ডা. মোহাম্মদ আবদুল ওয়াহাব
‘সে যতই কালো হোক,
আমি দেখেছি তার কালো হরিণ চোখ…,
কল্পনায় প্রিয়জনের মুখখানি যখন ভেসে উঠে তখন সেই টানা টানা চোখ, সকরুণ চাহনি, গড়িয়ে পড়া দু’ফোটা অশ্রু অথবা না বলা কথাগুলো হৃদয়ে ঢেউ তুলে নয় কি!
কারো চোখের দিকে তাকিয়ে যে কথাটা সহজেই বলতে পারেন সে কথাটা আবার বলার জন্য অন্য জনের দিকে তাকাতেই পারেন না। তাই বলছিলাম কি ব্যক্তিত্ব শুধু আচরণেই নয়, চোখেও ফুটে উঠে।
অনেক যতœ করে মহাকৌশুলী মূল্যবান যন্ত্রদ্বয় সৃষ্টি করেছেন। মূল্যবান এজন্য যে কোন কারণে একটা নষ্ট হয়ে গেলেও অন্যটা দিয়ে বাকি জীবন চালিয়ে নেয়া যাবে যেমন করে সৃষ্টি করা হয়েছে মূল্যবান কিডনি দুটো।
ভাবুন তো দেখি যদি সাদা অক্ষিগোলকের মাঝখানে নীলাভ কর্নিয়া প্রতিস্থাপন না করে কালোর মাঝখানে সাদা কর্নিয়া থাকত। ঠিক তেমনটাই হত যদি দুধের বর্ণ লাল আর রক্তের বর্ণ হত সাদা।
অক্ষিগোলক দুটো আকারে ব্যাসে মাত্র এক ইঞ্চি থেকে একটু এদিক সেদিক। কিন্তু ভেবে অবাক হবেন একটি চোখের এনাটমি বা গঠন প্রণালী নিয়ে স্নাতকত্তোর কোর্সে যা পড়তে হয় তা প্রায় আটশত পৃষ্ঠা। এ থেকেই আন্দাজ করা যায় চোখের গঠন প্রণালী কত জটিল এবং ব্যাপক।
Eye is the window of brain. একজন চিকিৎসক চোখ পরীক্ষা করে শুধু চোখের রোগ নয় ব্রেইন সহ অন্যান্য অনেক রোগ নিরূপণ করতে পারেন যেমন করে আপনি চোখ দেখে আপনার প্রিয়জনের মনের অনেক ভাষা বুঝতে পারেন।
ভেবে দেখেছেন কি প্রত্যেকটি জিনিসকে আপনি দুটো চোখ দিয়ে দুটো না দেখে একটিই দেখছেন। এ প্রক্রিয়া কিন্তু অত্যন্ত জটিল যা পদার্থ বিদ্যার সাহায্য ব্যতিরেকে বিশ্লেষণ অসম্ভব।
আবার হুট করে দূর থেকে দৃষ্টি একেবারে নিকটে স্পষ্ট করে নিবদ্ধ করতে পারেন নিমিষেই। এ প্রক্রিয়াও একেবারে সহজ নয়। একটা শকুন বা বাজপাখি কয়েক কিলোমিটার দূর থেকে ছোট্ট একটা ইঁদুর বা খাবার যতটা সুস্পষ্টভাবে নিরূপণ করতে পারে আপনার আমার পক্ষে তা আদৌ সম্ভব নয়।
আরো অবাক হওয়ার বিষয় আমরা বাস্তবে কিন্তু সকল জিনিস উল্টো দেখি যা মস্তিষ্কের একেবারে পশ্চাৎভাগ প্রসেসিং করে ঠিক করে ফেলে ঠিক ক্যামেরার মতই। আসলে ধ্রুব সত্য হল চোখের গঠন প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই সর্বপ্রথম ক্যামেরা নির্মাণ করা হয়।
চোখ শরীরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ বলেই মাথার খুলির ভিতরে সৃষ্টিকর্তা তিন দিক থেকে তা সংরক্ষিত করে সৃষ্টি করেছেন। এমনকি অরক্ষিত সম্মুখ দিকেও eye lash সহ দুটো পাতা বা ঢাকনা দেয়া হয়েছে যাতে বিপদ বুঝে ঢেকে ফেলতে পারেন।
চোখ এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে সমস্ত শরীরের জন্য যেখানে বার জোড়া cranial nerve নির্ধারিত সেখানে শুধু চোখের জন্যই ছয় জোড়া স্নায়ু বা নার্ভ সর্বক্ষণ কর্মব্যস্ত। বিশেষ করে একই সাথে চোখ দুটো উপর নিচ, আড়াআড়ি বা পাশাপাশি পরিচালনা বা conjugate movement করার জন্যই।
মোদ্দা কথা আটশত পৃষ্ঠার গঠন প্রণালী সম্বলিত চোখের কার্যক্রম দু’চারটি লাইনে বর্ণনার চেষ্টা ধৃষ্টতা মাত্র। পরম করুণাময়ের কাছে অবনত মস্তকে আত্মসমর্পণ করা ছাড়া কোনই বিকল্প নেই।
হে সৃষ্টিকর্তা তোমাকে বুঝার কিছুটা হলেও ক্ষমতা প্রদান কর ॥