
হবিগঞ্জের মুখ হবিগঞ্জের বাইরে
অবরুদ্ধ থাকার পর সেনাবাহিনী ও পুলিশের পাহারায় গোপালগঞ্জ ছাড়েন এনসিপির নেতারা ॥ রাত থেকে কারফিউ ॥ এনসিপির ওপর হামলাকারীদের ছাড় দেবে না অন্তর্বর্তী সরকার ॥ সারা দেশে জামায়াতের বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা ॥ নাহিদের ঘোষণা ‘লড়াই চলবে’
স্টাফ রিপোর্টার ॥ বুধবার বিকেলে গোপালগঞ্জে সভা শেষে ফেরার পথে এনসিপির গাড়িবহরে হামলার ঘটনা ঘটে। কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়া আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এ হামলা চালায় বলে জানা যায়। এসময় গোপালগঞ্জ রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এর আগে দুপুর দেড়টার দিকে গোপালগঞ্জ শহরের পৌরপার্ক এলাকায় আয়োজিত এনসিপির সমাবেশের মঞ্চেও হামলা চালায় ছাত্রলীগ। সমাবেশ মঞ্চে থাকা সাউন্ড বক্স, মাইক, চেয়ার ভাঙচুরসহ উপস্থিত এনসিপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করা হয়। পরে পৌরপার্ক এলাকা ত্যাগ করার কিছু সময় পর হামলার মুখে পড়ে এনসিপির গাড়িবহর। এ সময় গোপালগঞ্জ পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন এনসিপির নেতারা। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশের পাহারায় গোপালগঞ্জ ছাড়েন এনসিপির নেতারা। বুধবার (১৬ জুলাই) বিকেল ৫টা পরে গোপালগঞ্জ ত্যাগ করেন তারা। এনসিপি নেতাদের মধ্যে রয়েছেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, আখতার হোসেন, হাসনাত আব্দুল্লাহ, সারজিস আলমসহ শীর্ষ নেতারা।
গোপালগঞ্জে সংঘর্ষের ঘটনায় চার জনের মৃতদেহ সদর হাসপাতালে এসেছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। গোপালগঞ্জের ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. জীবিতেশ বিশ্বাস সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে গণমাধ্যম বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত চার জনের মৃতদেহ হাসপাতালে এসেছে। তাদের শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ওই সংঘর্ষের ঘটনায় আহত অনেকে চিকিৎসা নিলেও তাদের সঠিক সংখ্যা এখনো জানা যায়নি।
এদিকে, গোপালগঞ্জে এনসিপির সভা ঘিরে কয়েক ঘণ্টা ধরে সংঘর্ষের পর কারফিউ জারি করেছে সরকার। বুধবার (১৬ জুলাই) রাত ৮টা থেকে পরদিন (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কারফিউ জারি করা হয়েছে।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পদযাত্রা ও সমাবেশে হামলার ঘটনায় অভিযুক্তদের ছাড় দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। বুধবার (১৬ জুলাই) এক বিবৃতিতে এ কথা জানানো হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘গোপালগঞ্জে আজ যে সহিংসতা, তা সম্পূর্ণরূপে অগ্রহণযোগ্য। গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে তরুণ এই নাগরিকদের শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করতে বাধা দেওয়া তাদের মৌলিক অধিকারের চরম লঙ্ঘন। এনসিপি সদস্য, পুলিশ ও গণমাধ্যমের ওপর নৃশংস হামলা চালানো হয়েছে, তাদের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে এবং সহিংস আক্রমণ করা হয়েছে।’ ‘এই হামলার ঘটনায় অভিযুক্ত নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ কর্মীরা ছাড় পাবে না। অপরাধীদের দ্রুত চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে।
গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশ ঘিরে আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের দফায় দফায় হামলার ঘটনায় সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে জামায়াতে ইসলামী। দলটির সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার এক বিবৃতিতে জানান, এনসিপির ওপর ফ্যাসিস্ট ও নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের হামলা, অগ্নিসংযোগ ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে ১৭ জুলাই (বৃহস্পতিবার) দেশের সব জেলা ও মহানগরীতে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হবে।
গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশ ঘিরে আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের দফায় দফায় হামলার পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় যুবশক্তির ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। একইসঙ্গে তিনি ‘লড়াই চলবে’ বলে ঘোষণা দিয়েছেন। এনসিপির ভারিফায়েড ফেসবুক পেজে পোস্ট করা একটি ফটোকার্ডে এ তথ্য জানানো হয়। এতে লেখা হয়, ‘সারা দেশে রাজপথের ব্লকেড সরিয়ে নিন। রাস্তার একপাশে অবস্থান করুন। লড়াই চলবে।’