এসএম সুরুজ আলী ॥ হবিগঞ্জ শহরতলীর পুরান পাথারিয়া গ্রামে ট্রিপল মার্ডারের ঘটনায় দায়েরকৃত দুই মামলায় ৪ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছেন হবিগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ এসএম নাসিম রেজা। একই সাথে তাদের প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে ২ বছরের সশ্রম কারাদন্ড প্রদান করেন। বাকী ১৬০ আসামীকে বেকসুর খালাস দেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুর ১টায় এ রায় ঘোষণা করেন বিচারক। যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্তরা হলেন পুরান পাথারিয়া গ্রামের তোরাব আলী, সুরুজ মিয়া, আলী আহম্মদ ও করম আলী।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা যায়, বানিয়াচং উপজেলার মক্রমপুর ইউনিয়নের পুরান পাথারিয়া গ্রামের আলী আহম্মদ এবং করম আলীর গোষ্ঠীর মধ্যে সম্পত্তি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। ১৯৯৮ সালের ২৯ নভেম্বর সকালে করম আলীর গোষ্ঠীর সায়েদ বিরোধপূর্ণ পুকুরে হাত মুখ ধুতে যান। এ সময় আলী আহম্মদের সাথে তার কথা কাটাকাটি হয়। এর জের ধরে উভয়পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। ঘন্টাব্যাপী সংঘর্ষে আলী আহম্মদের ছেলে নুর মোহাম্মদ (২৫) ঘটনাস্থলে মারা যান। করম আলীর গোষ্ঠীর শামসুল হককে (২৬) গুরুতর আহত অবস্থায় আধুনিক সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। অপর আহত করম আলীর পক্ষের আফিল উদ্দিনকে (৪০) সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে মারা যান। নুর মোহাম্মদ হত্যা ঘটনায় তার বাবা আলী আহম্মদ বাদি হয়ে ১০৩ জনকে আসামী করে এবং অপরপক্ষ আফিল উদ্দিন ও শামসুল হক হত্যার ঘটনায় শামছুল হকের খালাত বোন আতিকুনেচ্ছা বাদি হয়ে ৬২ জনকে আসামী করে একইদিন বানিয়াচং থানায় পৃথক মামলা দায়ের করেন। উভয় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বানিয়াচং থানার তৎকালীন এসআই অমরেন্দ্র মল্লিক ১৯৯৯ সালের ৩০ আগস্ট নুর মোহাম্মদ হত্যা মামলায় ১০২ জনকে এবং আফিল উদ্দিন ও শামসুল হক হত্যা মামলায় ৬২ জনকে আসামী করে আদালতে চার্জশীট দেন। আদালত আফিল উদ্দিন ও শামসুল হক হত্যা মামলায় ৩৩ জনের মধ্যে ১১ জনের সাক্ষ্য গ্রহন করে বৃহস্পতিবার শুনানি শেষে উপরোক্ত রায় দেন। রায়ে তোরাব আলী, সুরুজ মিয়া ও আলী মোহাম্মদকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রদান করেন। একই সাথে তাদের প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ২ বছরের সশ্রম কারাদন্ড প্রদান করেন। শুনানিকালে দন্ডপ্রাপ্তরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া খালাসপ্রাপ্ত আসামীরাও আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
অপরদিকে একই ঘটনায় দায়েরকৃত নুর মোহাম্মদ হত্যা মামলায় ৪৩ জনের মধ্যে ২০ জনের সাক্ষ্য গ্রহন শেষে রায় দেন বিচারক। রায়ে করম আলীকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রদান করা হয়। তাকেও ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ২ বছরের সশ্রম কারাদন্ড প্রদান করেন। শুনানিকালে করম আলী আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল আহাদ ফারুক। তিনি রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। আফিল উদ্দিন ও শামসুল হক হত্যা মামলার বাদীপক্ষে আইনজীবী ছিলেন অতিরিক্ত পিপি অ্যাডভোকেট ছালেহ উদ্দিন আহমেদ ও নুর মোহাম্মদ হত্যার মামলার বাদীপক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট সুবীর দাশ।