ডায়াবেটিক হাসপাতালের কাছ থেকে উচ্ছেদ শুরু হবে। পুরাতন খোয়াই নদীর হরিপুর পর্যন্ত দখল হওয়া নদী পুনরুদ্ধার করা হবে। উচ্ছেদ অভিযান শেষ হতে তিন মাস সময় লেগে যেতে পারে। নদী দখলমুক্ত করতে গাছ কাটতে সমর্থন দিয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন-বাপা। নদীর অভ্যন্তরে থাকা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা যাতে ক্ষুন্ন না হয় সেদিক খেয়াল রেখে এসব প্রতিষ্ঠান সরিয়ে নেয়া হবে। সরকারের নীতি নির্ধারণী সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে অপসারণ করা হবে সরকারি স্থাপনা
এসএম সুরুজ আলী ॥ আজ সোমবার শুরু হচ্ছে হবিগঞ্জ শহরের পুরাতন খোয়াই নদী থেকে দখলদারদের উচ্ছেদ অভিযান। সকাল ১০টায় মাহমুদাবাদ এলাকায় ডায়াবেটিক হাসপাতালের কাছ থেকে এ উচ্ছেদ অভিযান শুরু হবে। রবিবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করে উচ্ছেদের নানা দিক তুলে ধরেছেন জেলা প্রশাসক মাহমুদুল কবীর মুরাদ। জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মো. নূরুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) তারেক মোহাম্মদ জাকারিয়া, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মোহাম্মদ শামছুজ্জামান, হবিগঞ্জ প্রেসক্লাব সভাপতি হারুনুর রশিদ চৌধুরী, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) জেলা সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন, পিডিবি’র নির্বাহী প্রকৌশলী, সরকারি বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তাবৃন্দ ও সাংবাদিকবৃন্দ।
সংবাদ সম্মেলনে জেলা প্রশাসক মাহমুদুল কবীর মুরাদ জানান, নদী বা খাল বন্দোবস্ত দেয়ার কোন বিধান নেই। অতএব পুরাতন খোয়াই নদীর সম্পূর্ণ অংশ থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা হবে। কাউকে এক ইঞ্চি জমিও ছাড় দেয়া হবে না। পুরাতন খোয়াই নদী উচ্ছেদ কার্যক্রমকে সফলভাবে সম্পন্ন করতে তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি বলেন, উচ্ছেদ কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ার পর পরিকল্পনাধীন খোয়াই রিভার প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে নদী পুনখনন, তীর রক্ষা ও বনায়নের মাধ্যমে নান্দনিক রূপ দেয়া হবে। পরবর্তীতে উপজেলা পর্যায়েও সরকারি জমি থেকে সব অবৈধ দখলদারকে উচ্ছেদ করা হবে। নদী দখল করতে গিয়ে অনেকেই স্থাপনা নির্মাণের পাশাপাশি বাগান তৈরি করেছেন। বাগান উচ্ছেদ করতে গেলেই পরিবেশবিদগণ আন্দোলন করবেন। এই জন্য তিনি পরিবেশ আন্দোলনকারীদের সাথে আলাপ করার কথা জানান। এ সময় বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) জেলা সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল জানান, নদী রক্ষার স্বার্থে বাগান বাড়ির গাছ কাটলেও তাদের কোন আপত্তি নেই। জেলা প্রশাসক আরো বলেন-নদীর জায়গায় মসিজদ, মাদ্রাসাও গড়ে উঠেছে। নদীর অভ্যন্তরে থাকা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা যাতে ক্ষুন্ন না হয় সেদিক খেয়াল রেখে এসব প্রতিষ্ঠান সরিয়ে নেয়া হবে। সরকারের নীতি নির্ধারণী সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে অপসারণ করা হবে সরকারি স্থাপনা। আর নদীতে যেসব রাস্তা রয়েছে সেগুলো এখন জনগণের চলাচলের সুবিধার্থে থাকবে। পরবর্তীতে সেই রাস্তাগুলো অপসারণ করে নতুন রাস্তা নির্মাণ করা হবে। তিনি আরো বলেন- প্রধানমন্ত্রীর একটি প্রকল্পের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের আবাসন ব্যবস্থা করা হবে। যেহেতু হবিগঞ্জ পৌরসভায় অভিযান হবে। এ হিসেবে পৌর কর্তৃপক্ষ উচ্ছেদের এক্সেভেটর ও উচ্ছেদ কার্যক্রমের যাবতীয় খরচ বহন করবে। তিনি বলেন- খোয়াই রিভার সিস্টেম প্রকল্পটি প্রি-একনেক ও একনেকে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। অনুমোদান হলেই প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজ শুরু হবে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) তারেক মোহাম্মদ জাকারিয়া বলেন, মাছুলিয়া পয়েন্ট থেকে এসএ রেকর্ড অনুযায়ী নদীর সীমানা নির্ধারণ করা হবে। সে অনুযায়ী যারাই অবৈধ দখলকারী তাদেরকে উচ্ছেদ করা হবে। এ ক্ষেত্রে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে হবিগঞ্জ সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাসুদ রানা জানান, জেলা প্রশাসকের নির্দেশে শহরের শায়েস্তানগর ও মাহমুদাবাদ এলাকায় পুরাতন খোয়াই নদীর জায়গা চিহ্নিত ও মাপজোক করা হয়েছে। আমরা কোন তালিকা তৈরি করিনি। তবে উচ্ছেদ অভিযান দ্রুত বাস্তবায়ন করার কাজ সম্পন্ন করে যাচ্ছি।
বাপা জেলা সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল জানান, নদী মাপজোকের পাশাপাশি যেন স্থায়ী সীমানা পিলার দেয়া হয়। কাউকে যেন ছাড় দেয়া না হয়। প্রয়োজনে ক্ষেত্রবিশেষে যারা নদী এতদিন অবৈধভাবে ভোগ দখল করেছে তাদের বিরুদ্ধে যেন আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হয়। নদীর পুরো অংশ উদ্ধারের দাবি জানিয়েছেন তিনি।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জহিরুল হক শাকিল জানান, পুরোনো খোয়াই নদীটি উদ্ধারের দাবি হবিগঞ্জবাসীর দীর্ঘদিনের। কিন্তু বিভিন্ন সময় শহরবাসী আন্দোলন সংগ্রাম করলেও নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে সেটি হয়ে উঠেনি। এবার প্রশাসন অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদে যে উদ্যোগ নিয়েছে তা প্রশংসার দাবি রাখে। তিনি বলেন, নদীটি উদ্ধারের মাধ্যমে জেলা শহরের চিত্র পাল্টে যেতে পারে। আমাদের প্রত্যাশা থাকবে যেন নদীর পুরো অংশটিই উদ্ধার করা হয়। এখানে যেন কাউকেই ছাড় দেয়া না হয়। যদি এমনটি করতে পারেন তবে জেলাবাসী দীর্ঘদিন বর্তমান প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মনে রাখবে।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, দুই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়ন করা হবে খোয়াই রিভার সিস্টেম উন্নয়ন প্রকল্প। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী এ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রকল্প বাস্তবায়নের স্ক্যাচম্যাপ তৈরি করেছেন। প্রাথমিক পর্যায়ে সদর হাসপাতাল থেকে নাতিরাবাদ পর্যন্ত ২ কিলোমিটার ৩১৫ মিটার পুরাতন খোয়াই নদীকে সংস্কার করে নান্দনিক করা হবে। অনেকটা ঢাকার হাতিরঝিল প্রকল্পের আদলে এটি করা হবে। নদীর দু’পাড় উচু করে বাঁধ নির্মাণ, দুই তীরে রাস্তা, ৫টি ব্রিজ নির্মাণ ও গাছ লাগানো হবে। পরবর্তীতে হবিগঞ্জ পৌরসভা সেখানে পার্ক ও শিশুদের বিনোদনের ব্যবস্থা করবে। এ প্রকল্পের আওতায় পুরাতন খোয়াই নদীর দু’ধারে প্রশস্ত ওয়াকওয়ে, ওয়াটার পিউরিফিকেশন পাম্প স্থাপন, পর্যটকদের জন্য বোটিং ব্যবস্থা, এলইডি সড়ক বাতি স্থাপন ও শিশুদের জন্য কিডস কর্ণার।