স্টাফ রিপোর্টার ॥ হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার অলিপুর থেকে শুরু করে মাধবপুর উপজেলা পর্যন্ত ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের উভয় পাশে অর্ধশতাধিক শিল্প কারখানা রয়েছে। এসব কারখানার অধিকাংশতেই পাওয়া গেছে এডিস মশার লার্ভা। শুধুমাত্র স্টার সিরামিক কোম্পানীরই ৩৯ শ্রমিক ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছে। হবিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের তিন শ্রমিক ভর্তি হয়েছে হবিগঞ্জ আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালে। শিল্প কারখানার এই সমস্যা নিয়ে শনিবার সকালে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজন করা হয় মতবিনিময় সভা। বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা এবং শিল্প এলাকার হোটেল-রেস্টুরেন্টের মালিকরা সভায় অংশ নেন।
সভায় ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. শোভন বসাক জানান, হবিগঞ্জ জেলায় ২৮ জুলাই থেকে এ পর্যন্ত ১২৩ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এখনও ভর্তি হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন ১৯ জন। শুরুতে যে ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যেত তারা ছিলেন ঢাকা ফেরত। এখন এমনও রোগী পাওয়া যাচ্ছে যারা দুই মাসের মাঝে ঢাকায় যাননি। এর কারণ অনুসন্ধানে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ বিভিন্ন এলাকায় সার্ভে শুরু করে। ২৯ আগস্ট হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার স্টার সিরামিক ফ্যাক্টরি পরিদর্শন করে এডিসের লার্ভা পাওয়া গেছে। সেখানে ১৫০টি কন্টিনার পাওয়া যায়। সেখান থেকে পানির নমুনা এনে পরীক্ষার পর ১৫টি লার্ভা পাওয়া গেছে। শিল্প এলাকার মহিবুর রহমান নামে এক ব্যক্তির দোকানে পাওয়া যায় ৫টি কন্টিনার। সেগুলো থেকে পানি এনে পরীক্ষার পর পাওয়া গেছে ২টি লার্ভা। রবিবার থেকে বিভিন্ন এলাকায় এই নমুনা সংগ্রহ করা হবে। চাইলে কোম্পানীগুলো নিজেরাই নমুনা নিয়ে আসতে পারে। প্রয়োজনে শিল্পকারখানায় কীটতত্ববিদ নিয়োগ দেয়া প্রয়োজন। যদি এডিস মশার এই উৎস নষ্ট না করা যায় তাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। কারণ মশা মারা গেলেও লার্ভা জীবিত থাকে এক থেকে দেড় বছর। যখনই সে অনুকুল পরিবেশ পাবে তখনই মশায় রূপান্তর হবে।
তিনি আরও জানান, স্টার সিরামিকে যখন আমরা নমুনা সংগ্রহে যাই তখন তারা আন্তরিকতা দেখায়নি। পুরো ফ্যাক্টরি দেখতে না পেরে একটি নির্দিষ্ট স্থান থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, হবিগঞ্জের শিল্প এলাকার ১৭জন ডেঙ্গু রোগী হবিগঞ্জ আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মাঝে স্টার সিরামিকের ১৪ জন এবং হবিগঞ্জ প্রাণ-আরএফএল এর ৩ জন। স্টার সিরামিকের ৭ জন এখনও হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
এদিকে অপর একটি সূত্রে জানা গেছে স্টার সিরামিকের ২৫জন সিলেটের এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। তবে স্টার সিরামিকের কর্মকর্তা হাসান আকন্দ এই তথ্য মেনে নেননি। এ বিষয়ে মোবাইল ফোনে তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তার কোম্পানীর ৪/৫ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। তিনি স্বাস্থ্য বিভাগকে অসহযোগিতার কথাও অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, যেদিন স্বাস্থ্য বিভাগের লোকজন আসে তাদেরকে আমাদের প্রশাসনিক ব্যবস্থাপক ফটকে অভ্যর্থনা জানান। আপ্যায়ন করার পর নিজে সাথে করে কোম্পানীর ভিতর ঘুরে দেখান। তারা নমুনা সংগ্রহ করে। এর চেয়ে বেশী আমরা আর কি করতে পারি। আর জেলা প্রশাসনের সভায় আমন্ত্রণ না পাওয়ায় যেতে পারেননি উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা গেলে আমাদের বক্তব্য জানাতে পারতাম।
মতবিনিময় সভায় সভাপতির বক্তৃতায় জেলা প্রশাসক মাহমুদুল কবীর মুরাদ বলেন, ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব কমাতে সকলে মিলে কাজ করতে হবে। শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো যেহেতু কোন পৌর এলাকায় অবস্থিত নয় তাই তাদেরকে নিজেদের উদ্যোগে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করতে হবে। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসন অভিযান পরিচালনা করবে। সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রত্যেক কোম্পানীকে আলাদাভাবে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন তিনি। একই সাথে কারখানার ডাম্পিং স্থানে যাতে পানি না জমে সেদিকেও দৃষ্টি দেয়ার আহবান জানান তিনি।
মতবিনিময় সভায় আরও বক্তৃতা করেন স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মোঃ নুরুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এস এম ফজলুল হক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাজস্ব তারেক মোহাম্মদ জাকারিয়া, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মর্জিনা আক্তার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শিক্ষা ও আইসিটি মোঃ সামছুজ্জামান, হবিগঞ্জ আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. রথীন্দ্র চন্দ্র দেব, শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমি বেগম, হবিগঞ্জ প্রেসক্লাব সভাপতি হারুনুর রশিদ চৌধুরী, জনকন্ঠ প্রতিনিধি রফিকুল হাসান চৌধুরী তুহিন, যমুনা টিভি প্রতিনিধি প্রদীপ দাশ সাগর প্রমূখ।
হবিগঞ্জের শিল্প এলাকায় ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেশী ॥ শুধুমাত্র স্টার সিরামিক কোম্পানীরই ৩৯ শ্রমিক ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছে ॥ শিল্প এলাকার এডিস মশার লার্ভা ধ্বংস করা না গেলে সারা জেলায় ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে স্বাস্থ্য বিভাগের আশঙ্কা
© স্বত্ব দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ ২০১৯
ওয়েবসাইটটি তৈরী করেছে ThemesBazar.Com