দিবসটি পালনে হবিগঞ্জে নানা কর্মসূচি

মঈন উদ্দিন আহমেদ ॥ হিন্দু সম্প্রদায়ের দেবতা ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শুভ জন্মতিথি আজ শুক্রবার। শাস্ত্রমতে, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ জন্মগ্রহণ করেছিলেন ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে। তাঁর জন্মতিথিকে জন্মাষ্টমী হিসেবে উদযাপন করা হয়। দেশের হিন্দু সম্প্রদায় ভাবগাম্ভীর্য ও উৎসবের মধ্য দিয়ে আজ জন্মাষ্টমী উদযাপন করবে। হিন্দুধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, প্রায় সাড়ে ৫ হাজার বছর আগে দ্বাপর যুগে ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে শ্রীকৃষ্ণ স্বর্গ থেকে পৃথিবীতে আবির্ভূত হন। অত্যাচারী ও দুর্জনের বিরুদ্ধে শান্তিপ্রিয় সাধুজনের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কংসের কারাগারে জন্ম নেন তিনি। পাশবিক শক্তি যখন ন্যায়, নীতি, সত্য ও সুন্দরকে গ্রাস করতে উদ্যত হয়, তখন সেই অশুভ শক্তিকে দমন করে কল্যাণ ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য অবতার হিসেবে শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব ঘটে। সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তাই ভগবানের আসনে অধিষ্ঠিত শ্রীকৃষ্ণ। হিন্দু পঞ্জিকা মতে, সৌর ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে যখন রোহিণী নক্ষত্রের প্রাধান্য হয়, তখন জন্মাষ্টমী পালিত হয়। উৎসবটি গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসারে প্রতি বছর মধ্য-আগস্ট থেকে মধ্য-সেপ্টেম্বরের মধ্যে কোনো এক সময়ে পড়ে।
শাস্ত্রীয় বিবরণ ও জ্যোতিষ গণনার ভিত্তিতে লোকবিশ্বাস অনুযায়ী কৃষ্ণের জন্ম হয়েছিল খ্রিস্টপূর্ব ৩২২৮ সালে ১৮ অথবা ২১ জুলাই। মথুরা নগরীতে অত্যাচারী রাজা কংসের কারাগারে। তিনি বসুদেব ও দেবকীর অষ্টম পুত্র। তার পিতামাতা উভয়ের যাদববংশীয়। দেবকীর দাদা কংস, তাদের পিতা উগ্রসেনকে বন্দী করে সিংহাসনে আরোহণ করেন। একটি দৈববাণীর মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন যে দেবকীর অষ্টম গর্ভের সন্তানের হাতে তার মৃত্যু হবে। এই কথা শুনে তিনি দেবকী ও বসুদেবকে কারারুদ্ধ করেন এবং তাদের প্রথম ছয় পুত্রকে হত্যা করেন। দেবকী তার সপ্তম গর্ভ রোহিণীকে প্রদান করলে, বলরামের জন্ম হয়। এরপরই কৃষ্ণ জন্মগ্রহণ করেন। কৃষ্ণের জীবন বিপন্ন জেনে জন্মরাত্রেই দৈবসহায়তায় কারাগার থেকে বসুদেব তাকে গোকুলে তার পালক মাতা-পিতা যশোদা ও নন্দের কাছে রেখে আসেন। কৃষ্ণ ছাড়া বসুদেবের আরও দুই সন্তানের প্রাণরক্ষা হয়েছিল। প্রথমজন বলরাম (যিনি বসুদেবের প্রথমা স্ত্রী রোহিণীর গর্ভে জন্মগ্রহণ করেন) এবং সুভদ্রা (বসুদেব ও রোহিণীর কন্যা, যিনি বলরাম ও কৃষ্ণের অনেক পরে জন্মগ্রহণ করেন)।
সমগ্র ভারতবর্ষে যখন হানাহানি, রক্তপাত, সংঘর্র্ষ, রাজ্যলোভে রাজন্যবর্গের মধ্যে যুদ্ধবিগ্রহ তথা পৃথিবী যখন মর্মাহত, পাশে অবনত, ঠিক সেই সৃষ্টি স্থিতি-প্রলয়ের যুগ সন্ধিক্ষণে তার আবির্ভাব অনিবার্য হয়ে পড়ে। ঘোর অমানিশার অন্ধকারে জন্মগ্রহণ করায় কৃষ্ণের গায়ের রং শ্যামল, অন্য অর্থে ধূসর, পীত, কিংবা কালো। সংস্কৃত কৃষ্ণ শব্দটির অর্থ কালো, ঘন বা ঘন-নীল। কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তি বোঝাতে এই শব্দটি ব্যবহৃত হয়।
দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালনের জন্য যুগে যুগে ভগবান মানুষের মধ্যে অবতীর্ণ হন এবং সত্য ও সুন্দরকে প্রতিষ্ঠা করেন। শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমী উদযাপন করতে বিভিন্ন ধর্মীয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ হবিগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক শংখ শুভ্র রায় জানান, আজ সকাল সাড়ে ৭টায় শ্রীশ্রী মহাপ্রভু আখড়া প্রাঙ্গণে শুভ জন্মাষ্টমীর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে। সকাল ৮টায় মহাপ্রভু আখড়া প্রাঙ্গণ হতে বের করা হবে জন্মাষ্টমীর বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। প্রধান অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন এমপি অ্যাডভোকেট মোঃ আবু জাহির। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন জেলা প্রশাসক মাহমুদুল কবীর মুরাদ, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা বিপিএম, পিপিএম (সেবা) সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ হবিগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট নলিনী কান্ত রায় নীরু ও সঞ্চালনায় থাকবেন সাধারণ সম্পাদক শংখ শুভ্র রায়। এছাড়াও ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ৫২৪৫তম শুভ জন্মতিথি উপলক্ষে শ্রীকৃষ্ণ মহিমা প্রচার সংঘ মহাপ্রভু আখড়া প্রাঙ্গণে দিনব্যাপী অনুষ্ঠান মালার আয়োজন করেছে।
হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট হবিগঞ্জ দিবসটি উপলক্ষে বৃহস্পতিবার মহাপ্রভু আখড়া প্রাঙ্গণে শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা থেকে শ্লোক পাঠ ও চিত্রাংকন প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। আজ বিকাল ৩টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হবে আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণী। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন এমপি অ্যাডভোকেট মোঃ আবু জাহির। সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা বিপিএম, পিপিএম (সেবা) এবং রামকৃষ্ণ মিশন ও আশ্রম হবিগঞ্জের অধ্যক্ষ শ্রীমৎ স্বামী বেদময়ানন্দজী মহারাজ। প্রধান আলোচক অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রফেসর নিখিল ভট্টাচার্য্য। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন ইসকন হবিগঞ্জের অধ্যক্ষ উদয় গৌর দাস ব্রহ্মচারী, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ হবিগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট নলিনী কান্ত রায় নীরু, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ হবিগঞ্জের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট স্বরাজ রঞ্জন বিশ^াস। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন জেলা প্রশাসক মাহমুদুল কবীর মুরাদ।