মহাগ্রন্থ আল-কোরআনের সুরাতুন নাহল এর ৯০নং আয়াতে আল্লাহ্ তাআলা ঘোষণা করেন- “নিশ্চয়ই আল্লাহ্ ন্যায় বিচার, সদাচরণ ও আত্মীয়-স্বজনদের দান করার আদেশ দেন”।
মানুষ মাত্রই ভুল হয়, যদি তা অকস্মাৎ ঘটে তবে মার্জনীয়, কিন্তু যদি তা তার অভ্যাসে পরিণত হয় তখন তা অপরাধে রূপ নেয়, এই অপরাধীর যদি সঠিক বিচার না হয় তখন একটি সমাজ অস্থিতিশীল হয়ে উঠে। কোন বিচারক যদি ন্যায়বিচার বহির্ভূত কোন বিচার করে তাহলে ঐ বিচারক সবচেয়ে বড় অপরাধী। সমাজে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য রাসুল (স.) কতিপয় নীতিমালা প্রণয়ন করেছেন।
প্রাক ইসলামী যুগে আরবের সমাজ ব্যবস্থা ছিল বিপর্যস্থ। অন্যায়, অবিচার, জোর, জুলুম আর নির্যাতনের কালো আঁধারে নিমজ্জিত ছিল গোটা সমাজ। তখনকার মূলনীতি ছিল জোর যার মুল্লুক তার, খুন কা বদলা খুন। বিশ^ মানবতার মুক্তির দিশারী রাসুলে আকরাম (স.) নবুয়্যাত প্রাপ্তির পর সকল কালো আঁধার দূরীভূত করে ন্যায়-নীতি ও সুবিচার প্রতিষ্ঠা করেন। বিচার ব্যবস্থায় স্বজনপ্রীতির মূলে কুটারাঘাত করেন। বিচার ব্যবস্থায় স্বজনপ্রীতির কারণে বর্তমানে অনেক নিরপরাধ মানুষ নির্যাতিত হচ্ছে, বঞ্চিত হচ্ছে সুবিচার থেকে। স্বজনপ্রীতির ব্যাপারে রাসুল (স.) এর মশহুর যে হাদীসখানা সমাদৃত তা হলো-
‘একদা রাসুল (স.) এর বংশ কুরাইশ গোত্রের এক মহিলার চুরির অপরাধে হাত কাটার রায় হলো। কুরাইশ বংশের গোত্রপতিরা ভাবল রাসুল (স.) এর বংশের কোন মহিলার যদি চুরির দায়ে হাত কাটা হয় তাহলে গোটা বংশের কপালে চুন-কালি লেগে যাবে। তারা রাসুল (স.) এর নিকট তাদের বংশের ইজ্জত বাঁচানোর নিমিত্তে তার রায় মওকুফের আবেদন জানাল। রাসুল (স.) উপস্থিত জবাব না দিয়ে বৈঠকের মাধ্যমে জবাব দেয়ার জন্য বৈঠক আহবান করার নির্দেশ দিলেন। বৈঠকে দল-মত নির্বিশেষে সবাইকে দাওয়াত করা হলো। উপস্থিত জনতার সামনে রাসুল (স.) বলেন- ঐ মহিলাটি আমার বংশের না হয়ে যদি আমার মেয়ে ফাতেমাও হত আর চুরির দায়ে হাত কাটার রায় হত আমি নিজে তার হাত কেটে দিতাম’। (ছুবহানাল্লাহ্)
রাসুল (স.) তথা ইসলাম ন্যায় বিচারের যে মূলনীতি শিক্ষা দিয়েছেন যদি সমাজে তা বাস্তবায়ন হয় তাহলে নিশ্চিত সমাজ থেকে অন্যায় দূরীভূত হবে এবং অপরাধ ও অপরাধীর সংখ্যা শূন্যের কোটায় নেমে আসবে।