মাকে হারিয়ে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে শিশু তাহমিদার ভবিষ্যত

আক্তার হোসেন আলহাদী ॥ বানিয়াচঙ্গে স্বামীগৃহে গলায় ফাঁস দিয়ে মারা গেছে এক গৃহবধূ। ঘটনাটি ঘটেছে ১৬ ফেব্রুয়ারি (শুক্রবার সকাল ১০টায় বানিয়াচং উপজেলা সদরের ২নং উত্তর-পশ্চিম ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের বন্দের বাড়ি কাজিপুর গ্রামে। এলাকাবাসী সূত্র জানায়, ওই গ্রামে মৃত মজম উল্লার বড় ছেলে মোঃ দুলাল মিয়া (৩২) এর সাথে বিয়ে হয় মোছাঃ সাজনা আক্তারের (২২)। সাজনা আক্তার প্রায় পাচ-ছয় মাস আগে একবার তার স্বামী ও কন্যা সন্তান রেখে চলে যান বাবার বাড়িতে। সেখানে গিয়ে স্বামীকে ডিভোর্স দেন। কিন্তু কি কারণে চলে গিয়েছিলেন এবং স্বামীকে ডিভোর্স দেন তা আজো অজানা। পরবর্তিতে স্বামী দুলাল মিয়া ও তার পরিবার, আত্মীয়সজনসহ এলাকার মুরুব্বিরা মিলে তাকে বুঝিয়ে আবার আনা হয় স্বামীগৃহে। সুন্দরভাবে চলছিল তাদের সংসার, কখনো কোনো ঝগড়া বিবাদ হয়নি। তাদের তাহমিদা আক্তার নামের দেড় বছরের এক কন্যা সন্তান আছে। ঘটনার সময় দুলাল মিয়া ও তার ভাইয়েরা কেউই বাড়িতে ছিলেন না, তারা জীবিকা নির্বাহের জন্য রাজমিস্ত্রীর কাজে সিলেটে অবস্থান করছিলেন। দুলাল মিয়ার মা আনোয়ারা বিবি (৬০) মানুষের বাড়ি বাড়ি কাজ করে যা পান তা দিয়ে সংসার চালানোর কাজে সহযোগিতা করেন। তিনি প্রতিদিনের মত গতকাল মানুষের বাড়িতে কাজের জন্য সকালে বের হন। বাড়িতে কেউ না থাকার কারণে দুলালের স্ত্রী সাজনা আক্তার সবার অগোচরে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করলে প্রতিবেশীরা দেখে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান। কিন্তু কি কারণে গলায় ফাঁস দেন তা কেউই জানেন না।
প্রতিবেশী নুরুল ইসলামের ১০ বছর বয়সী কন্যা মরিয়াম আক্তার জানান, দুলালের মেয়ে তাহমিদার কান্না শোনে দুলালের স্ত্রী সাজনাকে সকাল ১০টার দিকে ডাক দেয়, কিন্তু কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে দরজায় ধাক্কা দেন। দরজা ভিতর থেকে লাগানো ছিলো, পরে সে জানালা খোলা দেখতে পেয়ে জানালা দিয়ে উকি মেরে দেখে দুলালের স্ত্রী ওড়না দিয়ে ঘরের তীরে ফাঁস লাগানো। তার চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসে। পরে দুলালের মা এসে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় ঘরের দরজা ভেঙ্গে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতাল নেওয়া হলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত সাজনা আক্তারের শাশুড়ি আনোয়ারা বিবি জানান, তিনি তার ছেলের একমাত্র মেয়ে (নাতিন) অসুস্থ থাকায় সকালবেলা নিজে রান্না করেন, এবং ছেলের বউকে নিয়ে একসাথে সকালের খাবার খেয়ে তিনি প্রতিদিনের ন্যায় লাকড়ি সংগ্রহ ও কাজের সন্ধানে হাওরে বের হয়ে যান, তখন প্রতিবেশী একটা বাচ্চা ছেলে দৌড়ে গিয়ে বলছে তোমাদের বাড়িতে একটা মহিলা গলায় ফাঁস লাগিয়েছে, পরে তিনি দৌড়ে বাড়িতে এসে দেখেন তার পুত্রবধূ দুলালের স্ত্রী ফাঁস লাগিয়েছে।
এ ব্যাপারে বানিয়াচং থানার অফিসার ইনচার্জ মো: দেলোয়ার হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান- ঘটনার খবর পাওয়ার সাথে সাথে পুলিশ সেখানে গেছে। লাশ হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে।