স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রায় তিন বছর ধরে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক চলছিল। কিন্তু যতবারই বিয়ের কথা উঠে ততবারই কলেজছাত্র প্রেমিক মেয়েটিকে বিয়ের আশ^াস দিয়ে সময় ক্ষেপন করে। সেই সাথে চলে দৈহিক সম্পর্ক। এক সময় মেয়েটি আন্দাজ করে প্রেমিক হয়তো একদিন তাকে ফাঁকি দিয়ে চলে যাবে। যা হয় অন্য মেয়েদের বেলায়। কিন্তু প্রেমিকা তাসলিমা আক্তার মনি প্রতারণার শিকার হতে রাজি নন। তিনি প্রেমিককে প্রেমের পরীক্ষায় অবতীর্ণ করেন। সেই পরীক্ষায় পরাজয় বরণ করে কারাগারের বাসিন্দা হলেন মাধবপুর উপজেলার বহরা গ্রামের নুর উদ্দিন ও স্বাস্থ্য সহকারী নুরজাহান বেগমের পুত্র, হবিগঞ্জ সরকারি বৃন্দাবন কলেজের এইচএসসি ২য় বর্ষের ছাত্র শাহরিয়ার চৌধুরী নাদিম (২২)।
সূত্র জানায়, শাহরিয়ার চৌধুরী নাদিমের সাথে প্রায় ৩ বছর আগে হবিগঞ্জ সদর উপজেলার পাঁচপাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা ও শহরের শায়েস্তানগর এলাকার ভাড়াটিয়া মোঃ আব্দুল জলিলের স্বামী পরিত্যাক্তা কন্যা তাসলিমা আক্তার মনি’র (২৪) ফেসবুকে পরিচয় হয়। এই পরিচয় থেকে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। একজন আরেকজনকে কাছে পেতে মরিয়া হয়ে উঠে। সুযোগ বুঝে তারা নানা সময় বিভিন্ন স্থানে আমোদফুর্তিতে লিপ্ত হয়। এক পর্যায়ে মনি নাদিমকে বিয়ের জন্য চাপ দেয়। কিন্তু মনি তালাকপ্রাপ্ত হওয়ায় নাদিমের পরিবার তা মেনে নেয়নি। এ পরিস্থিতিতে নাদিম মনিকে নানাভাবে আশ^াস দেয় যে সে তাকে বিয়ে করবে। বিয়ের জন্য তাকে সময় দিতে হবে। তিন বছরেও বিয়ের সময় না হওয়ায় মনির মনে সন্দেহ জাগে সে হয়তো প্রতারণার শিকার হতে যাচ্ছে। এরই এক পর্যায়ে জন্মদিন উপলক্ষে শনিবার রাতে নাদিমকে বাসায় আমন্ত্রণ জানায় মনি। নাদিম আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে গিয়ে খাবার শেষে সুযোগ বুঝে দৈহিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়। এ সময় স্থানীয় লোকজন প্রেমিকযুগলকে আটক করে নাদিমকে বিয়ের জন্য চাপ দিলে সে তার অভিভাবককে খবর দেয়। তারা এসে তালাকপ্রাপ্ত মেয়েকে ঘরে তুলতে রাজি না হলে সদর থানায় খবর দেয়া হয়। তখন এসআই আব্দুর রহিম ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রেমিকযুগলকে থানায় নিয়ে যায়। গতকাল রবিবার সারাদিন উভয়পক্ষের অভিভাবকরা বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করলেও মনিকে বিয়ে করতে রাজি না হওয়ায় মনি বাদী হয়ে ধর্ষণের অভিযোগে সদর থানায় নাদিমের উপর মামলা দায়ের করে। গতকালই বিকেলে ডাক্তারী পরীক্ষা শেষে প্রেমিকযুগলকে আদালতে প্রেরণ করলে সেখানে একই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। তখন আদালত মনির জবানবন্দী গ্রহণ করে তাকে নিজের জিম্মায় মুক্তি দেন এবং নাদিমকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন।
থানায় থাকাকালে নাদিম আক্ষেপ করে বলেন, ‘তিন বছরের সম্পর্ক যা হয়েছে দু’জনের মতামতের ভিত্তিতেই হয়েছে। কিন্তু সে আমাকে ছলনা করে ফাঁসিয়েছে। আমি বলেছিলাম যেহেতু আমার পরিবার বিয়েতে রাজি না তাই আমি লেখাপড়া শেষ করে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে তোমাকে বিয়ে করব। কিন্তু সে সুযোগ আমাকে দিল না।’
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আব্দুর রহিম জানান, স্থানীয় লোকজন তাদেরকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। তবে উভয়পক্ষের মধ্যে বিষয়টি সমাধান না হওয়ায় মনি ধর্ষণের অভিযোগে মামলা রুজু করলে প্রেমিকযুগলকে আদালতে প্রেরণ করা হয়।
অপর সূত্র জানায়, তদন্তের স্বার্থে নাদিমের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি জব্দ করা হয়েছে।