এসএম সুরুজ আলী ॥ হবিগঞ্জ-লাখাই হয়ে সরাইল-নাসিরনগর সড়কের উন্নয়ন কাজ বন্ধ রাখায় রাস্তার বিভিন্ন স্থান ভেঙ্গে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এতে যানবাহনে চলাচলে যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। রাস্তাটি দ্রুত সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী জনগণ। সূত্র জানায়, হবিগঞ্জ-লাখাই হয়ে সরাইল-নাসিরনগর সড়কের দূরত্ব মাত্র ২৫ কিলোমিটার। গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটি দিয়ে চলাচল করেন লাখাই, বানিয়াচং, বি-বাড়িয়ার নাসিরনগর ও কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম উপজেলার হাজার হাজার জনগণ। সড়কটি আঞ্চলিক মহাসড়ক হিসাবে ঢাকা-সিলেট বিকল্প সড়কে রূপান্তরের কাজ চলমান রয়েছে। ২০১৭ সালের শেষের দিকে একনেক রাস্তাটি উন্নয়নে প্রায় দেড়শ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন দেন। এর মধ্যে ৫টি ব্রীজ রয়েছে। গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে উন্নয়ন কাজ শুরু করে ৩টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান যথাক্রমে মোজাহার এন্টারপ্রাইজ, তাহের ব্রাদার্স লিঃ ও মাহফুজ খান।
মূলত হবিগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মোঃ আবু জাহিরের প্রচেষ্টায় সড়কের উন্নয়নে উল্লেখিত অর্থ বরাদ্দ দেয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। বলভদ্র সেতু থেকে কালাউক পর্যন্ত সড়কটি উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন হলেও বিভিন্ন স্থানে উন্নয়ন কাজের পাথর, বালু ফেলে কাজ বন্ধ করে রাখে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। এছাড়াও সড়কটি রিচি এলাকার সামনের দিক থেকে শুরু হয়ে বুল্লা বাজার পর্যন্ত বিভিন্ন স্থান ভেঙ্গে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই গর্তগুলোতে পানি জমে থাকছে। ভাঙ্গা ওই রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন যানবাহনগুলোতে দিনে কয়েকবার সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এতে চালক যে টাকা উপার্জন করছেন সেই টাকা গাড়ি মেরামতেই খরচ করতে হচ্ছে। বর্তমানে রাস্তাটির এমন করুণ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এতে মোটর সাইকেলে চলাচল করা অনেকটা বিপদজনক হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাস্তা ভাঙ্গা গর্তগুলো দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে অতিরিক্ত ঝাকনীতে গর্ভবর্তী মায়েদের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। অপরদিকে ২৫ কিলোমিটার এই রাস্তা অতিক্রম করতে সময় লাগছে দুই থেকে আড়াই ঘন্টা। প্রায়ই ছোট বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। খানাখন্দকে পরিপূর্ণ রাস্তাটি দিয়ে চলতে গিয়ে শারিরিক সমস্যায় ভোগছেন পেশাজীবী ও ব্যবসায়ীরা। দিনের পর দিন এই অসহনীয় অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে ইতিপূর্বে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছেন স্থানীয় জনগণ। কিন্তু এতেও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কোন টনক লড়ছে না। আবার যেটুকু রাস্তায় কার্পেটিং কাজ সম্পন্ন হয়েছে, সেই স্থানগুলোতে নি¤œমানের পাথর, বালু ব্যবহারসহ পাথরের সাথে যে পরিমাণ বালু মেশানোর কথা তার চেয়ে বেশি বালু মিশিয়ে কাজ করা হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। ইদানিং দ্রুত সংস্কারের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে রাস্তার করুণ অবস্থার ছবি পোস্ট করে প্রতিবাদী মূলক বক্তব্য লেখছেন অনেকেই। সরেজমিনে গিয়েও রাস্তার করুণ অবস্থা দেখা যায়।
এ ব্যাপারে এ রোড দিয়ে প্রতিদিন চলাচলকারী সিএনজি অটোরিক্সা চালক শাকিল মিয়া জানান, বর্তমানে রাস্তার বিভিন্ন স্থান ভেঙ্গে গর্ত সৃষ্টি হয়ে করুণ অবস্থার হয়েছে। এতে আমাদের চলাচল করতে গিয়ে প্রতিদিন গাড়ি মেরামত করতে হচ্ছে। অতিরিক্ত ঝাকুনীর কারণে অনেক চালক রাতে শরীরে প্রচন্ড ব্যথা অনুভব করেন। আবার অনেকেই অসুস্থ হয়ে যাচ্ছেন। এতে রাস্তা দিয়ে চলাচলে চালকরা যে টাকা উর্পাজন করেন সেই টাকা নিজের চিকিৎসা, গাড়ি মেরামতেই চলে যাচ্ছে। রাস্তাটি সংস্কার কাজ দ্রুত সম্পন্ন না করা হলে পরিবহন চালকরা গাড়ি বন্ধ রেখে অন্য পেশায় চলে যেতে বাধ্য হবে মন্তব্য করেন তিনি। বুল্লা বাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মনিরুল আলম জসিম জানান, ঠিকাদার রাস্তাটি উন্নয়ন কাজ বন্ধ রাখার কারণেই রাস্তা দিয়ে চলাচলে জনগণের দুর্ভোগ বেড়েছে। বর্তমানে রাস্তা দিয়ে যারা একবার চলাচল করেন তারা পরের বার চলাচলে অনীহা প্রকাশ করছেন। তিনি জনদুর্ভোগ লাঘবের জন্য রাস্তাটির সংস্কার কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানান।
এ ব্যাপারে লাখাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোসাঃ শাহিনা আক্তার জানান, বলভদ্র সেতু থেকে কালাউক পর্যন্ত রাস্তার উন্নয়ন কাজ শেষ হয়েছে। বুল্লা, করাব এলাকাসহ কয়েকটি স্থানে রাস্তার উন্নয়ন কাজ বন্ধ থাকার কারণে সাধারণ জনগণকে যাতায়াতে চরম দুর্ভোগের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। সম্প্রতি আইন-শৃঙ্খলা সভায় রাস্তাটিতে চলাচলে জনদুর্ভোগের কথা উপস্থাপন করেছি। আশা করছি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান শ্রীঘ্রই রাস্তাটির কাজ শুরু করবে।
এ ব্যাপারে লাখাই উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মুশফিউল আলম আজাদ জানান, হবিগঞ্জ-লাখাই-সরাইল-নাসিরনগর সড়কের উন্নয়ন কাজ বন্ধ থাকার বিষয়টি গত ১৪ আগস্ট আইন-শৃঙ্খলা সভায় উপস্থাপন করেছি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ রাস্তার উন্নয়ন কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য ঠিকাদারের সাথে যোগাযোগ করছেন। এছাড়াও এমপি অ্যাডভোকেট মোঃ আবু জাহির রাস্তার উন্নয়ন কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য চীফ ইঞ্জিনিয়ারের সাথে কথা বলেছেন। তিনি রাস্তার উন্নয়ন কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশ দিয়েছেন বলে এমপি আবু জাহিরকে জানিয়েছেন। রাস্তার উন্নয়ন কাজ দ্রুত শেষ করা না হলে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে কর্তৃপক্ষ। এদিকে সড়কটির উন্নয়ন দ্রুত শেষ করে জনদুর্ভোগ লাঘবের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ বন্ধ করে দিয়েছে
© স্বত্ব দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ ২০১৯
ওয়েবসাইটটি তৈরী করেছে ThemesBazar.Com