স্টাফ রিপোর্টার ॥ হবিগঞ্জে সরকারের ধান চাল সংগ্রহে অনিয়মের অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়েছে। সোমবার তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক মাধবপুর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আবুল হোসেনের নেতৃত্বে কমিটির সদস্যরা সরেজমিনে অভিযুক্ত অটো রাইচ মিলে গিয়ে তদন্ত কাজ শুরু করেন। তদন্ত কমিটির সদস্যরা জনতা অটো রাইচ মিল চালু আছে কি-না দেখেন এবং জনতা অটো রাইচ মিলের মালিক আব্দুর রহমানের চাল সরবরাহের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করেন। এর পূর্বে অভিযোগকারী মেসার্স এনএস অটো রাইচ মিলের স্বত্ত্বাধিকারী শংকর পালের অফিসে গিয়ে এ ব্যাপারে তাঁর বক্তব্য নেন এবং তার কাছে থাকা কাগজপত্র দেখেন। তদন্তকালে উপস্থিত ছিলেন তদন্ত কমিটির সদস্য বাহুবল উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নজীর আহমেদ, খাদ্য পরিদর্শক প্রতাব কুমার সাহা, খাদ্য পরিদর্শক কালিপদ সাহা ও চুনারুঘাটের খাদ্য পরিদর্শক দীপক সাহা। এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটির সদস্য খাদ্য পরিদর্শক কালিপদ সাহা জানান, শুধুমাত্র আমরা তদন্ত কাজ শুরু করেছি। তদন্ত শেষে দুয়েক দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করবে তদন্ত কমিটি। এ ব্যাপারে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. আবদুস ছালাম জানান, নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত শেষে এর সিদ্ধান্ত গণমাধ্যমে জানানো হবে। আশা করি কয়েকদিনের মধ্যেই তদন্ত প্রতিবেদন দিতে পারবে তদন্ত কমিটি।
সূত্র জানায়, গত ২৫ এপ্রিল সিলেট আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক অভ্যন্তরীণ বোরো অভিযান (২০১৯) মৌসুমে হবিগঞ্জ জেলার ২৬টি মিলের মাধ্যমে ৮ হাজার ৬৬৭টি মেট্রিক টন সিদ্ধ চাউল সংগ্রহের জন্য মিলগুলোকে চাউল প্রদানের অনুমতি দেন। সরকার নির্ধারিত মূল্য হিসেবে প্রতি মেট্রিক মোটা চাউলের দাম ৩৬ হাজার টাকা আর খোলা বাজারে প্রতি মেট্রিক চালের দাম ২৫ হাজার টাকা।
সম্প্রতি সিলেটের আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কাছে হবিগঞ্জ-নবীগঞ্জ রোডস্থ মেসার্স এসএন অটো রাইচ মিলের স্বত্বাধিকারী শংকর পাল মিল মালিকদের কাছ থেকে চাল সরবরাহের ব্যাপারে অনিয়মের অভিযোগ দায়ের করেন। সিলেটের আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করার জন্য জেলা খাদ্য কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন। অটো রাইচ মিল ব্যবসায়ী শংকর পাল তার অভিযোগে উল্লেখ করেন তার মিলের সক্ষমতা সম্পন্ন মেসার্স জনতা ড্রাইয়ার অটোমেটিক রাইচ মিল। এ মিলের পাক্ষিক ক্ষমতার ৪৬৬ মেট্রিক টন সিদ্ধ মোটা চাল বরাদ্দের স্থলে ১ হাজার ৪২৯ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ করা হয়েছে। ১ হাজার ৪২৯ মেট্রিক টন চালের সরকার নির্ধারিত মূল্য ৫ কোটি ১৪ লাখ ৪৪ হাজার টাকা। খোলা বাজারে উক্ত চালের মূল্য ৩ কোটি ৫৭ লাখ ২৫ হাজার টাকা। চালের গুনগত মান ভাল হলে এর চেয়ে একটু বেশি দাম হবে। চালের মান ভাল না হলে দাম আরো কম হবে।
সেই স্থলে মিলটির মালিক উক্ত মিলের নামের পূর্বে বরাদ্দকৃত চালই সরবরাহ করেননি। কিন্তু উক্ত মিলের নামে অতিরিক্ত চাল বরাদ্দ প্রদান করে নীতিমালা লঙ্ঘন করা হয়েছে। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন- তার মিলটি চালু করতে ১৭০ কিলোওয়াট বিদ্যুত প্রয়োজন হয় এবং তার মিলে ৪৬৬ মেট্রিক টন চাল উৎপাদন করতে ৫ লাখ ৪৬ হাজার ৭৬৭ টাকা বিদ্যুত বিল বাবদ ব্যয় হয়েছে। পক্ষান্তরে জনতা ড্রাইয়ার অটোমেটিক রাইচ মিলে ১ লাখ ১৯ হাজার ৯৯৮ টাকা বিলে কিভাবে ১ হাজার ৪২৯ মেট্রিক টন চাল উৎপাদন সম্ভব এ বিষয় নিয়ে তিনি সন্দেহ পোষণ করেন। তিনি এ বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানান। সোমবার তিনি অভিযোগের অনুলিপি হবিগঞ্জ দুর্নীতি দমন কমিশনের উপ-পরিচালকের কাছে দিয়েছেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের উপ-পরিচালক এ বিষয়টি তদন্ত করে দেখবেন বলে জানিয়েছেন।