পাঠকের চিঠি

মোঃ টিপু তালুকদার

চট্টগ্রাম মহানগরীর বন্দর থানার নিমতলা এলাকার ৩ তলা ভবনের নিচতলার একটি কক্ষ থেকে বাবা ও মেয়ের গলাকাটা লাশ উদ্ধারের একদিন না পেরুতেই খুনের রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশ। পুলিশ জানায়, অনৈতিক সম্পর্ক দেখে ফেলায় মা হাছিনা বেগম তার প্রেমিককে সঙ্গে নিয়ে প্রথমে নিজের চার বছরের শিশুকন্যা ফাতিমাকে গলা কেটে খুন করে। পরে একইভাবে স্বামী আবু তাহেরকেও খুন করে। পুলিশ অভিযুক্ত হাছিনা বেগম (৩০) ও প্রেমিক মাহিন উদ্দিনকে (৪৫) গ্রেপ্তার করেছে। গতকাল রোববার সকালে নগরীর দামপাড়ায় সিএমপি কমিশনারের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) আমেনা বেগম। জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে এমন তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানান তিনি।
আমেনা বেগম জানান, নিহত আবু তাহেরের স্ত্রী হাছিনা বেগমের সঙ্গে অনৈতিক কর্মকান্ডের সময় মেয়ে ফাতেমা সব দেখে ফেলে। ঘটনাটি তার বাবা বাড়ি ফিরলে জানিয়ে দেয়ার কথা বললে প্রেমিক মাহিন উদ্দিন ও হাছিনা মিলে শিশুটিকে গলায় ছুরি বসিয়ে হত্যা করে। কিছুক্ষণ পর আবু তাহের বাড়িতে ফিরলে তাকেও দুজনে জোরপূর্বক আটকে গলায় রশি পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে এবং ছুরিকাঘাতে হত্যা করে প্রেমিক মাহিন উদ্দিন ও স্ত্রী হাছিনা বেগম। স্বামী-সন্তানকে নিজ হাতে হত্যার পর শোকের আহাজারি নাটক সাজায় স্ত্রী হাছিনা বেগম।
শনিবার দুপুরে স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে নগরীর বন্দর থানার নিমতলা এলাকায় স্থানীয় বুচুইক্যা কলোনির ওই বাসা থেকে বাবা-মেয়ের লাশ উদ্ধারের পর স্ত্রী হাছিনা, শ্যালিকা ও ভায়রাসহ ৪ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। হাছিনার দেয়া তথ্যমতে তার কথিত প্রেমিক মাহিন উদ্দিনের অবস্থান শনাক্ত করে নোয়াখালীতে অভিযান চালিয়ে শনিবার রাতেই তাকে গ্রেপ্তার করে। এর আগে এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় নিহত আবু তাহেরের ভাই নুরুল আলম বাদী হয়ে হাছিনা আক্তার ও প্রতিবেশী মাহিন উদ্দিনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরপর এলাকাবাসীর কাছ থেকে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে পরকীয়ার বিষয়টি মাথায় নিয়ে পুলিশ তদন্ত শুরু করে। প্রতিবেশীরা জানায়, হাছিনা মানুষের বাসায় বুয়ার কাজ করতেন। আর স্বামী আবু তাহের গুদাম শ্রমিকের কাজ করতেন। যে গুদামে তাহের শ্রমিকের কাজ করতেন সেই গুদামের শ্রমিক নেতা ছিলেন নোয়াখালীর সুবর্ণচর এলাকার বাসিন্দা মাহিন উদ্দিন। তার বাসাও তাহেরের পাশাপাশি হওয়ার সুবাধে মাহিন উদ্দিনের সঙ্গে হাছিনার পরকীয়ার সম্পর্ক গড়ে উঠে। গত ১৭ আগস্ট হাছিনাকে একটি লাল রঙের শাড়ি উপহার দেন মাহিন উদ্দিন। ওই লাল শাড়ি পরে হাছিনা বাইরে বের হতে চাইলে স্ত্রীর পরনে নতুন লাল শাড়ি দেখে মাথা খারাপ হয়ে যায় আবু তাহেরের। তাহেরের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে হাছিনা এক পর্যায়ে বলে সে যে বাসায় বুয়ার কাজ করে ওই বাসার মালিকের বউ তাকে ভালোবেসে কাপড়টি উপহার দিয়েছে। কিন্তু আবু তাহের কথাটি বিশ্বাস করতে নারাজ, সে হাছিনাকে বলে তার কোনো ঘনিষ্ঠ বন্ধু শাড়িটি দিয়েছে। এ ধরনের কথাবার্তায় দুজনের মধ্যে তুমুল ঝগড়া হয়। হাছিনাকে মারধরও করে তাহের। বিলকিস নামে এক প্রতিবেশী জানায়, গুদাম শ্রমিক নেতা মাহিন উদ্দিন মাঝে মধ্যে হাছিনার ঘরে আসতো। মাহিন উদ্দিনের সঙ্গে অনৈতিক কিছু দেখে ফেলার কারণে তাহের ও তার শিশুকন্যা খুনের শিকার হয়েছে বলে তার ধারণা। এদিকে ঘটনার পর থেকে গুদাম শ্রমিক নেতা মাহিন উদ্দিন এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেলেও থানায় নিয়ে স্ত্রী হাছিনাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে পুলিশ মাহিন উদ্দিনের অবস্থান নিশ্চিত হয়। নোয়াখালীতে অভিযান চালিয়ে শনিবার রাতেই তাকে গ্রেপ্তার করে। সিএমপি’র বন্দর জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মো. কামরুল ইসলাম জানান, লাশ উদ্ধারের পর গলায় ছুরিকাঘাতের দাগ ও রক্তমাখা ছুরি উদ্ধারে প্রথম থেকেই এটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড ধরে নিয়েই পুলিশ এ হত্যাকান্ডের তদন্ত শুরু করে। তাই স্ত্রী হাছিনা আক্তারসহ চারজনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়। আটকের পর পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে স্ত্রী হাছিনা বেগম একেক সময় একেকরকম তথ্য দিয়ে পুলিশকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। এতে পুলিশের আরো সন্দেহ হলে এলাকাবাসীর কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী পরকীয়াকে কেন্দ্র করে অনুসন্ধানে নামে। এ ছাড়া স্ত্রী হাছিনা আক্তারের মোবাইল ফোনে খুনের দিন এবং এর দুইদিন আগ পর্যন্ত কাদের সঙ্গে বেশি কথা হয়েছে তা চিহ্নিত করে খুনের কারণ এবং খুনের অবস্থান অনেকটা নিশ্চিত হয় পুলিশ।
সংবাদপত্রে এ খবর পড়ে আমি অত্যন্ত মর্মাহত হয়েছি। একজন মা কেমন করে পরকীয়া প্রেমিকের সাথে মিলে নিজের চার বছর বয়সী সন্তানকে হত্যা করতে পারে। তাকে আমি মা না বলে ডাইনী বলতে পারি। একই সাথে সে তার স্বামীকেও খুন করেছে। এমন নিষ্ঠুর নারীর কঠোর শাস্তি হওয়া প্রয়োজন। সেই সাথে তার পরকীয়া প্রেমিকেরও কঠিন শাস্তি দাবি করছি।

মোঃ টিপু তালুকদার
ফায়ার সার্ভিস রোড, বেবিস্ট্যান্ড, হবিগঞ্জ।