। সরজমিন দেখা যায়, বেশ কয়েকজন ছাত্রী তথ্য আপার কাছ থেকে সেবা নিচ্ছেন। এসময় শিক্ষার্থী জনি আক্তার ও মরিয়ম আক্তার জানান, এইচএসসি পরীক্ষা পাস করে চাকরি খোঁজার চেষ্টা করছি। তথ্যকেন্দ্রে তথ্য আপার কাছে এসে অনলাইনে বিনা মূল্যে প্রতিষ্ঠানে আবেদন করেছি। উপজেলার করগাঁও এলাকার গৃহবধূ ফারজানা আক্তার বলেন, আমার শারীরিক অসুস্থতার কারণে খুব সমস্যায় পড়েছিলাম। এ বিষয়ে তথ্য আপাকে জানানোর পর তারা চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগের ব্যবস্থা করে দেন। আমি তখন ঘরে বসেই চিকিৎসাসেবা পেয়েছি। উপজেলার বড় ভাকৈর (পূর্ব) এলাকার নাদিয়া আক্তার বলেন, তথ্য আপারা গ্রামে এসে ইন্টারনেট, স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং কৃষিবিষয়ক উঠান বৈঠকের মাধ্যমে আলোচনা করে থাকেন। তারা আমাদের বিভিন্ন তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেন। আমরা এখন নতুন অনেক কিছু শিখেছি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানায়, এ প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ে সারা দেশে ৪৯০টি উপজেলায় তথ্য আপা সেবা চালু করা হয়। প্রথম পর্যায়ে ১৩টি উপজেলায় এ সেবা চালু হয়। উপজেলা তথ্য সেবা কর্মকর্তা (তথ্য আপা) নাদিয়া আক্তার বলেন, আমরা নারীদের সবধরনের তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করি। অফিসের পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে উঠান বৈঠক করে ডিজিটাল সেবা কী, কিভাবে সেবা পাওয়া যাবে এসব বিষয়ে আলোচনা করি। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে সেবার মান আরো বাড়ানো হবে এবং এ কার্যালয়ে নারীদের সকল ধরনের সেবা বিনামূল্যে দেয়া হবে। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে নারীদের ক্ষমতায়নের (প্রকল্প-২) জন্য দেশের ৪৯০টি উপজেলায় এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। পাশাপাশি সরকার মেয়েদের জন্য যে বিনামূল্যে লেখাপড়াসহ সুবিধা দিচ্ছে তা জানান তথ্য আপা। এছাড়াও উঠান বৈঠকে আমার বাড়ি আমার খামারসহ সরকারের সব সুবিধার কথা জানানো হয়। উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান নাজমা বেগম বলেন, তথ্য আপার উঠান বৈঠকের মাধ্যমে নারীরা বিভিন্ন ধরনের সেবা পাচ্ছে। বিষয়টা অনেকেই জানতো না। তথ্য আপা প্রকল্পটি নারী দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। তিনি নারী উন্নয়নের নিমিত্তে পরিচালিত ওই প্রকল্পে সকলকে এগিয়ে আসার অনুরোধ করেন।
নবীগঞ্জে নারী সমস্যা সমাধানে ‘তথ্য আপা’
© স্বত্ব দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ ২০১৯
ওয়েবসাইটটি তৈরী করেছে ThemesBazar.Com