তোমার স্পর্শে বেঁচে থাকার ইচ্ছে জাগে

ডাঃ মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহাব
আপনি যদি কারো চেনা ব্যক্তি হন অনেক দূর থেকেই আপনাকে একজন অনায়াসে চিনে ফেলবে। তদ্রুপ আপনিও মিস্ করবেন না।
শরীরের বাহ্যিক গঠন, অবয়ব, সৌন্দর্য এবং শারীরিক আকর্ষণ কিন্তু নির্ভর করে শরীরের আবরণ তথা চর্ম নামক অঙ্গের উপরই।
একবার ভেবে দেখুন, আপনার শরীরের আবরণ খুলে ফেলা হল, দেখতে কেমন লাগবে? সবাই এমনতর হলে কাউকেই কখনো আলাদা করা সম্ভব হবে না। কোন এক পারস্য কবি তার কবিতায় প্রিয়ার কপোলের তিলকের জন্য তাসখন্দ সমরকন্দ দিয়ে দিতে চাইলে রাজা উনাকে ডেকে কাঁঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছিলেন। সে সৌন্দর্য্যও কেবল চর্ম নামক আবরণের জন্যেই।
এবার আসল কথায় আসা যাক। চর্ম কি কেবল শরীরের একটা আবরণ মাত্র? মোটেও নয়। যে চর্মকে অতি সহজেই আপনি শরীর থেকে আলাদা করে ফেলতে পারেন তার গুরুত্ব অন্যান্য অঙ্গের মতই এমনকি আরো বেশি। আপনি একটি বাহু, একটি চক্ষু অথবা একটি কিডনি ফেলে দিলেও বাঁচবেন কিন্ত শরীরের আবরণ ফেলে দিয়ে বেশিক্ষণ বাঁচতে পারবেন না।
শরীরের চামড়া কিন্তু একটি অত্যন্ত জটিল অঙ্গ। বিস্তারিত সম্ভব না হলেও কিছু পয়েন্ট উল্লেখ করা যেতে পারে…
গায়ের রং বা বর্ণ যা নিয়ে বিশ্ব তোলপাড় তা কিন্তু চর্মে বিদ্যমান মেলানোসাইট কোষের কারণেই যা মেলানিন নামক এক প্রকার কাল পদার্থ তৈরি করে। মেলানিন বেশি হলে মানুষ কাল এবং কম হলে ফর্সা হয়। মন খারাপ করার কোন কারণ নেই, মেলানিনের অনেক গুনাগুনও রয়েছে। অনেক কঠিন বালাই রয়েছে যা শ্বেতাঙ্গদের তুলনায় নিগ্রোদের অনেক কম হয়। তাছাড়া ওবামা কাল, ট্রাম্প শ্বেত বর্ণের, কে বেশি সুন্দর! কঠিন প্রশ্ন।
প্রতিটি লোমকূপের সাথে রয়েছে সিবাসিয়াস নামক এক ধরনের গ্রন্থি যা আমার আপনার ত্বককে তেলতেলে বা আকর্ষণীয় করে তুলে। মায়ের কাছে নবজাতক শিশুর গায়ের অতি প্রিয় সোঁদা গন্ধ ঐ সিবাসিয়াস গ্রন্থির জন্যেই। ‘তোমার স্পর্শে বেঁচে থাকার ইচ্ছে জাগে’ তাও হয়ত একই কারণে।
শরীরে রয়েছে অপরিমিত সুইট গ্ল্যান্ড। প্রতিদিন অন্তত ৫০০মিলি পরিমাণ অদৃশ্য পানি শরীর থেকে নিস্বঃরণ হচ্ছে যা আমাদের শরীরের তাপমাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ করে চলেছে যেমন করে অত্যধিক গরমে আপনার পোষা কুকুরটি তার ভিজা জিহ্বাটি ঝুলিয়ে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
একটি ছোট্ট শিশু একবার আগুনে হাত দিলে পুনরায় দিতে চাইবে কি? মোটেও না, তা গরম অনুভূতির কারণেই। এমন পরিস্থিতিতে হাতখানা সরিয়ে নিবে। কারণ ঠান্ডা গরম অনুভূতি সম্পন্ন স্নায়ুপ্রান্ত কিন্তু চামড়াতেই বিদ্যমান।
তদ্রুপ pain sensation বা ব্যথার অনুভুতিও আমাদের জন্য একপ্রকার নিয়ামত বৈকি! একইভাবে অনেক্ষণ শুয়ে থাকলে আমরা যে কারণে অবচেতনমনেই অবস্থান পরিবর্তন করি তা হল সেই pain sensation. শরীরের চাপে রক্ত চলাচল কমে গেলেই এ ব্যথার অনুভূতি শুরু হয়। পাশ না ফিরালে নিঃসন্দেহে ঐ স্থানে পচন বা bedsore শুরু হয়ে যাবে।
Skin শুধু বিভিন্ন রোগের barrier হিসেবেই কাজ করে না বরং রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে বিরাট ভূমিকা পালন করে। মনে পড়ে এমবিবিএস ৪র্থ বর্ষে আমাদের প্রয়াত শিক্ষক প্রফেসর ডাঃ এম,এ, হাকিম স্যার মাসাধিককাল skin এর immunity সম্পর্কে পড়িয়েছিলেন। skin এর Langerhan’s cell, dendritic cell, lymphoid tissue রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে কি ভূমিকা রাখে তা দু’এক লাইনে বলা বা লিখা সম্ভব নয়।
একবার ‘ইত্যাদি’ অনুষ্ঠানে দেখেছিলাম, এক অন্ধ ভিক্ষুক মিরপুর রোডের যে কোন বাসের গায়ে হাত রেখে বলতে পারত এটা কত নম্বর বাস এবং কোন রুটের। অতএব গুরুত্বপূর্ণ ষষ্ঠেন্দ্রীয় হিসেবেও skin এর ভূমিকা যে কি তা অনস্বীকার্য।
নিঃসন্দেহে এ ষষ্ঠেন্দ্রীয় আমাদের জন্য পরম করুণাময়ের পক্ষ থেকে এক অনন্য সম্পদ।।